ম্যানুএভার ট্রেনিং, মেজর অপারেশন, অ্যাটাক, ডিফেন্স ট্যাকটিক্যাল উইথড্র ট্রেনিং, সঙ্গে কমান্ডো ও ফায়ার অ্যান্ড মুভ। এসবই সেনাবাহিনীর নানা প্রশিক্ষণের নাম। এসব প্রশিক্ষণে ব্যবহার করা হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের ট্যাংক, এপিসি, মর্টার, অ্যান্টি ট্যাংক গাইডেড মিসাইল ও রকেট লাঞ্চার, হেভি মেশিনগান, সেলফ প্রোপেল্ড আর্টিলারি (এসপি আর্টিলারি)। এসব ট্রেনিং ও অস্ত্র নিয়ে অংশ নিচ্ছে ইনফেন্ট্রি, আর্মার্ড, আর্টিলারিসহ (ফিল্ড আর্টিলারি ও মিডিয়াম আর্টিলারি) বিভিন্ন কোর এবং আর্মি এভিয়েশন। উন্নত ও অত্যাধুনিক এসব অস্ত্র প্রশিক্ষণে নিজেদের সমৃদ্ধ করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এজন্য বেছে নেয়া হয়েছে নোয়াখালীর প্রত্যন্ত চর স্বর্ণদ্বীপকে। স্থানীয়ভাবে এটা পরিচিত জাহাজ্জ্যার চর নামে। প্রত্যন্ত ও দুর্গম এলাকা হিসেবে এটি খুবই সুপরিচিত। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে ৭২ হাজার একরের এ চরের নতুন নামকরণ করা হয়েছে স্বর্ণদ্বীপ। এখানেই গড়ে তোলা হচ্ছে আন্তর্জাতিক মানের সেনা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো গড়ে উঠছে এ কেন্দ্র। ভয়ঙ্কর জলদস্যুদের কবল থেকে রক্ষা করে দ্বীপে গড়ে তোলা হচ্ছে নানা ধরনের অবকাঠামো। একই সঙ্গে চলছে বনায়ন ও আর্থসামাজিক উন্নয়ন কাজ। সরকারের পক্ষ থেকে সেনাবাহিনীকে ২০১৩ সালে চরটি দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্টাতে শুরু করে এখানকার চিত্র। প্রথমেই দস্যুদের রাজত্বের অবসান ঘটে। নোয়াখালীর সুবর্ণচর, চট্টগ্রামের সন্দ্বীপসহ আশপাশের এলাকা হয়ে ওঠে নিরাপদ। দীর্ঘদিনের জিম্মিদশা থেকে মুক্ত হন স্থানীয়রা। সম্ভাবনা জাগিয়ে তৈরি হয়েছে নতুন নতুন জীবিকা সন্ধানের পথ। প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করতে গড়ে তোলা হয়েছে সাইক্লোন শেল্টার। প্রাকৃতিক নানা ভাঙা-গড়ার সঙ্গে যুদ্ধ করে এসব তৈরি করছে সেনাবাহিনী। বহুমাত্রিক প্রশিক্ষণের জন্য এটাই সবচেয়ে উপযুক্ত জায়গা বলে জানিয়েছেন সেনা কর্তৃপক্ষ। এ কারণে স্বর্ণদ্বীপকে ঘিরে তৈরি করা হচ্ছে মাস্টারপ্লান। এজন্য উন্নত বিভিন্ন দেশের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলো নিয়ে গবেষণা করা হচ্ছে। সেসবের আলোকে গড়ে তোলা হচ্ছে স্বর্ণদ্বীপকে। এরই মধ্যে কিছু প্রশিক্ষণের কাজ শুরু করেছে সেনাবাহিনী। এ পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে প্রায় ২০ হাজার সেনা সদস্য প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এ অঞ্চল থেকে। শিগগিরই স্বর্ণদ্বীপে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে যাওয়া সেনা সদস্যদের। সেনাবাহিনী জানিয়েছে, শান্তিরক্ষায় নিয়োজিত দেশগুলোতে বেশিরভাগ সময় সেনা সদস্যদের ‘ফায়ার অ্যান্ড মুভ’ অপারেশন করতে হয়। এতদিন এ ধরনের প্রশিক্ষণ বিভিন্ন ক্যান্টনমেন্টে স্বল্প পরিসরে ও স্বল্প গ্রুপে ভাগ করে দেয়া হয়েছে। এখন থেকে স্বর্ণদ্বীপে এ ধরনের প্রশিক্ষণ অনায়াসেই দেয়া সম্ভব হবে। ওই প্রশিক্ষণের ফলে জাতিসংঘে শান্তিরক্ষা মিশনে থাকা বাংলাদেশি সেনা সদস্যদের ভাবমূর্তি আরো উজ্জ্বল হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে সেনাবাহিনীর চলাচল ও বাসস্থান (এমঅ্যান্ডকিউ) পরিদপ্তরের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মামুন অর রশীদ মানবজমিনকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের সহযোগিতায় ফোর্সেস গোল ২০৩০-এর