শ্রেষ্ঠ সন্তান শহীদ বুদ্ধিজীবীদের বিনম্র শ্রদ্ধা এবং গভীর কৃতজ্ঞতায় জাতি স্মরণ করছে তাদের। নানা আযোজনে আজ পালিত হচ্ছে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস।

বুধবার সকালে মিরপুরে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে জনসাধারণের শ্রদ্ধার জন্য খুলে দেয়া হয় বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ। সেখানে শ্রদ্ধা জানাতে সাধারণ মানুষের ঢল নেমেছে। এছাড়া রায়েরবাজার বধ্যভূমিতেও ভিড় জমিয়েছে সাধারণ মানুষ। দিনভর চলবে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলসহ নানা পেশাজীবী, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সকালে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন। দিনব্যাপী বিভিন্ন সংগঠন শহীদদের স্মরণে আলোচনা সভা, মৌন মিছিল ইত্যাদি।

দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেত্রী রওশন এরশাদ, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বুদ্ধিজীবীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে পৃথক বাণী দিয়েছেন। তারা বুদ্ধিজীবীসহ সব শহিদ মুক্তিযোদ্ধার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

১৯৭১ সালের এ দিনে দখলদার পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার আল-বদর, আল-শামস স্বাধীন বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করতে এ দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে এক সাগর রক্ত পেরিয়ে বাঙালি যখন বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে, তখন বুদ্ধিজীবী হত্যায় মেতে ওঠে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসর আল-বদর, আল-শামস। তারা ঢাকার বিভিন্ন স্থান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিৎসক, সংস্কৃতিকর্মীসহ বিভিন্ন পেশার বরেণ্য ব্যক্তিদের ধরে নিয়ে যায়। পরে রায়েরবাজার ও মিরপুরে হত্যা করা হয় তাদের। বুদ্ধিজীবী হত্যার স্থানটি পরে বধ্যভূমি হিসেবে পরিচিত পায়, যেখানে তাদের স্মৃতির উদ্দেশে নির্মিত হয় ‘বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ’। আজ সেখানে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবে জাতি।

হানাদার ও তাদের এদেশীয় দোসরদের হাতে নিহত বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে রয়েছেন অধ্যাপক মুনির চৌধুরী, ডা. আলিম চৌধুরী, অধ্যাপক মুনিরুজ্জামান, ড. ফজলে রাব্বী, অধ্যাপক জিসি দেব, জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, অধ্যাপক সন্তোষ ভট্টাচার্য, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, শহীদুল্লা কায়সার, সাংবাদিক সিরাজ উদ্দিন হোসেন, খন্দকার আবু তাহের, নিজামউদ্দিন আহমেদ, এস এ মান্নান (লাডু ভাই), এ এন এম গোলাম মোস্তফা, সৈয়দ নাজমুল হক, সেলিনা পারভিনসহ আরো অনেকে।

৭০-এর নির্বাচন থেকে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের বিজয় অর্জন পর্যন্ত প্রতিটি অধ্যায়ে বাঙালি জাতিকে উজ্জীবিত এবং মুক্তিযুদ্ধে নানাভাবে সহায়তা করেছেন এসব শ্রেষ্ঠ সন্তান। দেশের স্বাধীনতা অর্জনে অপরিসীম ভূমিকা পালনকারী এসব কবি-সাহিত্যিক, সাংবাদিক, শিক্ষক, চিকিৎসক. প্রকৌশলী, শিল্পী, চলচ্চিত্রকারসহ বুদ্ধিজীবীদের রাতের অন্ধকারে ধরে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে হানাদাররা। তারা ভেবেছিল বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করতে পারলে বাঙালি মেধাশূন্য হবে, ভবিষ্যৎ ষড়যন্ত্রের পথ প্রসারিত হবে।

কিন্তু তাদের সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি। বুদ্ধিজীবীদের হত্যার ঠিক দুই দিন পর ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করে এবং স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে।

শুধু তা-ই নয়, বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের নীলনকশা বাস্তবায়নকারী গুপ্তঘাতক আলবদর বাহিনীর প্রধান ও জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির দণ্ড কার্যকর হয়। তবে বুদ্ধিজীবী হত্যায় সরাসরি জড়িত চৌধুরী মইনুউদ্দীন ও আশরাফুজ্জামান খান পলাতক থাকায় তাদের রায় এখনো কার্যকর করা সম্ভব হয়নি।

Share Now
January 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031