মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শরণার্থী যারা এসেছে তাদের যথাসাধ্য সহযোগিতা দিচ্ছি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন। আমাদের যতটুকু করার করছি। কিন্তু স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে ‘আমরা দুয়ার খুলে স্রোতের মতো আসতে দিতে পারি না। তবে মিয়ানমার দূতাবাসকে তার দেশের সরকারের কাছে মেসেজ দিতে বলেছি এমন কোনো অবস্থার সৃষ্টি করবেন না, যেন ওখান থেকে শরণার্থী বাংলাদেশে আসে।
বুধবার দশম জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুল ইমামের এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন। তিনি বলেন, প্রতিবেশি দেশে একটা ঘটনা ঘটেছে। যারা মিয়ানামের ৯ জন বর্ডার পুলিশকে হত্যা করেছে, সেনাবাহিনীর ওপর আক্রমণ করেছে, তাদের কারণে এটা হচ্ছে। যারা এই ধরনের ঘটনা ঘটালো তাদের জন্যই হাজার হাজার নারী পুরুষ শিশু কষ্ট পাচ্ছে। অথচ তারা এর জন্য দায়ী না। তিনি বলেন, যারা ঘটনা ঘটিয়েছে তারা বাংলাদেশে আছে কি না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছি তাদের খুঁজে বের করতে। যখনই আমরা পাব মিয়ানমার পুলিশের হাতে দিয়ে দেবো। বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করে কেউ প্রতিবেশী রাষ্ট্রে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটাবে আমরা সেটা করতে দেবো না। এদিকে বাল্যবিবাহ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৮ বছর বয়সের আগে আদালতে অনুমতি নিয়ে বিয়ের বিষয় সংবলিত বাল্যবিবাহ আইনে ‘অত্যন্ত বাস্তব সম্মত একটা চিন্তা। যারা এটা নিয়ে বিভিন্ন কথা বলছেন তাদের আসলে এ সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই। ঢাকা শহরে বাস করে গ্রামের অবস্থা জানা যায় না। গ্রামে যার একটা উঠতি বয়সী মেয়ে আছে সে জানে। তিনি বলেন, ‘বাল্যবিবাহ আইন নিয়ে ঘাবড়াবার চিন্তিত হবার কিছু নেই। আমাদের দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিবেচনায় নিতে হবে। যারা কোনো দিন গ্রামে বাস করেনি, গ্রামের সমাজ সম্পর্কে জানে না। শুধু একবার গেলাম আর দেখলাম, কথা বললাম এটা সমাজ জানা হয় না। দিনের পর দিন গ্রামে বসবাস করলে গ্রামের বাস্তব অবস্থা গ্রামের আর্থ-সামাজিক অবস্থা সেটা উপলব্ধি করা যায়, জানা যায়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সব কিছু বিবেচনা করে এই বাল্যবিবাহ আইনটা করেছি। বাস্তবতাকে সামনে রেখেই করা হয়েছে। কিছু কিছু আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান এটা নিয়ে অনেক কথা বলছে। তিনি বলেন, আমাদের দেশে কিছু বিষয় আছে, সে বিষয়গুলো নিয়ে তারা কখনও ভাবে না। যেহেতু বাস্তবতা থেকে তারা অনেক ঊর্ধ্বে। রাজধানীতে বসবাস করে, রাজধানীর পরিবেশ তারা দেখেন। বাস্তব অর্থে গ্রামীণ অবস্থা সম্পর্কে তারা জানে না। শেখ হাসিনা বলেন, প্রত্যেক আইনেই যদি কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত অবস্থার সৃষ্টি হয়, তাহলে সেখানে কি করণীয় তার একটা সুযোগ অবশ্যই দিতে হবে। সেটা যদি না দেয়া হয় তাহলে এই সমাজের জন্য অনেক বড় একটা বিপর্যয় নেমে আসবে। তিনি বলেন, আমরা ১৮ বছর বিয়ের বয়স নির্দিষ্ট করে দিয়েছি। কিন্তু আপনারা চিন্তা করেন, একটা মেয়ে যে কোনো কারণে হোক যদি ১২/১৩ বছর বয়সে প্রেগনেন্ট হয়ে গেলো, তাকে এবর্সোন করানো গেলো না। যে শিশুটি নেবে সেই শিশুটির অবস্থানটা কোথায় হবে? তাকে সমাজ গ্রহণ করবে? তাকে কি বৈধভাবে নেবে? নেবে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ রকম যদি কোনো একটা ঘটনা ঘটে তাহলে কি হবে? যে শিশুটার জন্ম হলো তার কি হবে? যে মেয়েটা সন্তান জন্ম দিলো তার অবস্থা কি? এই ধরনের