বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন ও শক্তিশালীকরণের আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব প্রেসিডেন্টের হাতে তুলে দিয়েছেন । ইসি পুনর্গঠন ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রেসিডেন্টের সংলাপের প্রথমদিন তিনি এ প্রস্তাব তুলে দেন। প্রেসিডেন্টের সঙ্গে প্রথম রাজনৈতিক দল হিসেবে সংলাপে অংশ নিতে গতকাল বিকাল ৪টা ২৫ মিনিটে প্রতিনিধি দলকে নিয়ে বঙ্গভবনে যান বিএনপি চেয়ারপারসন। দীর্ঘ এক ঘণ্টা বৈঠকের পর সন্ধ্যা ৫টা ৪০ মিনিটে প্রতিনিধি দলের সদস্যরা বঙ্গভবন থেকে বেরিয়ে আসেন। এ সময় নেতাদের চোখেমুখেও ছিল প্রফুল্লভাব। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে সংলাপে অংশ নেন- দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, ড. আবদুল মঈন খান ও আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। পরে বিএনপির নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংলাপের আলোচ্য বিষয় নিয়ে আনুষ্ঠানিক ব্রিফিং করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠনের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে বিএনপি। বর্তমান রাজনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণে অভিভাবক হিসেবে প্রেসিডেন্টের উদ্যোগ ফলপ্রসূ হবে আশাবাদ ব্যক্ত করে এ ব্যাপারে আলোচনা অব্যাহত রাখতে প্রেসিডেন্টকে অনুরোধ করেছেন বিএনপি প্রতিনিধি দল। সেই সঙ্গে বিএনপি সাবেক একজন প্রধান বিচারপতিকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের বাছাই কমিটি গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে, যারা নতুন নির্বাচন কমিশনারদের নাম প্রস্তাব করবেন। তাদের মধ?্য থেকে সিইসি ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেবেন প্রেসিডেন্ট।
বিএনপি আশাবাদী: ফখরুল
ইসি পুনর্গঠনে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়ে আশাবাদ প্রকাশ করে আনুষ্ঠানিক ব্রিফিংয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা আলমগীর বলেন, প্রেসিডেন্ট একজন আপাদমস্তক রাজনৈতিক নেতা। তিনি দীর্ঘকাল ধরে বাংলাদেশের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত রয়েছেন এবং সর্বজন শ্রদ্ধেয় একজন মানুষ। আমরা এটা জোর দিয়ে বলতে চাই, প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনার প্রেক্ষিতে আমরা আশাবাদী হয়েছি, এই সংকট নিরসনে রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে যথাযথ ভূমিকা পালন করবেন তিনি। আমরা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকে খুশি হয়েছি, আশাবাদী হয়ে উঠেছি। বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা আশা করি- বর্তমান রাজনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণের জন্য প্রেসিডেন্টের এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে একটা ফলপ্রসূ ভূমিকা পালন করবে এবং এই আলোচনার প্রক্রিয়াটা অব্যাহত থাকবে। বিএনপির চাওয়া, বাছাই কমিটির সদস?্যদের সবাই ‘দল নিরপেক্ষ’ হবেন। বিতর্ক থাকলে চলবে না, অবসরের পর সরকারের লাভজনক পদে দায়িত্ব পালন করেছেন এমন ব?