মানি ট্র্যাকিং করে এই ঘটনার মূল হোতাদের খোঁজা হচ্ছে।ফরেনসিকের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির মূলহোতাদের ধরা খুবই কঠিন। এই ঘটনায় বিভিন্ন দেশের ২৩ জন নাগরিক জড়িত। তাদের সন্ধান পাওয়া গেলেও মূল হোতাদের এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি।
শনিবার (১০ ডিসেম্বর) বিকালে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অতিরিক্ত ডিআইজি (অর্গানাইজড ক্রাইম) মো. শাহ আলম বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি মামলার তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে এক অনানুষ্ঠানিক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান।
ব্রিফিংয়ে শাহ আলম বলেন, ‘ফরেনসিক পদ্ধতিতে এই হ্যাকার গ্রুপকে ধরা খুবই কঠিন কাজ। আমরা তাই মানি ট্র্যাকিং পদ্ধতিতে অগ্রসর হচ্ছি। এই পদ্ধতিতে হ্যাকারদের মূলহোতাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। ধারণা করছি, ক্যাসিনো থেকে টাকা সংগ্রাহক, হ্যাকার ও মূলহোতা একই গ্রুপের হবে।’
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির সঙ্গে ফিলিপাইনের নাগরিক ছাড়াও অন্যান্য আরও কয়েকটি রাষ্ট্রের ২৩ নাগরিক জড়িত। তাদের নাম পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তবে মূলহোতা এখনও চিহ্নিত হয়নি, তাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে।’
শাহ আলম আরও বলেন, ‘আমরা প্রতিদিনই তদন্তে অগ্রগতি পাচ্ছি। যেহেতু এটি ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম তাই একটু দেরি হচ্ছে। আমরা ইন্টারপোলের সহায়তা নিয়েছি। ফিলিপাইনের বিভিন্ন ক্যাসিনো থেকে এবং অন্যান্যভাবে যেসব ব্যক্তি টাকা বের করে নিয়েছে তাদের মধ্যে ২৩ জনের নাম পেয়েছি আমরা। তাদের ইন্টারপোলের মাধ্যমে জিজ্ঞাসাবাদও করেছি। তবে তারা টাকাটা কী করেছে, কার কাছে দিয়েছে, কী অবস্থায় আছে তা নিশ্চিত হতে পারিনি। এটা জানার চেষ্টা করছি।’
সিআইডি কর্মকর্তা বলেন, ‘মূলহোতার সংখ্যা বেশি হবে না। মূলহোতা সবসময় কমই হয়ে থাকে। আমরা শ্রীলঙ্কা ও ফিলিপাইনে কথা বলেছি। ১১টি দেশ এই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত। ইন্টারপোলের সহায়তায় আমরা ওইসব দেশে কথা বলেছি। ইন্টারপোল, এফবিআই আমাদের সহযোগিতা করেছে। ইন্টারপোলের সঙ্গে আমাদের তথ্য বিনিময় হয়। টেলিফোনে কথা হয়।’
শাহ আলম বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা ও বিদেশি সংস্থার কর্মকর্তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্ভারকে ধাপে ধাপে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। ওই বিদেশিরা এমন কিছু কাজ করেছে যার ফলে সার্ভার অরক্ষিত হয়ে পড়ে। যারা এসব কাজ করেছে, এ বিষয়ে তাদের গভীর জ্ঞান রয়েছে।’ সার্ভার ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যারা সংশ্লিষ্ট ছিল, সিআইডি তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে বলে জানান তিনি।