যদি কোন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে সেখানে যদি বাবা-মা এবং কোর্টের মতামত নিয়ে বিয়ে দিয়ে দেয়া হয় তাহলে মেয়েটা বেঁচে গেল। আর যে বাচ্চাটা হলো সেটা বৈধতা পেলো। এই শিশুটি একটা ভবিষ্যৎ পেলো। তিনি বলেন, ‘বিদেশে ওয়েস্টার্ন কান্ট্রিতে অনেক দেশে ১৪ বছর বিয়ের বয়স। কোথাও আছে ৯ বছর বিয়ের বয়স। সেই সব জায়গায় ইউরোপ-ইংল্যান্ড-আমেরিকায় টিনএজ মাদার এর সংখ্যা অসংখ্য। এটা একটা সামাজিক ব্যাধির মতো ছড়িয়ে গেছে। কারণ এই সমস্ত বাচ্চা মেয়েরা ১২/১৩/১৪ বছরে মা হয়ে যায়। কারণ তারা কিন্তু এবর্সোন করাতে চায় না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাচ্চাটাকে যদি লেখাপড়া করাতে হয় তাহলে ওই দেশে কিন্তু প্রশ্ন করে না বৈধ সন্তান না অবৈধ সন্তান, বাবা-মায়ের নাম কী এটা কিন্তু জিজ্ঞেস করবে না। কিন্তু আমাদের দেশে জিজ্ঞেস করবে বাপের নাম কি মায়ের নাম কি? কোথায় কি সমস্ত তথ্য দিতে হবে। বাচ্চাকে বিয়ে দিতে গেলে ছেলে হোক মেয়ে হোক, অবৈধ সন্তান বিয়ে হবে না। চাকরি দেবে না। তিনি বলেন, ওয়েস্টার্ন কান্ট্রিতে এটা কোন বিষয় না। আমাদের দেশে এটা নেই না। বাবা-মা মেয়েটাকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে ভবিষ্যতে মেয়েটাকে পতিতালয়ে যেতে হবে। আমাদের এখানে যারা বাল্যবিবাহ আইন নিয়ে কথা বলছেন, তারা কি এই বাস্তবতাটা চিন্তা করেন? তারা তো এই বাস্তবতা চিন্তা করেন না বলে এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা দুইটা এনজিও করে পয়সা কামায়। আমি যতক্ষণ সরকারে আছি আমি মনে করি এটা আমার দায়িত্ব। সমাজে সে সন্তানটাকে জায়গা করে দেয়া। বিশেষ বিধানটা আমি রেখেছি। এটা অত্যন্ত একটা বাস্তবসম্মত চিন্তা, যেটা সম্পর্কে এনাদের কোন ধারণা নেই। জনসচেতনতা সৃষ্টির চেষ্টা করছি। লিখিত প্রশ্নোত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের জনগণ যেভাবে জঙ্গিবাদ ও উগ্র সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। সেই নজির পৃথিবীতে আর দ্বিতীয়টি নেই। তাই আজ জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশ রোল মডেল হিসেবে আর্ন্তজাতিক স্বীকৃতি পাচ্ছে। মমতাজ বেগমের প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা বলেন, বর্তমান বিশ্বে জঙ্গিবাদ একটি বৈশ্বিক সমস্যা। দেশের সমৃদ্ধি ও উন্নয়নে জঙ্গিবাদ অন্যতম অন্তরায়। বর্তমান সরকার ক্ষমতার আসার পর জঙ্গিবাদ দমনে জিরো টলারেন্স নীতির ভিত্তিতে কার্যকর পদক্ষেপ ও পরিকল্পনা গ্রহণ করে জঙ্গি দমনে সারা বিশ্বে বাংলাদেশ আজ রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, জঙ্গিবাদ দমনে গোয়েন্দা সংস্থা ও আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর দক্ষ সদস্যগণের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি রাজনৈতিক সংগঠন ও আলেম সমাজ, শিক্ষক ছাত্র সমাজ, অভিভাবকবৃন্দ, বুদ্ধিজীবি, ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন সর্বস্তরের জনগণ যেভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জঙ্গিবাদ ও উগ্র সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলেছে তার নজির পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি নেই। তাই আজ আমরা গর্বের সঙ্গে বলতে পারি জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশ ‘রোল মডেল’ হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাচ্ছে।
M | T | W | T | F | S | S |
---|---|---|---|---|---|---|
1 | 2 | 3 | 4 | 5 | ||
6 | 7 | 8 | 9 | 10 | 11 | 12 |
13 | 14 | 15 | 16 | 17 | 18 | 19 |
20 | 21 | 22 | 23 | 24 | 25 | 26 |
27 | 28 | 29 | 30 | 31 |