রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করেছিল। তাদের লক্ষ্য ছিল ডনাল্ড ট্রাম্পকে জেতানো। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ গোপন এক পর্যালোচনায় এ উপসংহারে উপনীত হয়েছে। গত সপ্তাহে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সিনেটরদের কাছে এক রিপোর্ট পেশ করে সিআইএ। তাতে এসব কথা বলা হয়েছে। ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে সর্বপ্রথম বিষয়টি সামনে আসে। ওই রিপোর্ট সম্পর্কে অবগত কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে পোস্ট বলেছে, রাশিয়া সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ আছে এমন কিছু ব্যক্তিকে চিহ্নিত করতে পেরেছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। তারা ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কমিটি ও অন্যদের হাজারো ই-মেইল হ্যাক করে পৌঁছে দিয়েছিল উইকিলিকসকে। এর মধ্যে ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের প্রচারণা প্রধান জন পডেস্টারের ই-মেইলও রয়েছে। কর্মকর্তারা বলছেন, রাশিয়া এবার ডনাল্ড ট্রাম্পকে বিজয়ী করার অভিযানে নেমেছিল। একই সঙ্গে তারা ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের বিজয়ী হওয়ার সুযোগ হ্রাস করার জন্য কাজ করেছিল। এ উদ্যোগে সহযোগিতা করেছিল ওইসব ব্যক্তি। যুক্তরাষ্ট্রের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেছেন, গোয়েন্দারা অনুধাবন করতে পেরেছেন যে, রাশিয়ার এবারের লক্ষ্য ছিল একজন প্রার্থীর বিরুদ্ধে আরেকজন প্রার্থীর পক্ষ নেয়া। তারা ট্রাম্পকে নির্বাচিত করার টার্গেট নিয়েছিল।
এদিকে, ট্রাম্প শিবির থেকে সিআইএর এ রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান করে এক বিবৃতি দেয়া হয়েছে। এতে তারা বলেছেন, ‘এরা একই লোক যারা বলেছিল সাদ্দাম হুসেইনের কাছে ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্র রয়েছে। নির্বাচন শেষ হওয়ার পর অনেক সময় পেরিয়ে গেছে। এখন সময় এসেছে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার, আমেরিকাকে আরও মহান বানানোর।’ ট্রাম্প এর আগেও নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের বিষয়টি বিশ্বাস করেন না বলেছেন।
খবরে বলা হয়, ওবামা প্রশাসন কয়েক মাস ধরে রাশিয়ান হস্তক্ষেপের বিষয়টি মোকাবিলার পন্থা নিয়ে শলাপরামর্শ করছে। এ ইস্যুতে মস্কোর সঙ্গে উত্তেজনা উস্কে যাওয়া নিয়ে সতর্ক হোয়াইট হাউস কর্মকর্তারা। একই সঙ্গে, হিলারির প্রচারণা শিবিরের পক্ষাবস্থানের অভিযোগ যেন না আসে, সেই বিষয়েও সতর্ক তারা।
শুক্রবার, হোয়াইট হাউসের তরফে বলা হয়েছিল যে, প্রেসিডেন্ট ওবামা নির্বাচনী প্রচারণার সময় রাশিয়ান হ্যাকিং নিয়ে ‘পূর্ণাঙ্গ পর্যালোচনা’র নির্দেশ দিয়েছেন। ওবামার কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড হোমল্যান্ড সিকিউরিটি উপদেষ্টা লিসা মোনাকে বলেন, ২০শে জানুয়ারি হোয়াইট হাউস ছাড়ার আগেই ওই রিপোর্ট দেখতে চান প্রেসিডেন্ট। আর এ পর্যালোচনার নেতৃত্ব দেবেন ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্সের বিদায়ী প্রধান জেমস ক্ল্যাপার। এ কথা জানানোর সময় মোনাকো সিআইএর- সাম্প্রতিক এই পর্যালোচনার বিষয়টি উল্লেখ করেননি।
সিআইএ তাদের সাম্প্রতিক এই পর্যালোচনা রিপোর্টটি ক্যাপিটল হিলে রুদ্ধদ্বার এক ব্রিফিংয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিনেট নেতাদের সামনে উপস্থান করেন। বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তারা রাশিয়ান হ্যাকিং তৎপরতা নিয়ে সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন বলে উল্লেখ করেন। রিপোর্টটি পেশ করা সিআইএ কর্মকর্তারা সিনেটরদের বলেছেন যে, এটা এখন স্পষ্ট যে ট্রাম্পকে নির্বাচিত করাই ছিল রাশিয়ার লক্ষ্য। পরিচয় গোপন রাখার শর্তে কর্মকর্তারা পোস্টকে এ কথা জানান।
উল্লেখ্য, গত ৮ই নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়। এর আগে অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্র সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে রাশিয়াকে দোষারোপ করে। তারা বলে, রাশিয়া ডেমোক্রেটিক পার্টির বিরুদ্ধে সাইবার হামলা চালিয়েছে। এ হামলার জন্য রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে করুণ পরিণতির বিষয়ে সতর্ক করে দেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। কিন্তু রাশিয়ার কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রের এমন অভিযোগ অস্বীকার করে। সর্বশেষ সিআইএ’র রিপোর্টের বিষয়ে সিআইএ ও হোয়াইট হাউস কর্মকর্তারা মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।
গত সপ্তাহে সাতজন ডেমোক্রেটিকং সিনেটর রাশিয়ান সাইবার হামলা নিয়ে তথ্যাদি প্রকাশ করতে ওবামার প্রতি আহ্বান জানান। সাইবার তৎপরতার পেছনে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা কেন ক্রেমলিনের সংশ্লিষ্টতা আছে মনে করছেন সেটাও প্রকাশের অনুরোধ করেন।
এর আগের পর্যালোচনাগুলোতে সিআইএ ও অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থাগুলো হোয়াইট হাউস ও কংগ্রেস নেতাদের বলেছিল যে তাদের বিশ্বাস মস্কোর লক্ষ্য হলো মার্কিন নির্বাচনী ব্যবস্থায় মানুষের আস্থাকে খর্ব করা। তবে সেগুলোতে এ কথা বলা হয়নি যে ট্রাম্পকে নির্বাচিত করাটা তাদের একটা লক্ষ্য। সাম্প্রতিক এই পর্যালোচনায় সিআইএ বলছে নির্বাচনী ব্যবস্থায় আস্থা খর্ব করাই নয় ট্রাম্পকে নির্বাচিত করাটা ছিল রাশিয়ার অন্যতম লক্ষ্য।
M | T | W | T | F | S | S |
---|---|---|---|---|---|---|
1 | ||||||
2 | 3 | 4 | 5 | 6 | 7 | 8 |
9 | 10 | 11 | 12 | 13 | 14 | 15 |
16 | 17 | 18 | 19 | 20 | 21 | 22 |
23 | 24 | 25 | 26 | 27 | 28 | 29 |
30 | 31 |