সারা দেশে মাত্র ২২৪ জন নিয়ন্ত্রণ করছে মাদক ব্যবসা।বাংলাদেশের  ১১টি জেলার ৯৯ টি রুট দিয়ে মাদক প্রতিনিয়ত ঢুকছে।  চট্টগ্রামের নিয়ন্ত্রণ মাত্র ৫২ জনের হাতে। অভিযান চলুক, মাদক বিক্রেতা ধরা পড়ুক কিংবা চালান আটক হোক, কোন কিছুতেই এদের দৌরাত্ম্য বন্ধ হয় না। অধিকাংশ সময় ধরা পড়ে খুচরো বিক্রেতা। মাঝে মধ্যে সিন্ডিকেটর দু’একজন ধরা পড়ে। মাদক স্পটগুলোর আধিপত্য বিস্তারের জের ধরে খুনের ঘটনাও ঘটছে হরহামেশাই।

মাদক ব্যবসার আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে খুনের ঘটনাও ঘটছে নগরী ও জেলার বিভিন্ন স্থানে। অবৈধ কাঁচা টাকার প্রলোভনে একসময়ের সহযোগীকে খুন করতেও দ্বিধা করছে না প্রতিপক্ষ। সর্বশেষ গতকাল বেলা একটায় নগরীর আলকরণ এলাকায় প্রতিপক্ষের গুলিতে নিহত স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মানিকের মৃত্যুর কারণও মাদক ব্যবসা সংক্রান্ত বিরোধ বলে জানা গেছে। মানিকের ভাই ইউসুফ রতন সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, আটক রানা তাঁর ভাইকে গুলি করেছে। এলাকায় মাদক, চাঁদাবাজির বিরোধিতা করায় ভাইকে খুন করা হয়েছে।

এর আগে গত ৩০ অক্টোবর নগরীর রেয়াজুদ্দিন বাজারের তামাকুণ্ডি লেইনের একটি পাঁচতলা ভবনে নাজিম উদ্দিন (২৮) নামে এক যুবক খুন হয়। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অভিমত মাদক সংক্রান্ত কারণে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। স্থানীয়রা জানান, নিহত নাজিম আগে রহমান ম্যানশন নামে একটি প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করলেও পরে সেখান থেকে চাকুরি চলে গিয়ে বেকার হয়ে পড়ে এবং নেশায় জড়িয়ে পড়ে। গত ৪ সেপ্টেম্বর হাটহাজারী উপজেলার নাজিরহাট বাস টার্মিনাল এলাকায় মাদক ব্যবসায়ীর হাতে মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম (৪৫) নামের এক যুবক খুন হয়। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ফটিকছড়ি, ভূজপুর ও হাটহাজারী থানার পুলিশের তালিকাভুক্ত আসামি ইসমাইল নামের এক মাদক ব্যবসায়ী নাজিরহাট এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে মাদক ব্যবসা করে আসছিল। নজরুল ইসলামের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হওয়ার এক পর্যায়ে ইসমাইল ক্ষিপ্ত হয়ে নজরুল ইসলামকে পেটে ছুরিকাঘাত করলে নজরুল গুরুতর আহত হয়। এ ঘটনায় স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসার পথে তার মৃত্যু হয়।

গত ৫ জুলাই চট্টগ্রামের রেলওয়ে স্টেশন ধোপার মাঠ বাস্তুহারা কলোনি এলাকায় ‘মাদক বিক্রির নিয়ন্ত্রণ’ নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে মো. শফিক নামে এক যুবক খুন হন। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্টেশন কলোনি ধোপার মাঠ এলাকায় কামাল, রুহুল আমিন ও মোক্তার একত্রিত হয়ে মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ করত। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে কামালের সঙ্গে মোক্তার ও রুহুল আমিনের বিরোধ হয়। পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে কামাল জামিনে ছাড়া পাওয়ার পর ৫ জুলাই স্টেশন এলাকায় শফিককে খুন করে।

এদিকে নানামুখী ব্যস্ততার কারণে পুলিশ মাদকবিরোধী অভিযানে বাড়তি সময় দিতে পারছে না বলে পুলিশ কর্মকর্তাদের দাবি। ঘটনার সত্যতা অস্বীকার না করে সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) দেবদাস ভট্টাচার্য  বলেন, কমিশনার স্যার মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন। তার নির্দেশে প্রায় প্রতিদিনই কোন না কোন অভিযানে মাদকের চালান আটক হচ্ছে। ধরা পড়ছে বিক্রেতা। মাঝে মধ্যে মূল হোতারাও বাদ যাচ্ছে না। তিনি বলেন, নগরীর চিহ্নিত মাদক স্পটগুলোর তালিকা তৈরি করে সাঁড়াশি অভিযান চলছে। পাশাপাশি যারা মাদক ব্যবসা ছেড়ে সৎ পথে উপার্জন করতে ইচ্ছুক তাদের আইনী সহায়তা দেয়া হচ্ছে এবং কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করছে পুলিশ।

নির্ভরযোগ্য সূত্রমতে, সরকারিভাবে দেশের মাদক চোরাচালানিদের একটি তালিকা করা হয়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, বিজিবি, কোস্টগার্ড এবং চারটি গোয়েন্দা সংস্থার বিভাগ ওয়ারি করা এ তালিকায় ২২৪ জন মাদক চোরাকারবারির নাম রয়েছে। এর মধ্যে আছে চট্টগ্রামের ৫২ জন। কয়েক বছরের ব্যবধানে তারা মাদকবাণিজ্য করে বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ অসংখ্য সম্পদের মালিক। তাদের অনেকের সন্তান পড়া লেখা করছে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে। তারা গডফাদার হিসেবে থেকে বর্তমানে উঠতি তরুণতরুণীদের দিয়ে মাদকবাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। মাদকব্যবসায় ব্যবহার করা হচ্ছে দামি গাড়ি। চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের তালিকায় এই ৫২ জনের নেতৃত্বে মাদক ব্যবসায় জড়িত আছে আরও ২৮৪ জন।  তালিকায় রয়েছে ৩৫ জন নারী। তারা ২৪৮টি জায়গায় মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।স্থানীয় থানা, আটক মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে এ তালিকা তৈরি করে পুলিশ।

Share Now
December 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031