টাকাটা কীভাবে আমেরিকার রিজার্ভ ব্যাংক থেকে ফিলিপাইন হয়ে ক্যাসিনোতে পৌঁছেছে তা মোটামুটি বুঝতে পেরেছে সিআইডি। তবে ফিলিপাইনের ক্যাসিনোগুলোর কোনও ধরনের জবাবদিহিতা নেই বলে মন্তব্য করেন সিআইডির এই কর্মকর্তা। ব্রিকিংয়ে তিনি জানান, একটি সেশনেই হ্যাকিংয়ের কাজটি সম্পন্ন করা হয়েছে। ম্যানুয়ালি ও ব্যাচ ফাইলের মাধ্যমে করা হয়েছে এই হ্যাকিং।
হ্যাকাররা কতদিন আগে হ্যাংকিংয়ের প্রস্তুতি নিয়েছিল, এমন প্রশ্নের সরাসরি কোনও জবাব দেননি শাহ আলম। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ হ্যাকিংয়ের আগে ২০১৫ সালের ১৫ মে আরসিবিসি ব্যাংকে পাঁচটি ভুয়া অ্যাকাউন্ট খোলে হ্যাকাররা। তবে সেটি বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ হ্যাক করার জন্য না। কারণ এই হ্যাকার গ্রুপটি অ্যাকাউন্ট খোলার পরই জানিয়েছিল যে তাদের অ্যকাউন্টগুলোতে বড় অঙ্কের অর্থ প্রবেশ করবে। কিন্তু ওই সময় ওই অ্যাকাউন্টগুলোতে এ অর্থ প্রবেশ করেনি। আবার ওই সব অ্যকাউন্ট খোলার এক বছর পর বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনা ঘটে। তাই ওই ভুয়া অ্যাকাউন্টগুলো বাংলাদেশে ব্যাংকের জন্য খোলা হয়েছিল, তা বলা যায় না।’ এসব হ্যাকারদের ‘হ্যাভিচুয়াল হ্যাকার’ বলে অভিহিত করেন শাহ আলম। অর্থাৎ, এরা নিয়মিতই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হ্যাকিংয়ের ঘটনা ঘটিয়ে থাকে।
তদন্তের অগ্রগতি প্রসঙ্গে সিআইডি কর্মকর্তা বলেন, ‘২৩ জন লোককে ব্যবহার করে কাজটি হয়তো একজন ব্যক্তি করিয়েছে। আমরা ২৩ জনকে পেয়েছি। তবে মূলহোতাকে এখনও খুঁজে পাইনি। আমরা এখন তাকেই খুঁজছি যার নির্দেশে হ্যাক করা হয়েছিল।’
প্রসঙ্গত, এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে সুইফট সিস্টেম ব্যবহার করে ৩৫টি ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্ক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রায় একশ কোটি মার্কিন ডলার হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। এর মধ্যে চারটি বার্তার মাধ্যমে ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকে (আরসিবিসি) স্থানান্তর করা হয় আট কোটি ১০ লাখ ডলার। অন্য আরেকটি মেসেজের মাধ্যমে শ্রীলঙ্কার একটি ‘ভুয়া’ এনজিওর নামে আরও দুই কোটি ডলার স্থানান্তর করা হলেও ওই মেসেজে একটি বানান ভুলের কারণে সন্দেহ হওয়ায় শেষ মুহূর্তে তা আটকে যায়। ওই সময় আরসিবিসি ব্যাংকে যাওয়া টাকার একটি বড় অংশ চলে যায় ফিলিপাইনের ক্যাসিনোতে জুয়ার টেবিলে। এর মধ্যে এক ক্যাসিনো মালিক দেড় কোটি ডলার ফিলিপাইন সরকারকে ফেরত দেন।
এই ঘটনায় মতিঝিল থানায় একটি মামলা করে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। মামলাটি বর্তমানে সিআইডি তদন্ত করছে। অন্যদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে অর্থ চুরির বিষয়টি ফিলিপাইন ও শ্রীলঙ্কান পুলিশের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআইও তদন্ত করছে।
M | T | W | T | F | S | S |
---|---|---|---|---|---|---|
1 | ||||||
2 | 3 | 4 | 5 | 6 | 7 | 8 |
9 | 10 | 11 | 12 | 13 | 14 | 15 |
16 | 17 | 18 | 19 | 20 | 21 | 22 |
23 | 24 | 25 | 26 | 27 | 28 | 29 |
30 | 31 |