প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাস্তা দখল করে কোনো ধরনের সভাসমাবেশ করা যাবে না বলে নির্দেশ দিয়েছেন । আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের শুক্রবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। সিদ্ধান্তটি রাজনৈতিক মহলে সাধুবাদ পেয়েছে। আওয়ামীলীগ বলছে সিদ্ধান্তটি কার্যকর হলে জনগণ উপকৃত হবে। অন্যদিকে বিএনপি বলছে, সিদ্ধান্তটি কার্যকর হোক সবার জন্য। অতীতের সিদ্ধান্তগুলোর মতো যাতে না হয় যে, বিএনপি বা বিরোধী পক্ষকে দমানোর জন্য এ সিদ্ধান্ত বলবৎ হবে, আওয়ামী লীগের জন্য নয়। এদিকে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, নানা কারণে রাজপথে সমাবেশে তারা বাধা দিতে পারে না। সরকার প্রধানের মুখ দিয়ে যেহেতু নির্দেশ এসেছে, সবাই সেটি মানবে।

আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের শুক্রবারের অনুষ্ঠানে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে আমি জানাচ্ছি যে, তিনি রাস্তা দখল করে কোনো সভাসমাবশে বা কর্মসূচি বাংলাদশের কোথাও করা যাবে না বলে নির্দেশ দিয়েছেন। র‌্যালি বা মিছিলের বিষয়েও সরকার ভাবছে জানিয়ে তিনি বলেন, রাস্তায় র‌্যালি করার বিকল্প আমরা ভাবছি। রাস্তা বন্ধ না করেও কীভাবে করা যায় তা ভাবছি আমরা। কিন্তু এ সিদ্ধান্ত কতোটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে সাধারণ মানুষ যথেষ্ট সন্দিহান। কারণ ইতোপূর্বে একাধিকবার পুলিশের পক্ষ থেকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।

ব্যাংকার তানজিব সোহেল বলেন, নিষেধাজ্ঞা দিলেন ঠিক আছে, কিন্তু অতি প্রয়োজনীয় কোনো বিষয় হলে রাজপথে এ ধরনের কর্মসূচির অনুমতি না দিয়ে কি পারবে? আমি মনে করি, রাজপথে কখনোই জনভোগান্তি সৃষ্টিকারী কোনো কর্মসূচি পালন করা উচিত নয়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাজনিন কেকা নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, নগরীর আয়তনের তুলনায় রাস্তা এমনিতেই অপ্রতুল। তার ওপর আছে অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ। তাই নগরবাসীর জীবনে যানজট এখন এক দুঃসহ বাস্তবতা। ঢাকার মতো চট্টগ্রাম নগরীতেও কোথাও বড় ধরনের জট লাগলে তার প্রভাব পড়ে মহানগরের প্রায় সব রাস্তায়। রাজপথে মিছিলসমাবেশ বা শোভাযাত্রার মতো কর্মসূচি যানজটের তীব্রতা বাড়িয়ে দেয় বহুগুণ। জনগণের ভোগান্তি চরমে পৌঁছে। জনগণের আশাআকাঙক্ষা বুঝতে পারার দাবিদার রাজনৈতিক দলগুলো তা বুঝতে পারে না। তাদের প্রতিবাদ, বিক্ষোভ বা সংহতি জানানোর কাজটি রাজপথে না করে বরং নির্দিষ্ট মাঠেময়দানে করলে জনগণকে বাড়তি ভোগান্তি পোহাতে হয় না। সরকারি দল বা বিরোধী দল কোনো চিরস্থায়ী ব্যাপার নয়। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে উপলব্ধি আসা জরুরি যে তাদের কোনো কর্মসূচি যেন জনদুর্ভোগের কারণ না হয়।

মহানগর আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন আত্মসমালোচনা করে আজাদীকে বলেন, রাজপথে সমাবেশ আমরাও করেছি অনেক সময়। কিন্তু এটা ঠিক নয়। আগে যানবাহন কম ছিল, মানুষ কম ছিল। এখন আমি ১০/১২ জন নিয়ে যদি মিছিল করে যাই, মোড়ে গিয়ে বক্তব্য দিই, তবে সামনে পেছনে যে যানজট ও জনদুর্ভোগ হবে, তা কখনোই জনগণ সমর্থন করে না। তিনি বলেন, আন্দোলন সংগ্রাম রাজপথে হতেই পারে। ন্যায্য কাজে রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করলে জনগণ তাতে সমর্থন দেবে, দুর্ভোগ মেনে নেবে। কিন্তু কোন কারণ ছাড়াই আন্দোলন সংগ্রামের নামে যদি রাস্তা দখল করা হয় তবে কেনইবা মানুষ তা মানবে? মেট্রোপলিটন পুলিশের একটি আইনই আছে এ নিয়ে। সরকারের এ সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই। পাশাপাশি ফুটপাত ও রাস্তা দখল করে হকারদের ব্যবসাটাও একটা নিয়মের মধ্যে আসা উচিত। এ বিষয়েও সরকারকে জরুরি ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেয়ার অনুরোধ জানান তিনি। নিউমার্কেট মোড়ের হকারদের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, জন ও যান চলাচল বিঘ্ন করে হকার বসিয়ে জনগণের তো লাভ হচ্ছে না। হয়তোবা স্থানীয় হোমড়া চোমড়া, পুলিশ, মাস্তান, পাতি নেতারা লাভবান হচ্ছে।

মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা: শাহাদাত হোসেন আজাদীকে বলেন, আইন যদি সবার জন্য সমান হয় তবে ঠিক আছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের জন্য এক আইন, বিএনপি বা বিরোধী পক্ষের জন্য ভিন্ন আইন তবে তো সমস্যা। তিনি বলেন, রাজপথে সমাবেশ কে করে? আমরাও চাই না। এজন্যইতো আমরা চাই লালদিঘীর মাঠ বা পলোগ্রাউন্ড মাঠে অনুমতি দেওয়া হোক। আইনতো তাদেরও মানতে হবে। এছাড়া বন্ধের দিনে মিছিল করার ব্যাপারে তিনি বলেন, মিছিলতো তাৎক্ষনিক ভাবেই হয়। ধরেন, সংসদে জনস্বার্থ বিরোধী কোন আইন পাশ হলো, যা গণতন্ত্রের জন্য হুমকি স্বরূপ, তখন মিছিল তাৎক্ষণিক ভাবেইতো বের হবে। কখন বন্ধের দিন আসবে, মিছিল করবো সেটা হয় নাকি?

ডা. শাহাদাত বলেন আসল, কথা হলো এ সরকার জনবিচ্ছিন্ন সরকার। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন তাদের জনগণ থেকে অনেক দূরে সরিয়ে দিয়েছে। তারা গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে রীতিমতো যুদ্ধ ঘোষণা করেছে।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)র অতিরিক্ত কমিশনার মাসুদ উল হাসান সরকারের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, আমাদের কাজ অনেক সহজ করে দেবে প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশ। আমরা অনেক কিছু বলতে পারি না। রাজপথে আমরাইতো এটি নিয়ে বেশ সাফার করি। এখন তিনি যেহেতু নির্দেশ দিয়েছেন, সেই নির্দেশ সকলেই মানবে।

– See more at: http://www.dainikazadi.org/details2.php?news_id=1555&table=january2017&date=2017-01-15&page_id=1&view=0&instant_status=0#sthash.qXmPUhy4.dpuf

Share Now
January 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031