্যক্তিদেরও নেয়া যাবে না। বিএনপি মহাসচিব বলেন, মূলত নির্বাচন কমিশন গঠনে এক মাস আগে খালেদা জিয়ার দেয়া ১৩ দফা প্রস্তাব নিয়েই আলোচনা হয়েছে। ওই প্রস্তাবের সারাংশ আমরা উপস্থাপন করেছি। বিস্তারিত প্রস্তাবটিও দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে ইসি পুনর্গঠনের পদ্ধতিগত বিষয়গুলো নিয়েই বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, ইসি নিয়োগে এখনও কোনো আইন না হওয়ায় এখন প্রেসিডেন্টের কাছেও বিকল্প কোনো পথ নেই। সেজন্য রাজনৈতিক দলের মতৈক্যের ভিত্তিতেই নির্বাচন কমিশন গঠন করার উদ্যোগ প্রেসিডেন্টের নেয়া প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি। দেশনেত্রী খালেদা জিয়াও তাই মনে করেন বলে তা উত্থাপন করেছেন। তিনি বলেন, আমরা প্রেসিডেন্টকে বাছাই কমিটি গঠন, নির্বাচন কমিশন গঠন ও আরপিও সংশোধনের বিষয়ে জানিয়েছি। বাছাই কমিটির সদস্য মনোনয়নের পদ্ধতিও জানানো হয়েছে। এখন প্রেসিডেন্ট এই পদ্ধতি পরীক্ষা করবেন। বিএনপি মহাসচিব বলেন, তিনি (প্রেসিডেন্ট) এই অভিমতও প্রকাশ করেন যে, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে আলোচনা ও সংলাপের কোনো বিকল্প নেই। এই সমস্যার সমাধানগুলো আলোচনার মাধ্যমে হতে হবে বলে প্রেসিডেন্ট মনে করেন। বিএনপির প্রস্তাব প্রেসিডেন্ট গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন জানিয়ে মির্জা আলমগীর বলেন, প্রেসিডেন্ট প্রথমেই উল্লেখ করেছেন- ‘যেহেতু আপনারাই একমাত্র আমাকে এই বিষয়ে উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন, সেজন্যই আপনাদেরকে আমি প্রথম আমন্ত্রণ জানিয়েছি। আপনাদের মতামতকে প্রাথমিকভাবে বিবেচনা করার জন্য আমি নিয়েছি। আশা করি, সবাই এতে থাকবেন।’ প্রেসিডেন্ট মনে করেন যে, সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য, নিরপেক্ষ, সাহসী ও যোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠন করা জাতির জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। সেজন্য সকল রাজনৈতিক দলের সমর্থন তিনি আশা করেন। এ বিষয়ে সকলে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে- এটাও প্রেসিডেন্ট আশা করেন। প্রেসিডেন্ট অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে ইসি নিয়োগের পদ্ধতি ঠিক করে ফের রাজনৈতিক দলগুলোকে বৈঠকে ডাকবেন বলে আশা করছে বিএনপি। মির্জা আলমগীর বলেন, আমরা আশা করছি- আগামী মাসের মধ্যে তিনি এই পুরো প্রক্রিয়াটা শেষ করবেন। প্রেসিডেন্ট আশা করেছেন, আগামী মাসের মধ্যে এটা শেষ করতে চান। বিএনপির প্রস্তাবকে গঠনমূলক উল্লেখ করে প্রেসিডেন্ট স্বাগত জানিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ নিজেও মন্তব্য করেছেন- ‘বিএনপির প্রস্তাব শক্তিশালী একটি নির্বাচন কমিশন ও সার্চ কমিটি গঠনের সহায়ক হবে। এ প্রস্তাব গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে তিনি ভূমিকা পালন করবেন।’ সার্চ বা বাছাই কমিটিতে কোনো ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করা হয়েছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা বলেছিই তো বাছাই কমিটির ব্যাপারে আমাদের দলের চেয়ারপারসন সুনির্দিষ্টভাবে তার মতামত প্রেসিডেন্টের কাছে দিয়েছেন। আলোচনায় সময় দেয়ার জন?্য প্রেসিডেন্টকে ধন?্যবাদ জানিয়ে খালেদা জিয়া বঙ্গভবনে দিয়ে আসা তার প্রস্তাবের সঙ্গে বলেছেন, আমি আশা করি আমাদের প্রস্তাবগুলো যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ?্য বলে বিবেচিত হবে। আশাকরি ভবিষ্যতে এ বিষয়ে অধিকতর আলোচনার জন?্য আপনি আমাদের আবারও আমন্ত্রণ জানাবেন। নির্বাচনকালীন ‘সহায়ক সরকার’ নিয়ে আলোচনা হয়েছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইসি পুনর্গঠনের পদ্ধতিগত বিষয়গুলো নিয়েই আলোচনা হয়েছে, অন্য কোনো বিষয়ে নয়। মির্জা আলমগীর বলেন, প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ‘অত্যন্ত সৌহার্দ?্যপূর্ণ পরিবেশে ও উষ্ণ আমেজে’ আলোচনা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট তার স্বভাবসুলভ আন্তরিকতা দিয়ে খালেদা জিয়া ও বিএনপি নেতাদের স্বাগত জানিয়েছেন। এ সময় বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, নজরুল ইসলাম খান, ড. আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। এর আগে বঙ্গভবন থেকে বের হয়ে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বিএনপির সংলাপ ফলপ্রসূ হয়েছে বলে সাংবাদিকদের কাছে মন্তব্য করেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্টের কাছে বিএনপি বেশ কিছু সুপারিশ করেছে। তিনি আন্তরিকতার সঙ্গে তা শুনেছেন। সুপারিশ বাস্তবায়নে প্রেসিডেন্ট চেষ্টা করবেন বলে কথা দিয়েছেন। সার্চ কমিটি গঠনে বিএনপি কোনো নাম প্রস্তাব করেছে কিনা জানতে চাইলে জমির উদ্দিন বলেন, তা বলার সময় এখনও আসেনি। প্রেসিডেন্ট বলেছেন, প্রয়োজনে তিনি আবার বিএনপিকে ডাকবেন। তবে ইসি গঠন ছাড়া প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকে অন্য কোনো বিষয় নিয়ে কথা হয়নি।
আই অ্যাম কস্টলি প্রিজনার
বিএনপি প্রতিনিধি দলের সদস্যরা জানান, বঙ্গভবনের দরবার হলে বিএনপি প্রতিনিধি দলকে আন্তরিকতার সঙ্গে স্বাগত জানান প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ। স্বভাবসুলভ আন্তরিকতায় তিনি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ প্রতিনিধি দলের সদস্যদের কুশলাদি জানতে চান। প্রেসিডেন্ট দরবার হলে এসেই বিএনপি চেয়ারপারসনের কাছে জানতে চান, তিনি কেমন আছেন। জবাবে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আছি, মোটামুটি আছি।’ প্রতিনিধি দলের সদস্য বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদকে ‘সিনিয়র’ আখ্যায়িত করে কেমন আছেন জানতে চান। প্রতিনিধি দলের আরেক সদস্য ড. আবদুল মঈন খানকে ‘নাতজামাই’ সম্বোধন করে রসিকতা করেন। ‘কী নাতিন জামাই কেমন আছেন?’ পরে নিজের চেয়ারে বসে খালেদা জিয়ার উদ্দেশে প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ বলেন, ‘মঈন সাহেবতো আমার নাতিন জামাই।’ খালেদা জিয়া হেসে বলেন, ‘তাই নাকি?’ বিএনপি প্রতিনিধি দলের সদস্য তার খোঁজ-খবর জানতে চাইলে তিনি হেসে বলেন- ‘আই এ্যাম কস্টলি প্রিজনার’। স্মরণ করেন স্পিকার হিসেবে সংসদে দায়িত্ব পালনের সময় বিএনপির নেতাদের সঙ্গে তার অতীত দিনের কথা। প্রেসিডেন্ট হামিদ এ সময় তার স্পিকার থাকার দিনগুলোর কথা স্মরণ করে সাবেক বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়াকে বলেন, আগে সংসদে থাকতেতো দেখা হতো। এখন তো আমি দূরে থাকি। প্রেসিডেন্ট হামিদ বিএনপি নেত্রীর শারীরিক অবস্থার খোঁজ-খবর নেন। সংলাপের শুরুতেই বিএনপি প্রতিনিধি দলকে ফলের রস, ফিশ ফিঙ্গার, চিকেন পেটিস, চিকেন স্যান্ডুইচ, কাজু বাদাম, গুড়ের সন্দেশ আর চা দিয়ে আপ্যায়িত করা হয়। বিকাল ৫টা ৩৫ মিনিটে আলোচনা শেষে সবাইকে নিয়ে বেরিয়ে আসেন প্রেসিডেন্ট। বঙ্গভবনের অক্টাগনালে দাঁড়িয়ে বিএনপি প্রতিনিধি দলের সদস?্যদের বিদায় জানান তিনি। এর আগে বিকাল ৩টার দিকে বঙ্গভবনের উদ্দেশে গুলশানের বাসা থেকে রওনা দেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। গুলশান থেকে সোজা নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে যান তিনি। সেখানে বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মী স্লোগান দিয়ে তাকে স্বাগত জানান। নয়াপল্টনে বিএনপি চেয়ারপারসনের আগেই উপস্থিত হন প্রতিনিধি দলের অন্য সদস্যরা। তবে কার্যালয়ে ঢুকেননি তিনি। ওদিকে নির্দিষ্ট সময়ের কিছু আগে পৌঁছানোর কারণে রাজউক ভবনের সামনে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে খালেদা জিয়ার গাড়িবহর। চারটা ২৫ মিনিটে বঙ্গভবনে পৌঁছেন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপির প্রতিনিধি দল।
উল্লেখ্য, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন ও শক্তিশালীকরণে ১৮ই নভেম্বর দেশবাসীর কাছে ১৩ দফা সংবলিত একটি আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব উত্থাপন করেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সরকারের তরফে তাৎক্ষণিকভাবে নাকচ করে দেয়া হয় সে প্রস্তাব। তবে প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্তের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এরপর প্রস্তাবটি প্রেসিডেন্টের কাছে পৌঁছায় বিএনপি। এ ব্যাপারে প্রেসিডেন্টকে উদ্যোগ নেয়ার আহ্বানও জানায় দলটি। তারই প্রেক্ষিতে প্রেসিডেন্ট সংলাপের উদ্যোগ নিয়ে বিএনপিকে প্রথমদিনই আমন্ত্রণ জানান। সংলাপে অংশ নেয়ার জন্য ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলের নাম পাঠানোর জন্য বলা হয়। প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সংলাপের চিঠি পেয়েই দলের সিনিয়র নেতা ও কয়েকজন বুদ্ধিজীবীর সঙ্গে বৈঠক করেন খালেদা জিয়া। সে বৈঠকে উত্থাপিত প্রস্তাবের আলোকে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনার বিষয়বস্তু নির্দিষ্ট করাসহ সার্বিক বিষয়ে প্রস্তুতিমূলক আলোচনা করেন। এছাড়া সম্ভাব্য সার্চ কমিটি ও পুনর্গঠিত ইসির কমিশনার হিসেবে প্রস্তাবনা উত্থাপনের পর থেকেই বিতর্কমুক্ত, দলীয় রাজনীতির সংশ্লেষহীন বা সব মহলে গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে- এমন বিশিষ্ট ব্যক্তিদের একটি তালিকা তৈরি করছিল বিএনপি। বৈঠকে সে তালিকা সংক্ষিপ্ত করা হয়। দলের দায়িত্বশীল কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট চাইলে ৪ থেকে ৫ জনের নাম দিতে পারে বিএনপি। যেখানে থাকবে সাবেক প্রধান বিচারপতি, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও বিশিষ্ট নারী ব্যক্তিত্বের নাম। সার্চ কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে একজন সাবেক প্রধান বিচারপতিকেই বেশি গুরুত্ব দেবে বিএনপি। অবশ্যই বাছাই কমিটি গঠন কাঠামো সম্পর্কে বিএনপি চেয়ারপারসন তার প্রস্তাবনাতেই বলেছেন- প্রেসিডেন্ট সর্বজন শ্রদ্ধেয়, সৎ, নিরপেক্ষ, অভিজ্ঞ, প্রাজ্ঞ, নৈতিকতা ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ব্যক্তিদের নিয়ে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি বাছাই কমিটি গঠন করবেন। বাছাই কমিটির আহ্বায়ক হবেন বাংলাদেশের অবসরপ্রাপ্ত এবং কর্মক্ষম একজন সাবেক প্রধান বিচারপতি (জ্যেষ্ঠতার ক্রমানুসারে), যিনি বিতর্কিত নন এবং অবসরগ্রহণের পর সরকারের কোনো লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত নন বা ছিলেন না। এদিকে বঙ্গভবন থেকে পাঠানো চিঠির নির্দেশনা অনুযায়ী ১৫ই ডিসেম্বর দুপুরে খালেদা জিয়াসহ বিএনপির ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নামের তালিকা পাঠানো হয় বঙ্গভবনে। এদিকে প্রেসিডেন্ট প্রথমধাপে যে ৫টি রাজনৈতিক দলকে সংলাপের আমন্ত্রণ জানিয়েছে তাদের মধ্যে- ২০শে ডিসেম্বর জাতীয় পার্টি, ২১শে ডিসেম্বর এলডিপি ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ও ২২শে ডিসেম্বর জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল সংলাপে অংশ নেবে। বাকি নিবন্ধিত দলগুলোকেও পর্যায়ক্রমে ডাকা হবে।
বিএনপির প্রস্তাব ইসি গঠনে সহায়ক হবে: প্রেসিডেন্ট
এদিকে নির্বাচন পরিচালনায় ইসির ভূমিকাই যে মুখ্য, তা মনে করিয়ে দিয়ে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা ও তাদের মতামত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন। বঙ্গভবনের দরবার হলে প্রায় এক ঘণ্টার এই আলোচনা শেষে প্রেসিডেন্টের প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন সাংবাদিকদের কাছে বৈঠকের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে বিএনপির প্রতিনিধি দল আলোচনায় অংশ নিতে আসায় প্রেসিডেন্ট শুরুতেই তাদের ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর নির্বাচন পরিচালনার জন্য নির্বাচন কমিশনের ভূমিকাই মুখ্য। একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন ও সার্চ কমিটি গঠনের ব্যাপারে বিএনপি যেসব প্রস্তাব পেশ করেছে সেগুলো সহায়ক হবে। এর আগে বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে দলের নেতাদের নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বঙ্গভবনে পৌঁছালে তাকে স্বাগত জানান প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের অতিরিক্ত সচিব ওয়াহিদুল ইসলাম খান। জয়নাল আবেদীন বলেন, প্রেসিডেন্ট আলোচনায় বলেন, ‘আপনাদের মতামত পরবর্তী নির্বাচন কমিশন গঠনে ইতিবাচক অবদান রাখবে বলে আমি বিশ্বাস করি। যে কোনো বিষয়ে আলোচনা ও মতবিনিময় সমাধানের বহুমুখী পথের সন্ধান দেয়।’ প্রেসিডেন্টের প্রেস সচিব জানান, নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে আলোচনায় আমন্ত্রণ জানানোয় বিএনপি চেয়ারপারসন প্রেসিডেন্টকে ধন্যবাদ দেন এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। নির্বাচন কমিশন ও সার্চ কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া নিয়ে তিনি একটি লিখিত প্রস্তাব আলোচনায় তুলে ধরেন। এছাড়া গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধন ও নির্বাচন কমিশন শক্তিশালীকরণে তাদের প্রস্তাবও তিনি তুলে ধরেন। জয়নাল আবেদীন বলেন, বিএনপি প্রেসিডেন্টের এ উদ্যোগের সফলতা কামনা করেছে এবং এ ব্যাপারে তাদের সার্বিক সহযোগিতা থাকবে বলে জানিয়েছেন।
M | T | W | T | F | S | S |
---|---|---|---|---|---|---|
1 | 2 | 3 | 4 | 5 | ||
6 | 7 | 8 | 9 | 10 | 11 | 12 |
13 | 14 | 15 | 16 | 17 | 18 | 19 |
20 | 21 | 22 | 23 | 24 | 25 | 26 |
27 | 28 | 29 | 30 | 31 |