সাম্প্রতিককালে সত্যিকারের খবরের চেয়ে মিথ্যা খবরই বেশি ছড়াচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র ও পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ইন্টারনেটে ক্লিক ও বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে অর্থ আয়ের উদ্দেশ্যে তৈরি কাল্পনিক খবর তৈরি করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সাংবিধানিকভাবে একটি গণতান্ত্রিক এবং জনগণের অধিকার রক্ষায় সংকল্পবদ্ধ রাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের মতো বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ হয়েছে। জঙ্গিরা তাদের ঘৃণা ছড়াতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া ও বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রচার করছে।
সম্প্রতি মুসলিমদের পবিত্র মসজিদ মক্কায় হিন্দু দেবীর মূর্তি স্থাপনের একটি ভুয়া ছবি ছড়ানোর পর মুসলিম উগ্রবাদীরা ঢাকার উত্তর পশ্চিমের নাসিরনগর এলাকায় ১৫টি হিন্দু মন্দিরের পাশাপাশি একশ বাড়িঘর ভাঙচুর করেছে। ফটোশপে বানানো ছবির কাজ তেমন ভালো না হলেও উগ্রবাদীরা এর সত্যতা নিয়ে ভাবেনি। তারা বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু হিন্দুদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়াতে এই ছবিটি ব্যবহার করেছে। ঘটনার পর পরই নাগরিকদের নিরাপত্তায় ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার।
ওই হামলার ভিডিওচিত্র ধারণ করে হামলায় জড়িত প্রায় ৮০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। ভুক্তভোগীরা যেন ন্যায়বিচার পায় সে জন্য সরকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচার করার ঘোষণা দিয়েছে।
একই সঙ্গে সরকার ভবিষ্যতে এমন আক্রমণ ঠেকাতেও উদ্যোগ নিয়েছে। হামলা ঠেকাতে ব্যর্থতার দায়ে দুইজন পুলিশ কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি ওই এলাকার হিন্দুদের রক্ষায় সরকার অতিরিক্ত পুলিশ, এলিট ফোর্স র্যাব ও আধা সামরিক বাহিনী বিজিবি মোতায়েন করে। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। তারা এলাকাবাসীকে এই বোধ দিয়ে এসেছেন যে, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সরকার নাগরিকদের রক্ষার পাশাপাশি অপরাধীদেরকে বিচারের মুখোমুখি করবে। পাশাপাশি ঘৃণা এবং হিংসা ছড়ানোর অভিযোগে সরকার ৩৫টি ওয়েবসাইট বন্ধ করে দিয়েছে।
বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশে ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিদ্বেষ ছড়ানোর বিষয়টি ব্যাপকভাবে বেড়েছে। ফ্রান্স, বেলজিয়াম, যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের উগ্রবাদীরা দূরে বসে উসকানিমূলক শব্দ ও ছবি ইন্টারনেটে ছড়াচ্ছে। গত জুলাইয়ে ঢাকার হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার পর জঙ্গিরা হোটেল কর্মীদেরকে ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক বন্ধ করার কথা বলে ইন্টারনেটে হামলার পরের ছবি প্রকাশের জন্য কাস্টমাইজড ফোন ব্যবহার করেছিল।
এই মামলার পর সরকার ১৩ জন জিম্মিকে উদ্ধার করে। ওই ঘটনার পর অনেক সন্দেহভাজনকে আটক ও সাজা দেয়া হয়েছে। একটি হামলার জন্য সম্প্রতি একজন কুখ্যাত জঙ্গি নেতা ও তার নয় জন সহযোগীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। আগামী জানুয়ারিতে বিচার শুরু হবে।
যারা ইন্টারনেটকে তাদের অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছে তাদেরকে ধরতে সরকার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। পাশাপাশি ইন্টারনেটের ভালো ব্যবহার বাড়ানোর চেষ্টাও করছে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিনিই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতার নীতি গ্রহণ করেছেন। তিনি ইন্টারনেটের মাধ্যমে ভিডিওকনফারেন্সে দেশের ৬৪ জেলাতেই জঙ্গিবিরোধী সচেতনতা গড়ার চেষ্টা করছেন।
সরকার জরুরি মুহূর্তে ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার মহড়া করেছে, যাতে করে সন্ত্রাসী হামলায় তৎক্ষনাৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে তাদের ভিডিও, ছবি পোস্ট করা বন্ধ করতে পারেl
বাংলাদেশ সরকার একটি স্বাধীন ও মুক্ত গণমাধ্যম নিশ্চিত করার বিষয়ে অঙ্গীকারাবদ্ধ। কিন্তু সন্ত্রাসীদেরকে ইন্টারনেট ব্যবহার করে মিথ্যাচার প্রচার করতে দেবে না সরকার।
ইন্টারনেটে কীভাবে মিথ্যা ও ঘৃণা প্রচার করা যায়, তা বিশ্ব দেখেছে। এর মাধ্যমে মানুষকে সন্ত্রাসের দিকে ধাবিতও করা হয়েছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদেশও নতুন এই যুদ্ধের মধ্যে পড়ে গেছে। কিন্তু দেশের সংবিধান সংরক্ষণ ও নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারও পুরোপুরি তৈরি আছে।
বাংলাদেশ আইনের শাসন নিশ্চিত করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। পাশাপাশি দেশের ভেতর এবং সারা বিশ্বেই জঙ্গিবিরোধী বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণভাবে এবং বিশ্বজুড়ে তার মিত্রদের সঙ্গে নিয়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও সন্ত্রাস দমনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলবিষয়ক শীর্ষস্থানীয় আন্তর্জাতিক অনলাইন সাময়িকী ‘দ্য ডিপ্লোম্যাট’-এ এই নিবন্ধটি লিখেছেন সজীব ওয়াজেদ জয়। ১২ ডিসেম্বর জাপানের টোকিওভিত্তিক ওই সাময়িকীতে ‘বাংলাদেশ ফাইটস ম্যালিসাস ফেসবুক পোস্টিংস, অনলাইন হেট’ শিরোনামে এটি প্রকাশ করা হয়।