ব্যবসায়ী সারা দেশের জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীদের মধ্যে প্রায় ৫৭ শতাংশ
, আইনজীবী ২৩ জন ও কৃষিকাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছেন ১৩ জন প্রার্থী বলে জানিয়েছে বেসরকারি সংস্থা সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। গতকাল মঙ্গলবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার। জেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী চেয়ারম্যান প্রার্থীদের তথ্য উপস্থাপন উপলক্ষে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে সুজন। সংবাদ সম্মেলনে প্রার্থীদের সম্পদের বিবরণী ও হলফনামা প্রকাশ করা হয়। এতে লিখিত বক্তব্যে দিলীপ কুমার সরকার জানান, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীদের মধ্যে ৫৬ দশমিক ৮৪ শতাংশ অর্থাৎ ৮৩ জন ব্যবসায়ী। প্রার্থীদের পেশা ব্যবসার পরেই রয়েছেন আইনজীবীরা। মোট প্রার্থীর ২৩ জনই আইনজীবী। আর কৃষিকাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন ১৩ জন। জেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেয়া ২৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ অর্থাৎ ১৫ জনের বিরুদ্ধে বর্তমানে মামলা রয়েছে। আর ৩৬ জনের বিরুদ্ধে অতীতে মামলা ছিল। আটজনের বিরুদ্ধে উভয় সময়েই মামলা ছিল। তিনি বলেন, জেলা পরিষদের ভোটার হলো স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিরা। আর এই জনপ্রতিনিধিরা বেশির ভাগ ক্ষমতাসীন দলের হওয়ায় জয়ের সম্ভাবনা কম ভেবে অন্য দল থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আগ্রহ দেখা যায়নি। তিন পার্বত্য জেলা বাদে দেশের ৬১টি জেলায় চেয়ারম্যান পদে এই নির্বাচন বর্জন করেছে বিএনপি ও সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। সুতরাং এই নির্বাচনকে ব্যাপক প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন বলার কোনো সুযোগ নেই। এর পরও ইতিমধ্যেই ২২ জেলার চেয়ারম্যান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছে। এগুলো বাদ দিয়ে বাকি ৩৯ জেলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন ১২৪ জন প্রার্থী।
প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতার দিকে তাকালে দেখা যায়, ১০ দশমিক ২৭ শতাংশ অর্থাৎ ১৫ জন প্রার্থীই স্কুল পার হতে পারেননি। ১৪৬ প্রার্থীর মধ্যে ১০২ স্নাতক বা স্নাতকোত্তর পাস করেছেন। অর্থাৎ প্রায় ৭০ শতাংশ প্রার্থী স্নাতক পাস। এসএসসি বা এর কম শিক্ষাগত যোগ্যতা ২২ জনের। তবে প্রার্থীদের মধ্যে ১৫ জন বিদ্যালয়ের গণ্ডি পার হতে পারেননি। এছাড়া, প্রার্থীদের মধ্যে ৭৬ জন বছরে পাঁচ লাখ টাকার নিচে আয় করেন। ছয়জনের বার্ষিক আয় এক কোটি টাকারও বেশি। বছরে দুই লাখ টাকার কম আয়কারী প্রার্থী রয়েছেন ১৫ জন। সুজন বলছে, নির্বাচনী হলফনামায় প্রার্থীরা যে তথ্য দিয়েছেন, তা কোনোভাবেই বর্তমান সম্পদের প্রকৃত চিত্র নয়। কারণ, প্রার্থীদের অনেকেই সম্পদের মূল্য উল্লেখ করেননি। আবার যা উল্লেখ করেছেন, সেটা অর্জনকালীন মূল্য বর্তমান বাজারমূল্য নয়। সুজনের দেয়া প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ১৪৬ জন প্রার্থীর মধ্যে মাত্র ৫০ জন প্রার্থী আয়কর দিয়েছেন।
দিলীপ কুমার সরকার বলেন, বিগত পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও ব্যাপকসংখ্যক মেয়র ও চেয়ারম্যান প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবারের জেলা পরিষদ নির্বাচনেও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। তবে আমাদের দেশে বিভিন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে ধরনের উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়, সে ধরনের উৎসাহ-উদ্দীপনা না থাকলেও আমরা চাই, এই নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে অনুষ্ঠিত হোক।
সংবাদ সম্মেলনে সুজন সভাপতি এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, ২৮শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় জেলা পরিষদ নির্বাচনে এমপিরা সরাসরি প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন। এটা আচরণবিধির লঙ্ঘন। গণমাধ্যমে এটা নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। তিনি আরো বলেন, নির্দলীয় বলা হলেও এই নির্বাচনে দলীয়ভাবে প্রার্থী মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। তাই এই নির্বাচনকে নির্দলীয় বলা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন গণতন্ত্রের একটা বড় ভিত্তি হলেও সামপ্রতিক স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো সেভাবে হয়নি। সিটি করপোরেশন নির্বাচন, পৌরসভা নির্বাচন কীভাবে হয়েছে তা সবাই দেখেছেন। একেবারে ডাইরেক্ট ব্যালট পেপারে সিল মারার ছবিও আমরা গণমাধ্যমে দেখেছি।
সুজন সহ-সম্পাদক জাকির হোসেন বলেন, আসন্ন জেলা পরিষদ নির্বাচনকে নির্বাচন কমিশন খেলায় পরিণত করেছে। এই নির্বাচনে কে দাড়িয়েছে, জেলা পরিষদের কাজ কি সাধারণ জনগণ ভালভাবে তার কিছুই জানে না। কারণ আইন অনুযায়ী প্রত্যেক জেলার অন্তর্ভুক্ত সিটি করপোরেশনের (যদি থাকে) মেয়র ও কাউন্সিলর, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলর এবং ইউপির চেয়ারম্যান ও সদস্যরা এ নির্বাচনে ভোট দেবেন। তাই সাধারণ মানুষের এই নির্বাচন নিয়ে কোনো ধরনের আগ্রহ নেই। পরেরবার জেলা পরিষদ নির্বাচনে সাধারণ মানুষের ভোটাধিকার প্রদানের জন্য আইন সংশোধনের আহ্বান জানান তিনি। উল্লেখ্য, এবারের জেলা পরিষদ নির্বাচনে সব মিলিয়ে ৬৩ হাজার ১৪৩ জন ভোটারের মধ্যে পুরুষ ৪৮ হাজার ৩৪৩ জন পুরুষ; নারী ১৪ হাজার ৮০০ জন। সংবাদ সম্মেলন থেকে ভবিষ্যতে জেলা পরিষদ নির্বাচনের বিষয়ে সুজনের পক্ষ থেকে কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এগুলো হলো- নির্বাচকমণ্ডলীর পরিবর্তে সরাসরি জনগণের ভোটে জেলা পরিষদ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা; সংসদ সদস্যদের জেলা পরিষদের উপদেষ্টার বিধান পরিবর্তন করা; চেয়ারম্যানসহ জেলা পরিষদের সদস্যদের আদালত কর্তৃক দোষী সাব্যস্ত হওয়ার আগেই সাময়িক বরখাস্ত করার বিধান বাতিল করা।
M | T | W | T | F | S | S |
---|---|---|---|---|---|---|
1 | ||||||
2 | 3 | 4 | 5 | 6 | 7 | 8 |
9 | 10 | 11 | 12 | 13 | 14 | 15 |
16 | 17 | 18 | 19 | 20 | 21 | 22 |
23 | 24 | 25 | 26 | 27 | 28 | 29 |
30 | 31 |