মাহবুবা আক্তার নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার ৩৮নং পাঁচরুখী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক । গত ১৩ই নভেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নামে এক ভুয়া বদলির আদেশ করান। সেই আদেশে তাকে উত্তর যাত্রাবাড়ীর ব্রাক্ষণচিরণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পোস্টিং দেয়া হয়েছে। বদলির এই আদেশ নিয়ে যোগ দিতে যান ওই শিক্ষক। ওই সময় জেলা শিক্ষা অফিসার তার বদলির বিষয়টি সন্দেহ করেন। বিষয়টি প্রাথমিক অধিদপ্তরকে জানানোর পর ভুয়া বদলি বলে চিহ্নিত হয়। ওই শিক্ষককে আইনের হাতে সোপর্দ করার কথা বলা হয় অধিদপ্তর থেকে। পরে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়। শুধু মাহবুবা আক্তার নয়, সম্প্রতি আরো কিছু শিক্ষক এই প্রতারণা করে ঢাকা মহানগর ও সিটি করপোরেশন এলাকার স্কুলের যোগ দিতে গিয়ে ধরা পড়েছেন। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই) কর্মকর্তারা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলির আদেশ হয় শুধু জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত। আর ঢাকা মহানগর বা সিটি করপোরেশনের বদলি কেবল মন্ত্রণালয় করে। সেটিও আবার জানুযারি থেকে মার্চ পর্যন্ত। নভেম্বর মাসে বদলির কোনো নিয়ম নেই। ওই শিক্ষক যেহেতু নভেম্বর মাসে বদলির আদেশ করিয়েছেন তাই সন্দেহ হয় এবং তাকে ধরা হয়েছে। কিন্তু এটা যদি জানুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে হতো তাহলে হয়তো সম্ভব না-ও হতো। এরই প্রেক্ষিতে গত ১লা ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পলিসি ও অপারেশন) আবদুর রউফ স্বাক্ষরিত পরিপত্রে সবাইকে এই প্রতারণার বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, কোনো শিক্ষক বা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বদলির অর্ডার সংক্রান্ত প্রতারণার কোনো প্রমাণ পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক তাকে সমায়িক বহিষ্কার করতে হবে। এতে আরো বলা হয়, ইদানীং উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য যাচ্ছে যে, ভুয়া বদলি আদেশের মাধ্যমে কিছু শিক্ষক ঢাকা সিটি করপোরেশন ও এর আশপাশের উপজেলা বা থানা থেকে মহানগর বা সিটি করপোরেশন এলাকার স্কুলের যোগদানের চেষ্টা করছেন। এ ধরনের বদলির বিষয়টি সন্দেহ হলে স্বাক্ষরকারী কর্মকর্তার সঙ্গে ই-মেইল বা ফোনে কথা বলে বিষয়টি নিশ্চিত হতে হবে বলা হয়েছে পরিপত্রে। বিষয়টি নিশ্চিত করে ডিপিই পরিচালক (পলিসি ও অপারেশন) আবদুর রউফ মানবজমিনকে বলেন, একটি চক্র ইদানীং বদলি সংক্রান্ত প্রতারণা শুরু করেছে। কয়েকজন শিক্ষকও এই প্রতারণার ফাঁদে পা দিয়েছে। নভেম্বর মাসে ভুয়া বদলির অর্ডার দিয়ে স্কুলের যোগদান করতে যায়। বিষয় আমাদের হাতে ধরার পরও পরিপত্রের মাধ্যমে জেলা ও উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, কারও বিরুদ্ধে এ ধরনের প্রতারণা অভিযোগ পাওয়া মাত্র সাময়িক বহিষ্কার ও তদন্তে সাপেক্ষে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই) সূত্রে জানা গেছে, এই প্রতারণা চক্রের সঙ্গে অধিদপ্তরের এই শ্রেণির কর্মকর্তার যোগসাজশ রয়েছে। কর্মকর্তারা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি সাধারণ জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত হয়। এই তিন মাসেই বদলির কাজ শেষ করতে হয়। বদলির নীতিমালা অনুযায়ী, ঢাকা মহানগর, সিটি করপোরেশন এলাকার বদলির শুধু মন্ত্রণালয় করে থাকে। আর জেলা থেকে জেলার বদলি বিভাগীয় অফিস করে। আর জেলার মধ্যে এক উপজেলা/থানা থেকে অন্য উপজেলা/থানার বদলি ওই জেলার প্রাথমিক শিক্ষা অফিস করে থাকে। কিন্তু সব বদলিই জানুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে হয়। কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতারক চক্র ভুয়া বদলির প্রতিটি ধাপে ধাপে ভুল করেছে। যাদের বদলির অর্ডার করিয়েছে তাদের প্রত্যেকের পার্শ্ববর্তী জেলা থেকে মহানগর ও সিটি করপোরেশন এলাকায় বদলির আদেশ করিয়েছে। এছাড়া সেখানে মহাপরিচালকের স্বাক্ষরের জায়গা রাখা হলেও সেখানের মহাপরিচালকের স্বাক্ষর ছিল না। শুধু তাই নয়, বদলির অর্ডারের মহাপরিচালকের পক্ষে সহকারী পরিচালক (বিদ্যালয়-২) সুলতান মিয়ার স্বাক্ষর রয়েছে। অথচ এ ধরনের কোনো কর্মকর্তা ডিপিইতে নেই। এছাড়াও অর্ডারে যে টেলিফোন নম্বর দেয়া হয়েছে সেটিও অচল। এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আলমগীর হোসেন বলেন, মানুষ কত বোকা হলে এ ধরনের প্রতারণা করতে পারে। তিনি বলেন, এই প্রতারক চক্রটি প্রতিটি ধাপে ধাপে ভুল করেছে। কারণ ঢাকা মহানগর বা সিটি করপোরেশনের বদলির অর্ডার আমরা করি না। অথচ সেই বদলির আদেশে আমার পক্ষে একজন সহকারী পরিচালকের স্বাক্ষর নেয়া হয়েছে। বদলির অর্ডারে আমি ছাড়া কারও স্বাক্ষর থাকার কথা না। তিনি বলেন, এই প্রতারণা নতুন কিসিমের। যারাই এ ধরনের প্রতারণার সঙ্গে যুক্ত হবেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলা হয়েছে। শুধু প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর নয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এ ধরনের ভুয়া বদলির প্রতারক চক্রকে ধরছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন ডেপুটি সেত্রেুটারি সম্প্রতি এ ধরনের একটি ভুয়া বদলির বিষয় হাতে নাতে ধরছেন। সরকারি এক কলেজের শিক্ষক এক জেলা থেকে অন্য জেলার যাওয়ার জন্য এ ধরনের ভুয়া বদলির আদেশ করান। এই বদলির আদেশ দিয়ে যোগদান করতে গিয়ে ধরা পড়েন তিনি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই ভুয়া ও প্রতারণামূলক বদলির বিরুদ্ধে আগেই থেকে পরিপত্র জারি আছে। সেখানে এই ধরনের প্রতারণার প্রমাণ পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্তসহ তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতেও নির্দেশ রয়েছে।
M | T | W | T | F | S | S |
---|---|---|---|---|---|---|
1 | ||||||
2 | 3 | 4 | 5 | 6 | 7 | 8 |
9 | 10 | 11 | 12 | 13 | 14 | 15 |
16 | 17 | 18 | 19 | 20 | 21 | 22 |
23 | 24 | 25 | 26 | 27 | 28 | 29 |
30 | 31 |