প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে রামপালে যাওয়ার জন্য নৌপথ ছাড়া অন্যকোনো পথ ছিলো না সেই রামপালে এখন রাস্তাঘাট হচ্ছে। অঘাট কে ঘাট করতে যখন আমরা কাজ শুরু করেছি তখন রামপালে কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে সম্প্রতি আন্দোলনকারীদের সরকারের উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি ব্যতিত আর কিছুই নয় বলে জানিয়েছেন ।

এসময় আন্দোলনকারীদের শুধুমাত্র ঢাকাকেন্দ্রিক না হয়ে আন্দোলনের কর্মসূচীর অংশ হিসেবে রামপাল থেকে সুন্দরবন পর্যপদযাত্রার মাধ্যমে দূরত্ব দেখে আসার পরামর্শও দেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, একসময় আন্দোলনকারীদের রামপাল এলাকা দেখানোর জন্য হেলিকপ্টারে করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। প্রকৃত সত্য হেলিকপ্টার থেকে দেখার মাধ্যমে উঠে আসবে না,যদি তারা রামপাল থেকে সুন্দরবন পর্যন্ত না যান।

শনিবার (২৮ জানুয়ারি) চট্টগ্রামে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন অব বাংলাদেশের (আইইবি) ৫৭ তম কনভেনশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপরোক্ত মন্তব্য করেন।

শেখ হাসিনা আন্দোলনকারীদের প্রসঙ্গে বলেন, মানুষের জন্য কোন দুঃখ নাই, মানুষের জন্য কোন কান্না নাই, মানুষের ভালমন্দ দেখার দরকার নাই, সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগারের জন্য তারা কাঁদছে।

এসময় আন্দোলনকারীদের কাছে অনুরোধ রেখে বলেন, তারা যেন সুন্দরবনে যান, রয়েল বেঙ্গলের সাথে দেখা সমেত জিজ্ঞেস করেন তাদের অসুবিধা হচ্ছে কিনা। এটুকু যদি তারা করেন, যদি গিয়ে দেখে আসেন, একটা রিপোর্ট দেন, আমরা তাহলে বিবেচনা করতে পারি।

আইইবির কেন্দ্রীয় প্রেসিডেন্ট প্রকৌশলী মো. কবির আহমেদ ভূঞার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন,  আইইবির সম্পাদক আব্দুস সবুর, চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সভাপতি এবং ৫৭ তম কনভেনশন প্রস্তুতি কমিটির চেয়ারম্যান সাদেক মোহাম্মদ চৌধুরী, সম্পাদক প্রবীর কুমার সেন ।

প্রধান অতিথি তার বক্তব্য শেষে  কনভেনশনে রাষ্ট্র এবং সংগঠনের নানামুখী অবদানের জন্য ঢাকা ওয়াসার চেয়ারম্যান প্রকৌশলী ড.এম হাবিবুর রহমান এবং পদ্মা সেতু প্রকল্পের কর্মকর্তা মেজর জেনারেল আবু সা‌ঈদ মোহাম্মদ মাসুদের হাতে স্বর্ণপদক তুলে দেন ।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, ভাইস প্রেসিডেন্ট (একাডেমিক অ্যান্ড আন্তর্জাতিক) প্রকৌশলী খন্দকার মনজুর মোর্শেদ, ভাইস প্রেসিডেন্ট (প্রশাসন ও অর্থ) প্রকৌশলী মো. শাহাদত হোসেন, ভাইস প্রেসিডেন্ট (এইচআরডি) প্রকৌশলী মো. নুরুজ্জামান, ভাইস প্রেসিডেন্ট (এস অ্যান্ড ডব্লিউ) প্রকৌশলী মো. আতাউল মাহমুদ, সহকারী সাধারণ সম্পাদক (একাডেমিক অ্যান্ড আন্তর্জাতিক) প্রকৌশলী এস এম মনজুরুল হক মঞ্জু, সহকারী সাধারণ সম্পাদক (প্রশাসন ও অর্থ) প্রকৌশলী মো. মোজাম্মেল হক, সহকারী সাধারণ সম্পাদক (এইচআরডি) প্রকৌশলী মামুনুর রশিদ, সহকারী সাধারণ সম্পাদক (এস অ্যান্ড ডব্লিউ) প্রকৌশলী শাহাদাৎ হোসেন শীবলু, আইইবি চট্টগ্রাম কেন্দ্রের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী সাদেক মোহাম্মদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান (একাডেমিক অ্যান্ড এইচআরডি) প্রকৌশলী মো. আব্দুর রশীদ, ভাইস চেয়ারম্যান (এডমিন, প্রফেশনাল অ্যান্ড এসডব্লিউ) প্রকৌশলী উদয় শেখর দত্ত।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি আরোও বলেন,  রামপাশে কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের বিরোধিতা করে আন্দোলন করছে তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ, বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি। সুন্দরবন রক্ষায় রামপাল প্রকল্প বন্ধের দাবিতে বিভিন্ন আন্দোলন কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় ২৬ জানুয়ারি অর্ধদিবস হরতালও পালন করেছে সংগঠনটি।

