প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ তার ঐতিহ্য সমুন্নত রেখে এগিয়ে যাবে এবং একদিন বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মর্যাদা লাভ করবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) তার ঐতিহ্য সমুন্নত রেখে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে এবং একদিন বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মর্যাদা লাভ করবে। তিনি বলেন, ২০০৯ সালের ২৫-২৬শে ফেব্রুয়ারি পিলখানায় সংঘটিত বিদ্রোহ ও হত্যাকাণ্ড এ বাহিনীর ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায়। সে সময় সরকার গঠনের পর পরই বিডিআর বিদ্রোহ ও হত্যাকাণ্ডের মতো ন্যক্কারজনক ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি আমাদের মোকাবিলা করতে হয়। সবার সহযোগিতায় সেই সংকটময় পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ বাহিনীকে একটি আধুনিক ও যুগোপযোগী সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ আইন-২০১০ আমরা পাস করেছি। এই বাহিনীকে একটি আধুনিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে আমরা ব্যাপক সংস্কার ও উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। প্রধানমন্ত্রী গতকাল সকালে পিলখানায় বিজিবি সদর দপ্তরে বিজিবি দিবস উপলক্ষে দেয়া ভাষণে এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিজিবি’র অপারেশনাল কার্যক্রমকে বেগবান ও গতিশীল করতে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আমি বিগত ২৩শে জানুয়ারি ২০১১ তারিখে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-এর পতাকা উত্তোলন করেছিলাম। বিজিবি’র নতুন সাংগঠনিক কাঠামো অনুযায়ী ৪টি রিজিয়ন সদর দপ্তর স্থাপন করে কমান্ড স্তর বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে এ বাহিনীকে আরো গতিশীল ও ফলপ্রসূ করা হয়েছে। এর আগে প্রধানমন্ত্রী বিজিবি সদর দপ্তরের বীর উত্তম আনোয়ার হোসেন প্যারেড গ্রাউন্ডে পৌঁছলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবুল হোসেন প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। এ সময় প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। প্রধানমন্ত্রী কুচকাওয়াজের সালাম গ্রহণ করেন এবং একটি সুসজ্জিত খোলা জিপে করে প্যারেড পরিদর্শন করেন। বিজিবি’র উপ-মহাপরিচালক আমিরুল ইসলাম শিকদার কমান্ডার হিসেবে প্যারেড পরিচালনা করেন। মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, তিন বাহিনী প্রধানগণ, বিদেশি কূটনীতিকবৃন্দ এবং পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে ৫৯ জন বিজিবি সদস্যের মাঝে বীরত্বপূর্ণ এবং কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বিজিবি পদক বিতরণ করেন। পরে প্রধানমন্ত্রী চিত্তাকর্ষক ‘ট্রিক ড্রিল’ এবং ‘ডগ স্কোয়াড ডিসপ্লে’ উপভোগ করেন।
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতায় বলেন, বিজিবি’র নতুন সাংগঠনিক কাঠামো অনুযায়ী ৪টি রিজিয়ন সদর দপ্তর স্থাপন করে কমান্ড স্তর বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে এ বাহিনীকে আরো গতিশীল ও ফলপ্রসূ করা হয়েছে। বিজিবির গোয়েন্দা সংস্থাকে শক্তিশালী করে বর্ডার সিকিউরিটি ব্যুরো স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৪টি নতুন সেক্টর ও ৪টি রিজিয়নাল ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো স্থাপন করা হয়েছে। নতুন অনুমোদিত ১৫টি ব্যাটালিয়ন স্থাপনের মাধ্যমে প্রথম পর্যায়ের পুনর্গঠনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
তিনি বলেন, সরকার বিজিবি’র জনবল বৃদ্ধি করেছে। বিজিবিতে ২০০৯ সাল থেকে এ যাবত ২৪,২৩৪ জন জনবল নিয়োগ করা হয়েছে। বিভিন্ন পদে ২৬,২২১ জন বিজিবি সদস্যকে পদোন্নতি প্রদান করা হয়েছে। বিজিবিতে নারী সদস্য নিয়োগ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিজিবি’তে ৮৮তম ব্যাচে প্রথমবারের মতো ৯৭ জন নারী সৈনিক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তারা সফলভাবে তাদের মৌলিক প্রশিক্ষণ শেষে ইউনিটে যোগদান করেছে। বিজিবি হাসপাতাল, ঢাকার তত্ত্বাবধানে ৫০ জন নারী সৈনিককে মেডিকেল অ্যাসিসটেন্ট প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। প্রশিক্ষণ শেষে তাদের বিজিবি হাসপাতালসমূহে পদায়ন করা হবে। তিনি বলেন, এ বছর ৮৯তম ব্যাচে আরো ৯৩ জন নারী সৈনিক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। বর্তমানে তারা বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড কলেজে প্রশিক্ষণরত আছে এবং ৯০তম ব্যাচে আরো ১০০ জন নারী সৈনিক ভর্তির কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন আছে। বিজিবি’তে নারী সৈনিক নিয়োগের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়নে আমরা আরো একধাপ এগিয়ে গেলাম।