প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য-প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় সরকার বাক-স্বাধীনতা ও মুক্ত সাংবাদিকতায় প্রতিশ্রুতিদ্ধ বলে মন্তব্য করেছেন । তিনি বলেন, ‘মিথ্যা প্রচারে সন্ত্রাসীদের ইন্টারনেট ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না।কোনও ভয়াবহ ঘটনাকে অতিরঞ্জিত করে প্রকাশ করতে দেওয়া হবে না।’ সোমবার জাপানের টোকিও-ভিত্তিক শীর্ষ অনলাইন জার্নাল ‘দ্য ডিপ্লোমেট’-এ ‘বাংলাদেশ ফাইট্স মেলিসিয়াস ফেসবুক পোস্টিংস, অনলাইন হেইট’। শীর্ষক এক নিবন্ধে তিনি এসব কথা লিখেছেন।
নিবন্ধে জয় লিখেছেন, ‘ মিথ্যা ও ঘৃণা প্রচারে ইন্টারনেটের শক্তি সম্পর্কে বিশ্ব এখন বুঝতে পেরেছে। সহিংসতা ও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিতে ব্যক্তিগত পর্যায়েও ভূমিকা রাখছে।’ তার মতে, ‘বাংলাদেশ দুঃখজনকভাবে এই নতুন যুদ্ধের মুখোমুখি। কিন্তু এ ব্যাপারে নাগরিকদের জীবনের নিরাপত্তা ও সংবিধান রক্ষার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা রয়েছে।’
বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক দেশ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা লিখেছেন, ‘নাগরিকদের অধিকার রক্ষায় বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বাংলাদেশের জঙ্গিবাদীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভুয়া সংবাদ দিয়ে ঘৃণা ছড়াচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের মতো বাংলাদেশেও ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা অনেক ক্ষেত্রে হয়রানির শিকার হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি ফেসবুকে মক্কায় ইসলামের পবিত্র মসজিদে হিন্দু দেবতার মূর্তির ভুয়া ছবি দেখিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে ১৫টি হিন্দু মন্দির ও একশ’ বাড়িঘর ধ্বংস করে।’
জয় লিখেছেন, ‘ইসলামি চরমপন্থীরা হিন্দুদের বাড়িঘর ধ্বংস করার জন্যই ওই ছবি ব্যবহার করে। তবে সরকার নাগরিকদের রক্ষায় এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।’ তিনি বলেন, ‘ভিডিওতে ছবি দেখে অপরাধীদের শনাক্ত করার মাধ্যমে সরকার প্রায় ৮০ জনকে গ্রেফতার করে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। এই ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তরা যেন তাড়াতাড়ি বিচার পান, সে জন্য এই মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে হস্তান্তর করা হবে বলে সরকার ঘোষণা দেয়।’
বাংলাদেশ ফাইট্স মেলিসিয়াস ফেসবুক পোস্টিংস, অনলাইন হেইটস’ নিবন্ধে আরও লিখেছেন, ‘ভবিষ্যতে এ জাতীয় হামলার ঘটনা প্রতিরোধে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। হামলা প্রতিরোধে ব্যর্থ হওয়ায় দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এলাকার হিন্দুদের নিরাপত্তার জন্য অতিরিক্ত পুলিশ, র্যাপিড এ্যাকশন ব্যা টালিয়ন ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বাহিনীর সদস্যদের নিয়োজিত করা হয়।’ তিনি লিখেছেন, ‘ঘটনার পর উচ্চপর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তারা এলাকা পরিদর্শন করেন এবং ক্ষতিগ্রস্তদের গৃহসংস্থানের নিশ্চয়তা ও তাদের নিরাপত্তা প্রদানের ব্যবস্থা করার আশ্বাস দেন। এছাড়া সরকার ঘৃণা ছড়ানো ও সহিংস ঘটনার জন্য দায়ী ৩৫টি ওয়েবসাইট বন্ধ করে দেয়।’
গত জুলাই মাসে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার সময় জঙ্গিরা রেস্টুরেন্টের ওয়্যারলেস নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ইন্টারনেটে প্রচারের জন্য কাস্টমারদের ফোন ব্যবহার করে ছবি প্রকাশ করেছে জানিয়ে জয় বলেন, ‘ক্যাফে হামলার পর সরকার ১৩ জন জিম্মিকে উদ্ধার করে এবং জিম্মি ঘটনার অবসান ঘটে। তখন থেকেই অনেক জঙ্গিকে গ্রেফতার ও তাদের আস্তানা চিহ্নিত করা হয়।’ তিনি লিখেছেন, সম্প্রতি স্থানীয় দুর্ধর্ষ জঙ্গি গ্রুপের এক নেতা ও অন্য ৯ জনের বিরুদ্ধে সরকারি প্রসিকিউটররা চার্জশিট দিয়েছেন। জানুয়ারির শুরুর দিকে এর বিচার কাজ শুরু হবে।
প্রধানমন্ত্রীর তথ্য-প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা আরও লিখেছেন, ‘সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সারাদেশে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য ইন্টারনেট ব্যবহার করে বাংলাদেশের ৬৪টি প্রশাসনিক অঞ্চলে সর্বস্তরের জনগণের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কথা বলছেন।’ সূত্র: বাসস