দুঃশ্চিন্তা রয়েছেদেশে চাল উৎপাদন নিয়ে শঙ্কা না থাকলেও মানুষের পুষ্টিকর খাবারের উৎপাদন নিয়ে । বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক ও যুক্তরাজ্য সরকারের বৈদেশিক বিষয়ক উন্নয়ন সংস্থা ডিএফএআইডি’র এক যৌথ গবেষণায় এমনটাই উঠে এসেছে।
বাংলাদেশের কৃষি খাতের গতি–প্রকৃতি ও খাদ্যনিরাপত্তা নিয়ে করা ওই গবেষণা প্রতিবেদনে দিয়ে এমনটাই জানিয়েছেন দৈনিক প্রথম আলো।
প্রতিবেদনে বলা হয়, চাল উৎপাদনের বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যে দেশে চালের উৎপাদন হবে ৩ কোটি ৮৭ লাখ টন। আর ওই সময়ে চাহিদা থাকবে ৩ কোটি ৭৬ লাখ টন।
অন্যদিকে দেশের পুষ্টি চাহিদা পূরণকারী খাদ্য গম, আলু, ডাল, সবজি, মাংস, ডিম ও মিঠাপানির মাছ উৎপাদন চাহিদা অনুযায়ী বাড়ছে না। ওই সময়ে গোল আলুর উৎপাদন হবে ১ কোটি ১৮ লাখ টন, ডাল ৪ লাখ টন, সবজি ৬৪ লাখ টন আর ফলের উৎপাদন দাঁড়াবে ৩৬ লাখ টন। যা ওই সময়ের মোট চাহিদার চেয়ে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কম থাকবে। ফলে দেশের খাদ্য ও পুষ্টিনিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কা থেকে যাবে।
‘স্ট্র্যাটেজিক এগ্রিকালচারাল সেক্টর অ্যান্ড ফুড সিকিউরিটি ডায়াগনস্টিক ফর বাংলাদেশ’ শীর্ষক ওই গবেষণায় এসব তথ্য ও পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। দেশের কৃষি উৎপাদনের বর্তমান অবস্থা এবং ২০৩০ ও ২০৫০ সালে তা কী দাঁড়াবে, কোথায় জোর দিতে হবে, তা বুঝতেই ওই গবেষণাটি করা হয়েছে।
গবেষণাটিতে আরও দেখা গেছে, দেশের দারিদ্র্য বিমোচনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখছে কৃষি খাত। কৃষি খাতে ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলে দেশে দারিদ্র্য কমে শূন্য দশমিক ৩৯ শতাংশ। আর অ-কৃষি খাতে ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলে দারিদ্র্য কমে শূন্য দশমিক ১১ শতাংশ। অর্থাৎ দারিদ্র্য কমানোর ক্ষেত্রে অ-কৃষি (শিল্প ও সেবা) খাতের ভূমিকা তিন গুণ বেশি।
গবেষণা কার্যক্রম শুরু হয় ব্র্যাকের প্রয়াত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুব হোসেনের নেতৃত্বে। তার মৃত্যুর পর এ দায়িত্ব নেন গবেষণা ও মূল্যায়ন বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক বায়েস আহমেদ ও ফখরুল ইসলাম।
গবেষণা মূল্যায়ন প্রসঙ্গে আবদুল বায়েস বলেন, ‘এত দিন ধরে দেশের কৃষি খাতের প্রবৃদ্ধি ছিল চালনির্ভর। সরকারের সব প্রণোদনা ও অবকাঠামোগত সহায়তা ছিল চালমুখী। ফলে চালের উৎপাদন বেড়েছে। সবজি, ফল ও মাছের উৎপাদন বাড়লেও তা চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে না। কারণ, এই খাতে সরকারের সহায়তা কম। অথচ কৃষি খাতের নতুন উদ্যোক্তারা মৎস্য, প্রাণিসম্পদ এবং সবজি ও ফলেই বেশি আসছে। যেমন কয়েক বছর পরপর আমরা দেখি কৃষক আলু ও সবজির দাম না পেয়ে মাঠে ফেলে দিচ্ছেন। সরকার এই কৃষিপণ্যগুলোর ক্ষেত্রে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিলে এমনটা হতো না।’
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক সাত্তার মণ্ডল বলেন, ‘বাংলাদেশের জমি কম। ফলে সব ধরনের খাদ্যশস্য উৎপাদনে সমান উন্নতি হবে না। কিছু খাদ্য আমাদের আমদানি করতে হবে।’
আমিষের চাহিদা মেটানোর জন্য ডাল ও পোলট্রিশিল্পের ওপর জোর দেওয়ার জন্য সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন এই কৃষিবিদ।