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ বাহিনীর অপারেশনাল সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বিজিবি পুনর্গঠনের আওতায় ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে এবং বেশকিছু কাজ বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এসবের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- ১৫টি ‘সাইক্লোন শেল্টার’ টাইপ বিওপি, ৭৫টি ‘এ’ টাইপ বিওপি এবং ১২৮টি বিএসপি নির্মাণ। এছাড়া আরো নতুন ৬০টি বিওপি এবং ২০টি প্রি-ফেব্রিকেটেড শেল্টার টাইপ বিওপি নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত এবং মিয়ানমারের সঙ্গে ৪৭৯ কি.মি. অরক্ষিত সীমান্ত এলাকায় নতুন ৪টি ব্যাটালিয়ন এবং ৫৫টি বিওপি নির্মাণের মাধ্যমে ৩৭০ কি.মি. সীমানা ইতিমধ্যে নজরদারিতে আনা হয়েছে। বিজিবি’র আধুনিকায়নে সরকারের উদ্যোগ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকারের উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-এর উন্নয়নকল্পে অপারেশনাল ও লজিস্টিক সক্ষমতা বৃদ্ধি লক্ষ্যে নাইট ভিশন বাইনোকুলার, থার্মাল ইমেজিং বাইনোকুলার, নাইট ভিশন গগল্স, বুলেট প্রুফ জ্যাকেট, বুলেট প্রুফ হেলমেট, জেনারেটর, ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট, স্টোরেজ ড্রাই কন্টেইনার, জিপিএস উইথ কলিগ পজিশন এবং স্যাটেলাইট ফোন ক্রয় করা হয়েছে। এছাড়া সীমান্ত সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
তিনি বলেন, দেশের সীমান্ত এলাকায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অরক্ষিত সীমান্ত ও দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় নজরদারি বৃদ্ধিসহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড প্রতিহত করার লক্ষ্যে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-এর সাংগঠনিক কাঠামোতে একটি স্বতন্ত্র এয়ার উইং সৃজনের অনুমোদন দেয়া হয়েছে এবং ৫ই জুন ২০১৬ তারিখে চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় এয়ার উইংয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামে বিজিবি সদস্যদের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকার কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই বাহিনী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ প্রথম প্রহরে তৎকালীন ইপিআর-এর বেতারকর্মীরা এই পিলখানা থেকেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা সমগ্র দেশে প্রচার করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা ওয়্যারলেসযোগে প্রচার করায় ইপিআরের সুবেদার মেজর শওকত আলীসহ তিনজনকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নির্মমভাবে হত্যা করে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঐতিহ্যবাহী সীমান্তরক্ষী বাহিনীর প্রায় ১২ হাজার বাঙালি সদস্য মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। এ বাহিনীর ২ জন বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ এবং শহীদ ল্যান্স নায়েক মুন্সী আবদুর রউফসহ ৮ জন বীরউত্তম, ৩২ জন বীরবিক্রম এবং ৭৭ জন বীরপ্রতীক মুক্তিযুদ্ধে বীরত্ব প্রদর্শন করে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে মহিমান্বিত করেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাঙালি জাতি অদম্য, বঙ্গবন্ধুর ভাষায় ‘কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবে না’। এ দেশ এগিয়ে যাবে এবং ২০৪১ সালের মধ্যেই পৃথিবীতে একটি উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করবে। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার মাধ্যমেই বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণের স্বপ্ন সফল হবে- ইন্শাআল্লাহ। পরে বিজিবি দিবস উপলক্ষে আয়োজিত বিশেষ দরবারেও যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী।
M | T | W | T | F | S | S |
---|---|---|---|---|---|---|
1 | 2 | 3 | 4 | 5 | ||
6 | 7 | 8 | 9 | 10 | 11 | 12 |
13 | 14 | 15 | 16 | 17 | 18 | 19 |
20 | 21 | 22 | 23 | 24 | 25 | 26 |
27 | 28 | 29 | 30 | 31 |