প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মুহম্মদ ইউনুস পদ্মাসেতু বন্ধে চক্রান্ত করেছিলেন বলে সংসদে বলেছেন । এই প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক যেন অর্থায়ন না করে সে জন্য বাংলাদেশের একটি পত্রিকার সম্পাদককে নিয়ে তিনি বিশ্বব্যাংক প্রধানের সঙ্গে দেখা করেছিলেন বলেও জানান তিনি। তবে ওই সম্পাদক কে তা প্রকাশ করেননি প্রধানমন্ত্রী।
বুধবার বিকালে প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তর পর্বে এ কথা বলেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বয়স পেরিয়ে যাওয়ায় ড. ইউনুসকে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে সরিয়ে দেয়ার পর এ নিয়ে ক্ষোভ থেকে তিনি সরকারের ক্ষতি করতে গিয়ে পদ্মাসেতু থামিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক থাকতে পারেন সর্বোচ্চ ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত। কিন্তু ইউনুসের বয়স হয়েছিল ৭০। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গ্রামীণ ব্যাংকের আইনেই আছে ৬০ বছর পর্যন্ত এমডি থাকা যাবে। কিন্তু ৭০ বছর পার হয়ে গেছে, তখনও তিনি এমডি। উনি সরকারি বেতন ভাতাই নিতেন। তারপরও তার প্রতি সকলের একটা দুর্বলতা ছিল।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি অর্থমন্ত্রী ও আমার উপদেষ্টাকে পাঠিয়েছিলাম। উনারা তাকে বলেছিলেন আপনার পার হয়ে গেছে আপনি আর এমডি থাকতে পারেন না। আপনাকে এমিরেটারস উপদেষ্টা হিসেবে সম্মানী পদে রাখতে চাই। উনি রাজি হলেন না। উনি আদালতে গিয়ে সরকার ও বাংলাদেশে ব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা করলেন। মামলা করার পরামর্শ দিয়েছিলেন ড. কামাল হোসেন, আর উনার মেয়ে মামলা পরিচালনা করেন। মামলায় হেরে গেলেন। এরপর দোষ চাপালেন আমার ওপর।’
‘সে মামলার হেরে গিয়ে পদ্মা সেতুর অর্থায়ন নিয়ে ক্ষেপে গেলেন আমার উপর। সেই ক্ষ্যাপটা গিয়ে পড়ল পদ্মা সেতুর উপর। আমাদের দেশের কোন এক স্বনামধন্য পত্রিকার সম্পাদক আর উনি মিলে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টের সাথে দেখা করলেন এবং হিলারি ক্লিনটনের সাথে লবিং করলেন। তাই পদ্মা সেতুতে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের টাকা দেয়াটা বন্ধ হয়ে গেল। উল্টো দুর্নীতির অভিযোগ আনা হল। আমেরিকান গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে আমার ছেলে-মেয়ে, ছেলের বউ মন্ত্রিপরিষদ, উপদেষ্টা সবার তদন্ত করা হলো। কেউ কোন রকম দুর্নীতি করেছে কি না? তা খুঁজতে। কিন্তু মনে জোর ছিল বলেই আমি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে বলেছিলাম বিশ্বব্যাংকের টাকায় আর পদ্মা সেতু করবো না।’-পদ্মাসেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বাতিল করে দেয়ার কারণ জানিয়ে বললেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তিনি (ইউনুস) তার লবিস্টসহ অনেক বড় বড় জায়গা থেকে টেলিফোন করালেন। এমনকি তার অনুরোধে হিলারি ক্লিনটন আমাকে ফোন করলেন। এমডি পদ থেকে কেন তাকে বাদ দেয়া হচ্ছে। আমি তাকে বললাম আমরাতো বাদ দেইনি। তিনি মামলায় হেরে গেছেন। তারপরেও আমার ওপর দোষ চাপানো হলো। সারা বিশ্বে আমার বিরুদ্ধে প্রচার-অপপ্রচার চালানো হলো।’
‘চিটিংবাজি করেছেন তিনি’
গ্রামীণ ফোনের লভ্যাংশের শতকরা ৩০ ভাগ গ্রামীণ ব্যাংককে না দিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ‘চিটিংবাজি’ করেছেন বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, ‘গ্রামীণ ফোনের যখন অনুমতি দেওয়া হয়, তখন শর্ত ছিলো লভ্যাংশের ৩০ ভাগ গ্রামীণ ব্যাংককে দেওয়া হবে। সেই টাকায় সাধারণ মানুষের কল্যাণ হবে। কিন্তু তিনি গ্রামীণ ব্যাংকে কোন টাকাই রাখেন নাই। বরং ৩৫ শতাংশ শেয়ার নিজের নামে রেখে বাকিটা বিক্রি করে দেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তিনি (ইউনূস) গ্রামীণ ফোনের শেয়ার বিক্রি করে অধিকাংশ নিজের সম্পত্তি করে নিয়েছেন। আবার উনি নিজেও ট্যাক্স দেন না। তার ফিক্স ডিপোজিটে প্রচুর টাকা আছে। মামলা করে দিয়েছেন তাই ট্যাক্স দিতে হয় না। এখন সেই টাকা তুলে তুলে খাচ্ছেন। তার এই টাকা কোথা থেকে এসেছে সেই হিসেবও তিনি দিতে পারেননি।’
সুদখোরের কথায় সাড়া দেয় না জনগণ
সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকা অবস্থাতেও রাজনৈতিক দল গঠনে ড. ইউনুসের উদ্যোগ নিয়েও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। ২০০৭ থেকে ২০০৮ সালের মধ্যে নাগরিক শক্তি নামে দল গঠনের উদ্যোগ নেন। কিন্তু পরে রাজনৈতিক পরিস্থিতি বেগতিক দেখে সে পথ থেকে সরে আসেন ইউনুস।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘উনি (ইউনূস) দল করতে গেলেন। সেই সম্পাদক সাহেব আর উনি মিলে শুরু করলেন দল গঠন করবেন। কিন্তু সেখানেও ব্যর্থ হল। কারণ জনগণের কাছে সাড়া পায়নি। সুদখোরের ডাকে কেউ সাড়া দেয় না। এটা হল বাস্তবতা।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ওনার তো গ্রামীণ ফোনের অনুমতিই পাওয়ার কথা না, কারণ উনি টেন্ডারের তৃতীয় স্থানে ছিলেন। আমি তখন খুব আগ্রহে তাকে গ্রামীণ ব্যাংক দিয়েছিলাম। যেহেতু লভ্যাংশের একটা টাকা গরিব মানুষ পাবে। সেটাতো দেনই নাই, বরং অধিকাংশ শেয়ার বিক্রি করে দিয়ে নিজের সম্পত্তি করে নিয়েছেন।’
‘গরিবের হাড় মাংস রক্ত ঝড়ানো টাকা দিয়ে যে বড়লোকিপনা করে তার আবার দেশের প্রতি ভালবাসা থাকবে কোথা থেকে’-ইউনুসের সমালোচনায় বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।