আওতায় সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নের অংশ হিসেবে সেনাবাহিনীতে সংযোজিত হয়েছে বিভিন্ন আধুনিক অস্ত্র ও সরঞ্জামাদি। নতুন সংযোজিত এসব আধুনিক অস্ত্র ও সরঞ্জামাদির ওপর সেনা সদস্যদের প্রশিক্ষিত করে তোলার জন্য এখন প্রয়োজন বাস্তবমুখী প্রশিক্ষণ। কিন্তু জনবহুল ও কৃষিনির্ভর এদেশে পতিত ভূমির পরিমাণ অত্যন্ত অপ্রতুল। তাই দেশের অন্যান্য এলাকায় বড় সেনাদল কর্তৃক কার্যকর যৌথ প্রশিক্ষণ পরিচালনার জন্য বড় আয়তনের প্রশিক্ষণ এলাকা খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। তিনি বলেন, স্বর্ণদ্বীপের বিশাল আয়তনের ভূমি রণকৌশলগত ও বহুমুখী প্রশিক্ষণ এলাকার অভাব দূর করে যুগোপযোগী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সেনাবাহিনীকে তার পেশাগত দক্ষতা ও উৎকর্ষতা বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে সক্ষম হবে। একই প্রসঙ্গে স্বর্ণদ্বীপের টাস্কফোর্স হেডকোয়ার্টার সমন্বয়কারী কর্মকর্তা মেজর মুরশিদুল আজাদ বলেন, ৩৬০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ দ্বীপে শুধু শীতকালে আনুমানিক ৫ মাস সীমিত এলাকায় প্রশিক্ষণ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা যায়। বছরের অন্যান্য সময় স্বর্ণদ্বীপের বেশিরভাগ এলাকা জোয়ারের পানিতে সাধারণত ২ থেকে ৩ ফুট পর্যন্ত নিমজ্জিত থাকে। তিনি বলেন, নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পদাতিক ডিভিশনগুলো থেকে নির্বাচিত প্রতিটি ব্রিগেড গ্রুপ আনুমানিক ১৫০০ থেকে ২০০০ সেনা সদস্য ট্যাংক, এপিসি, আর্টিলারি গানসহ অন্যান্য ভারি ও হালকা সরঞ্জামাদি নিয়ে এই দ্বীপে ২-৩ সপ্তাহের প্রশিক্ষণে অংশ নেয়। এছাড়া জাতিসংঘ মিশনে সেনা মোতায়েনের আগে মোতায়েনপূর্ব প্রশিক্ষণের জন্য এই চর ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রশিক্ষণকে বাস্তবমুখী করতে এখানে ক্ষেত্রবিশেষে কিছু ভূমিরও পরিবর্তন আনা হয়েছে (ল্যান্ড স্কেপিং)। এটা খুবই ব্যতিক্রম এবং চ্যালেঞ্জিং। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে স্বর্ণদ্বীপে সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ পরিধি আরো বিস্তৃত করা হবে। সংশ্লিষ্টরা জানান, নতুন নতুন অত্যাধুনিক সামরিক সরঞ্জামে সক্ষমতা বাড়ছে প্রতিরক্ষা বাহিনীর। ফোর্সেস গোল ২০৩০-এর আলোকে সেনাবাহিনীতে নতুন পদাতিক ডিভিশন, ব্রিগেড ও ইউনিট প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি অত্যাধুনিক অস্ত্র ও সরঞ্জাম কেনা হচ্ছে। নৌবাহিনীতে সম্প্রতি যোগ হয়েছে চীন থেকে কেনা দুটি সাবমেরিন। অন্যদিকে বিমানবাহিনীকে আরো গতিশীল করতে ৮টি যুদ্ধবিমান (মাল্টিরোল কমবাট এয়ারক্রাফট) কেনার পরিকল্পনা করেছে সরকার। সব মিলিয়ে দেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীকে আরো কার্যকর ও গতিশীল করতে বর্তমান সরকার গত ৭ বছরে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেছে। এদিকে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সুদৃঢ় করতে সেনাবাহিনীতে সংযোজিত হয়েছে চতুর্থ প্রজন্মের ট্যাংক এমবিটি-২০০০। চীনের তৈরি এই ট্যাংক দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে ব্যবহৃত ট্যাংকের মধ্যে অত্যাধুনিক হিসেবে বিবেচিত।
M | T | W | T | F | S | S |
---|---|---|---|---|---|---|
1 | ||||||
2 | 3 | 4 | 5 | 6 | 7 | 8 |
9 | 10 | 11 | 12 | 13 | 14 | 15 |
16 | 17 | 18 | 19 | 20 | 21 | 22 |
23 | 24 | 25 | 26 | 27 | 28 | 29 |
30 | 31 |