প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ মাসের দিল্লি সফর স্থগিত করা হয় তিস্তাসহ কয়েকটি ইস্যুতে আলোচনা শেষ না হওয়ায় এবং সফরসূচিতে অসামঞ্জস্য থাকায়। তবে  আগামী ফেব্রুয়ারিতে ভারত সফরের আশা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। চলতি মাসের সফর পেছানোর নেপথ্যে একাধিক কারণের কথা বলা হলেও তিস্তার পানি বণ্টন ইস্যুতে সুরাহা না হওয়াই এই সফর পিছিয়েছে বলে মনে করছেন সাবেক কয়েকজন কূটনীতিক। এ সফরে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তিতে বাংলাদেশ যে জোর দিচ্ছে, তারই ইঙ্গিত মিলেছে শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর  সৌজন্য সাক্ষাতের সময়। গণভবনে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে  একাধিক দ্বি-পাক্ষিক ইস্যুতে আলোচনার সময় প্রধানমন্ত্রী পানি সংরক্ষণের বিষয়ে বিশেষভাবে গুরুত্ব আরোপ করেন। একই সঙ্গে ফেব্রুয়ারিতে ভারত সফরের আশা প্রকাশ করেন। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব এম শহিদুল হক বলেন, ‘আমরা নতুন একটি তারিখের বিষয়ে আলোচনা করছি।’

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সৌজন্য সাক্ষাতের পর প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব এহসানুল করিম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আগামী ফেব্রুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী দিল্লি সফরে যাওয়ার আশা প্রকাশ করেছেন। বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে পানি সংরক্ষণ ইস্যুসহ বিভিন্ন বিষয়ে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা হয়েছে ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সরকারের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, ‘৪৫ বছর পার হয়ে গেছে, কিন্তু পানির বিষয়টির সুরাহা হয়নি। এটি জরুরি। বাংলাদেশ এ বিষয়ে একটি সামাধান চায়। তিস্তা চুক্তি বাংলাদেশের জন্য প্রয়োজন। কারণ, এ চুক্তির আলোকে অন্যান্য অভিন্ন নদীরও পানিচুক্তি করা সম্ভব হবে।’ তিনি বলেন, বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে ৫২টি অভিন্ন নদী রয়েছে। এ সবের মধ্যে শুধু ১৯৯৬ সালে গঙ্গা পানিচুক্তি করা সম্ভব হয়েছে। এর দীর্ঘকাল পরে  আলোচনার শেষে  ২০১১ সালে তিস্তা চুক্তির আলোচনা শেষ হয়। তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং-এর ঢাকা সফরের সময় এটি স্বাক্ষরিত হওয়ার কথা থাকলেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তির মুখে চুক্তি স্বাক্ষর করা সম্ভব হয়নি।’

চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফায়েজ আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা তিস্তা চুক্তির বাস্তবায়ন চাই। আশা করি এটি স্বাক্ষরিত হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ ভাটির দেশ, আমাদের স্বার্থ বেশি দেখতে হবে। এছাড়া গঙ্গা ব্যারেজ চুক্তি হলে সেটি আরও ভালো হবে।’

ভারতে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত লিয়াকত আলী চৌধুরী বলেন, ‘তিস্তায় বাংলাদেশের অগ্রাধিকার। এটি দেশের জন্য প্রয়োজন।’ গঙ্গা ব্যারেজ চুক্তি বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটি হলে একটি ব্রেক থ্রু হবে। কারণ এর ফলে অববাহিকার ব্যবস্থাপনা সহজতর হবে।’

এর আগে নভেম্বরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, ‘তিস্তা চুক্তি বাংলাদেশের অগ্রাধিকারের বিষয়। এ চুক্তি সম্পাদনের জন্য সরকার দিল্লিকে বলেছে। দিল্লির সঙ্গে পশ্চিম বঙ্গ সরকারের সমীকরণ তাদের নিজস্ব ব্যাপার। এ বিষয়ে আমাদের কোনও বক্তব্য নেই। কিন্তু আমরা চাই কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে যত দ্রুত সম্ভব এ চুক্তি করা হোক।’তিনি বলেন, ‘এ প্রকল্প দুদেশের জন্য লাভজনক হবে। ভারত পানির ব্যাক ফ্লো ও পলিস্থর যে উদ্বেগ জানিয়েছে, আমরা তার জবাব দিয়ে বলেছি, এ বিষয়ে উদ্বেগের কোনও কারণ নেই।’

ওই কর্মকর্তা  আরও বলেছেন, ‘অক্টোবরে ভারতের একটি টেকনিক্যাল দল গঙ্গা ব্যারাজ প্রকল্প এলাকা প্রদর্শন করে। এ সময় এ বিষয়ে  দু’পক্ষ একসঙ্গে কাজ করার লক্ষ্যে একমত পোষণ করে।’

উল্লেখ্য, গত বছর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের সময়ে ২২টি চুক্তি, সমঝোতা স্মারক ও দলিল স্বাক্ষরিত হয়। এবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফর প্রসঙ্গে একজন কূটনীতিক বলেন, ‘এবার প্রায় ৫০টির মতো চুক্তি, সমঝোতা স্মারক ও দলিল নিয়ে আলোচনা চলছে। আশা করা হচ্ছে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ২০টির বেশি চুক্তি সম্পন্ন হবে।’ তিনি বলেন, ‘নিউক্লিয়ার শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার বিষয়ক একটি চুক্তি দু’পক্ষই চূড়ান্ত করেছে। আশা করা হচ্ছে, এটি প্রধানমন্ত্রীর সফরকালেই স্বাক্ষরিত হবে।’

এছাড়া পায়রা গভীর সুমদ্র বন্দরের একটি অংশের কাজের জন্য ভারতের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হওয়ার কথা রয়েছে।

Share Now
January 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031