বর্তমান সরকারের আমলে বিদ্যুৎ ব্যবস্থার উন্নয়ন নিয়ে বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী প্রসঙ্গটি টানেন।  তিনি বলেন, দু‍ঃখের কথা না বলে পারি না।  রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে সারা বিশ্বব্যাপী প্রচার করে বেড়াচ্ছে যে সুন্দরবন ধ্বংস হবে।  রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র রামপালে হচ্ছে, এটা কিন্তু সুন্দরবনে হচ্ছে না।  আর সুন্দরবন সেখান থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে পশুর নদীর তীরে।

তিনি বলেন, সুন্দরবনের যে অংশ ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র হচ্ছে সেখান থেকে ৬৫ কিলোমিটার দূরে।  কাজেই সেখানে কোন ক্ষতি হবার সম্ভাবনা নেই।

বলেন, আমরা যে বিদ্যুৎকেন্দ্রটা করছি এটা হচ্ছে আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল পাওয়ার প্ল্যান্ট। পৃথিবীর সবথেকে আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র আমরা তৈরি করছি।  সেখানে আমরা ৫ লাখ বৃক্ষরোপণ করার পরিকল্পনা নিয়েছি।  ইতোমধ্যে দেড় লক্ষ বৃক্ষরোপণ করা হয়েছে।  সর্বোচ্চ উচ্চতায় চিমনি করা হচ্ছে।  কয়লার যে ছাইটা হবে, এদেশে যত সিমেন্ট কারখানা আছে, অনেকে ইতোমধ্যেই কন্ট্রাক্ট করে ফেলেছে যে তারা ছাইটা কিনে নিবে। ’

‘কয়লা আনা হবে কভার্ড কার্গোতে করে যাতে নদী দূষিত না হয়।  ইতোমধ্যে সেখানে একটি খাল, ঘাসিয়া খাল নামে পরিচিত যেটা জাতির পিতা চালু করে দিয়ে গেছেন ১৯৭৪ সালে, পরবর্তীতে আর এটা তেমন ড্রেজিং কিংবা সংরক্ষণ হয়নি।  আমরা ঘাসিয়াখাল ড্রেজিং করেছি।  আরও ৮০টা খাল ড্রেজিং করার জন্য প্রকল্প পাস করেছি।

আন্দোলনকারীদের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, মাত্র কিছুদিন আগে প্রায় এক হাজার মেট্রিকটন কয়লাবাহী একটি জাহাজ সুন্দরবনের কাছে ডুবে গেছে।  যারা রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে এত দুশ্চিন্তায় ভুগছেন এবং আন্দোলন করছেন আমি তাদেরকে জিজ্ঞেস করব, এই যে এক হাজার মেট্রিকটন কয়লা যে পানিতে ডুবে গেল, তাতে ওই এলাকায় কতটুকু ক্ষতি হয়েছে পরিবেশের।  সেই ব্যাপারে তারা সেখানে গেছেন কিনা, দেখেছেন কিনা বা ওটা নিয়ে কোন যাচাই করেছেন কিনা।  তাদের তো যাওয়া উচিৎ, কিন্তু তারা সেখানে যাননি।

বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি থেকে কয়লা উত্তোলন করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রসঙ্গটির উপর আলোকপাত করতে গিয়ে  প্রধানমন্ত্রী বলেন, বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি থেকে কয়লা দিয়ে আমরা দিনাজপুরে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র শুরু করলাম।  ২০০০ সালে সেখানে প্রথম পর্যায়ের কাজ শুরু করেছি।  দ্বিতীয় পর্যায়ে আরও একটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র হয়েছে।  তৃতীয় পর্যায়ে আরও একটি কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র হচ্ছে।  এটা কিন্তু সাধারণ মানের একটা বিদ্যুৎকেন্দ্র।  এটা আলট্রা ক্রিটিক্যাল সুপার বিদ্যুৎকেন্দ্র না।  কয়লা যাচ্ছে ট্রলিতে করে এবং সেখানে ডাম্প করে রাখা হচ্ছে।

‘ওই এলাকায় কতটুকু পরিবেশের ক্ষতি হয়েছে ? কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাছে ধানগাছ রোপণ করা হয়েছে।  সেখানে আমবাগান, আমবাগানে আমও যে হচ্ছে, সেটাও কিন্তু দেখেছি।  সেখানে প্রচুর পরিমাণে ফসল হচ্ছে।  ওখানকার মানুষের কোনো অভিযোগ নেই।  পরিবেশ নষ্ট হয়েছে, মানুষের স্বাস্থ্য নষ্ট হয়েছে, ক্ষতি হয়েছে এমন কোন অভিযোগ নেই। ’

উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ছাড়াও মূল আয়োজগুলোর মধ্যে আরোও রয়েছে, সমাপনী অনুষ্ঠান, জাতীয় সেমিনার উদ্বোধনী ও সমাপনী পর্ব, ৩টি স্মৃতি বক্তৃতা, ফিয়েস্কা সেমিনার, শহীদ প্রকৌশলী পরিবারের সংবর্ধনা, বিদেশি অতিথিদের সংবর্ধনা এবং বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।

রোববার কর্মসূচীর মধ্যে সকাল ১০টায় ‘ইউটিলাইজেশন অব ডিজিটাল টেকনোলজি ফর প্রো পিপল ডেভোলাপমেন্ট’ শীর্ষক জাতীয় সেমিনারের উদ্বোধনী করবেন তথ্যমন্ত্রী প্রকৌশলী হাসানুল হক ইনু। এরপর সকাল সাড়ে ১১টায় ৫৯তম বার্ষিক সাধারণ সভা। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

Share Now
January 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031