বিলাসবহুল গাড়ি আটক করা হয়েছে কূটনীতিক শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি এনে অপব্যবহারের অভিযোগে এবার ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশন (আইএলও) কর্মকর্তার। গতকাল শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তারা গাড়িটি আটক করেন। ঢাকায় কর্মরত ওই আইএলও কর্মকর্তার নাম কিশোর কুমার সিং। তিনি সংস্থাটির সিনিয়র স্কিল ডেভেলপমেন্ট স্পেশালিস্ট। এর আগে তিনি ইউএনডিপিতে কর্মরত ছিলেন। সে সময় বিশেষ সুবিধাভোগী ব্যক্তি হিসেবে তিনি শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়িটি এনেছিলেন। এর আগে গত ২৮শে নভেম্বর ঢাকায় কর্মরত ইউএনডিপি’র সাবেক আবাসিক প্রতিনিধি স্টিফেন প্রিজনারের বিলাসবহুল গাড়ি আটক করা হয়। শুল্ক গোয়েন্দা সূত্র জানায়, গত ১৯শে ডিসেম্বর কিশোর কুমার সিংকে শুল্ক গোয়েন্দা অফিসে গাড়িটি সমর্পণ করতে বলা হয়। এর প্রেক্ষিতে তার পক্ষে আইএলও’র জেনারেল স্টাফ মো. মনির হোসেন খন্দকার গতকাল সকাল ১১টায় শুল্ক গোয়েন্দা অফিসে গাড়িটি হস্তান্তর করেন। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, আটককালে গাড়িটিতে হলুদ রেজিস্ট্রেশন প্লেট (এজস ০৪৬) পাওয়া যায়। হলুদ নাম্বার প্লেটের গাড়ি শুধুমাত্র অনুমোদিত কাস্টমস পাসবুকের বিপরীতে প্রিভিলেজড পারসন বা বিশেষ সুবিধাভোগী ব্যক্তি হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। কাগজপত্র যাচাই করে দেখা যায়, গাড়িটি প্রিভিলেজড সুবিধায় শুল্কমুক্তভাবে আমদানিকৃত। গাড়িটি ইউএনডিপি-র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মি. কিশোর কুমার সিং শুল্কমুক্ত সুবিধায় তার পুরানো পাসবুকে এন্ট্রি করেছিলেন। তিনি ২০১১ সালের ১০ই অক্টোবর থেকে ২০১৪ সালের ১৪ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ইউএনডিপিতে কর্মকর্তা ছিলেন। পরে ২০১৪ সালের ১৫ই সেপ্টেম্বর আইএলও-তে যোগদান করেন। ইউএনডিপি-তে থাকা অবস্থায় তিনি শুল্কমুক্ত সুবিধা গ্রহণ করে গাড়িটি পাসবুকে অন্তর্ভুক্ত করেন (পাসবুক নং ১০৫/১১)। শর্তানুযায়ী তিনি ইউএনডিপি ত্যাগ করার সময় পাসবুক ও গাড়ি কাস্টমসের কাছে সমর্পণ করার কথা থাকলেও তিনি তা করেননি। আইএলও থেকে নতুন পাসবুক গ্রহণ করার পরেও গাড়িটি তার মেয়াদোত্তীর্ণ পুরাতন পাসবুকেই রেখেছিলেন। এমনকি ২০১২ সালের পর বিআরটিএ থেকে কোনো ফিটনেস সনদও নেননি। ফিটনেস ব্যতিরেকে ও পুরানো নম্বর হলুদ প্লেটে গাড়িটি ব্যবহার করছিলেন। শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ অবৈধ গাড়ি আটক অভিযান শুরু করলে গত ২৬শে অক্টোবর মি. সিং এনবিআর এর কাছে গাড়িটি নতুন পাসবুকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আবেদন করেন। এক্ষেত্রে তিনি শুল্কমুক্ত সুবিধার অপব্যবহার করে শুল্ক আইন ভঙ্গ করেছেন। এখন আইএলও এর আবাসিক প্রতিনিধির সঙ্গে যোগাযোগ করে তার বিরুদ্ধে কাস্টমস আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ বিষয়ে বিস্তারিত তদন্ত চলছে বলেও শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ জানায়। গাড়িটির চ্যাসিস নং-২৬৪০৪৩, ইঞ্জিন ৩৯৩৬৩০, ১২৯৮ পপ। উল্লেখ্য, শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা গোপন অনুসন্ধান শেষে ১৯শে ডিসেম্বর মি. কিশোর কুমার সিংকে শুল্কমুক্ত সুবিধার আনা গাড়িটি ৭২ ঘণ্টার মধ্যে হস্তান্তর করতে নোটিশ দেয়া হয়। নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হওয়ার আগেই তিনি প্রতিনিধির মাধ্যমে সেটি হস্তান্তর করেন।
এর আগে শুল্কমুক্ত কোটায় আনা ঢাকায় ইউএনডিপির সাবেক আবাসিক প্রতিনিধির স্টিফেন প্রিজনারের গাড়িটি আটক করেন শুল্ক গোয়েন্দারা। স্টিফেন প্রিজনার বাংলাদেশে দায়িত্ব পালন শেষে আইন ভেঙে সংস্থার অন্য এক কর্মকর্তার কাছে তা বিক্রি করে দিয়েছিলেন। প্রিজনার বর্তমানে উজবেকিস্তানে জাতিসংঘ সংস্থাটির আবাসিক প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করছেন। ২৮শে নভেম্বর ঢাকার উত্তরার ৪ নম্বর সেক্টরের আশিকুল হাসিব তারিক নামের এক ব্যক্তির বাড়ি থেকে মিতসুবিশি ব্রান্ডের পাজেরো গাড়িটি নিয়ে আসে শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ। ইউএনডিপির ওই কর্মকর্তা তার কাছে গাড়িটি বিক্রি করেছিলেন।