চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মোহা. শফিকুল ইসলাম পুরাতন জেএমবির তৎপরতা জোরেসোরে শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন । সোমবার সকালে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে অনুষ্ঠিত বিভাগীয় আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় তিনি এই তথ্য জানান।
ডিআইজি মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, দেশে বেশ কিছুদিন ধরে জেএমবি’র একটি তৎপরতা চলছিল। আমরা তাদের নাম দিয়েছিলাম নিউ জেএমবি। কিন্তু হলি আর্টিজেনের ঘটনার প্রায় ১৫ দিন পর থেকে পুরোনো জেএমবি, যারা বাংলা ভাইয়ের সময় ছিল তারা আবারও সক্রিয় হয়ে উঠে। পুরাতন জেএমবির তৎপরতা জোরেসোরে শুরু হয়েছে। তবে তাদের তৎপরতা সম্পর্কে আমরা সতর্ক আছি।
তিনি বলেন, পুরাতন জেএমবির অনেকেই জেল জরিমানা শেষে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছে। কিন্তু এদের অনেকেই মুক্তি পেলেও হদিস নেই। ধরুন, কোনো জঙ্গির বাড়ি চট্টগ্রামে। কিন্তু সে অপরাধ সংঘটিত করেছে ঝিনাইদহে। তাই তার জেল হয়েছে ঝিনাইদহে। কিন্তু সাজা শেষে সে বেরিয়ে আর চট্টগ্রামে আসেনি। এরকম হদিস না থাকা জঙ্গিদের বিষয়েই আমাদের বেশি ভয়। কারণ তারা আবারও জঙ্গি তৎপরতার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনাকে ‘অদক্ষতার ফল’ হিসেবে মন্তব্য করে ডিআইজি শফিকুল ইসলাম বলেন, একটা ঘটনার ঘটে যাওয়ার পরও নাসিরনগরে দুটি পরস্পরবিরোধী ইসলামী দলকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। অথচ সেই বিষয়ে জেলা প্রশাসক জানতেনও না। ওসি আর নির্বাহী কর্মকর্তা মিলে সমাবেশের অনুমতি দিয়ে দিল। যার ফলে পরবর্তীতে আরও বড় ঘটনা ঘটল। তাই এসব বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। এরকম কিছু ঘটলে তাৎক্ষণিকভাবে তা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে হবে।’
বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে উস্কানি ছড়ানো হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ওয়াজ মাহফিলে রোহিঙ্গা ইস্যু টেনে এদেশের সম্প্রীতি নষ্ট করার মতো উস্কানি দিচ্ছিলেন এক বক্তা। ওই সময় ঘটনাস্থল দিয়ে আসছিলেন একজন পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি এই বক্তব্য শোনার সঙ্গে সঙ্গেই ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই বক্তাকে সরিয়ে দিলেন এবং সবাইকে এ বিষয়ে বুঝিয়ে বললেন। এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে, সচেতন হতে হবে।
সভায় কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. আবদুর রহমান বলেন, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) জানিয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে ২১ হাজার রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ ঘটেছে। কিন্তু আমরা বিজিবি-কোস্টগার্ডসহ বিভিন্নভাবে তথ্য সংগ্রহ করে জেনেছি, এই হিসেব ৭ থেকে ৯ হাজার হবে।
তিনি বলেন, অনুপ্রবেশ বন্ধে আমরা দালালদের নজরদারিতে রেখেছি। অনুপ্রবেশ করতে চাওয়া রোহিঙ্গাদের পুশব্যাক করা হচ্ছে। পাশাপাশি হেফাজতে ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলনসহ বিভিন্ন ইসলামিক দলের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রেখেছি। যাতে তারা সীমান্ত এলাকায় রোহিঙ্গাদের বিষয়ে মিছিল-সমাবেশ না করে।
চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. রুহুল আমিনের সভাপতিত্বে অনুষ্টিত এই সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন- কোস্টগার্ড পূর্ব জোনের কমান্ডার শহিদুল ইসলাম, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) শংকর রঞ্জন সাহা সহ চট্টগ্রাম বিভাগের ১১টি জেলার জেলা প্রশাসক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকরা।