আবু হানিফ ওরফে হাছু নরসুন্দা নদীর প্রায় ছয় কিলোমিটার এলাকা দখলে নিয়ে অবৈধভাবে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করার অভিযোগে অস্ত্রসহ আটক হয়েছে কিশোরগঞ্জের শীর্ষ সন্ত্রাসী । গতকাল অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) তরফদার মো. আক্তার জামিলের নেতৃত্বাধীন ভ্রাম্যমাণ আদালতের হাতে অস্ত্রসহ আটক হয় সন্ত্রাসী হাছু। বৃহস্পতিবার বিকালে ভ্রাম্যমাণ আদালতের এই অভিযানের সময় হাছুর অফিস হিসেবে ব্যবহৃত একটি ঘর থেকে একটি এয়ার গানসহ বেশ কিছু দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক তরফদার মো. আক্তার জামীল আটক আবু হানিফ ওরফে হাছুকে দুই বছরের কারাদ- প্রদান করেন। বৃহস্পতিবার রাতে ভ্রাম্যমাণ আদালতে এই সাজা প্রদানের পর পরই তাকে কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। তার আটক এবং সাজার খবরে এলাকায় স্বস্তি নেমে আসে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) তরফদার মো. আক্তার জামিল জানান, হাছু বাহিনী দীর্ঘদিন ধরে কিশোরগঞ্জ সদর ও হোসেনপুর উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নরসুন্দা নদীর প্রায় ছয় কিলোমিটার এলাকা অবৈধভাবে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করে ভোগ-দখল করে আসছিল। গত মঙ্গলবার প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান চালিয়ে নদীর ৯টি বাঁধ গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। বৃহস্পতিবার বিকালে হোসেনপুরের চরপুমদী বাজার এলাকায় পুনরায় বাঁধ নির্মাণের চেষ্টা করা হচ্ছে, এমন খবর পেয়ে তরফদার মো. আক্তার জামীল পুলিশসহ ঘটনাস্থলে গেলে তাদেরকে বাধা প্রদান করা হয়। এ সময় নদীর দখলদার হাছুকে আটক করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে বিচারক তরফদার মো. আক্তার জামীল হাছুকে দুই বছরের বিনাশ্রম কারাদ- প্রদান করেন। এছাড়া ঘটনাস্থল সংলগ্ন হাছুর অফিস হিসেবে ব্যবহৃত একটি ঘর থেকে একটি এয়ার গানসহ বেশ কিছু দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করার ঘটনায় থানায় নিয়মিত মামলা রুজু করা হবে বলেও তরফদার মো. আক্তার জামিল জানান।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, একের পর এক ভূমি দস্যুতায় বেপরোয়া কিশোরগঞ্জের শীর্ষ সন্ত্রাসী হাছু। ডাকাতি, ভূমিদস্যুতা, সন্ত্রাস, অস্ত্র, চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগে তার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় অসংখ্য মামলা রয়েছে। এর মধ্যে কেবল কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানাতেই রয়েছে ১০টিরও বেশি মামলা। এগুলোর মধ্যে ডাকাতি, জমি দখল, চাঁদাবাজি ছাড়াও রয়েছে দ্রুত বিচার আইনে দায়ের করা মামলা। পার্শ্ববর্তী হোসেনপুর থানায় জমি জবরদখলের একাধিক মামলা ছাড়াও ময়মনসিংহের নান্দাইল থানায় ডাকাতি ও অস্ত্র আইনে দু’টি মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে আদালতে এবং দেশের বিভিন্ন থানায় আরো অন্তত অর্ধশত মামলা রয়েছে বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে। এসব মামলার বাইরেও তার বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একটি প্রভাবশালী মহলের আশীর্বাদে এতোদিন ধরাছোঁয়ার বাইরেই ছিল পুলিশের তালিকাভুক্ত এ সন্ত্রাসী। ফলে দিনের পর দিন সন্ত্রাসী হাছুর নেতৃত্বাধীন বাহিনীর তা-ব বেড়েই চলছিল। বিশেষ করে জেলা সদরের হারুয়া, গাইটাল, শহরতলীর মারিয়া ও রশিদাবাদ ইউনিয়নে তার বাহিনীর সন্ত্রাসী কর্মকা-ের কাছে জিম্মি সাধারণ মানুষ। এসব এলাকায় মসজিদের জায়গা দখল থেকে শুরু করে সব অপকর্মের হোতা সন্ত্রাসী হাছু। কিশোরগঞ্জের সর্ববৃহৎ বিদ্যাপীঠ সরকারি গুরুদয়াল কলেজের দেড় একর আয়তনের বিশাল পুকুর দখল করেও আলোচনায় ছিল স্থানীয়ভাবে ‘হাছু ডাকাত’ নামে পরিচিত এই শীর্ষ সন্ত্রাসী।
কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি মীর মোশারফ হোসেন জানান, হাছু মিয়া পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে অনেক মামলা রয়েছে। তবে বিচারাধীন সেসব মামলায় সে জামিনে ছিল।