চালু করার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বন্ধ করে দিয়েছে ওয়াসা কতৃপক্ষ। চট্টগ্রাম শহরে সুপেয় পানির সংকট নিরসনের লক্ষ্যে চলতি বছরের আগষ্ট মাসে পরীক্ষামুকভাবে চালু হয় চট্টগ্রাম ওয়াসার কর্ণফুলী পানি সরবারহ প্রকল্প-১। সম্প্রতি প্রকল্পটি পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করে ওয়াসা।
ওয়াসা সূত্রে জানা যায়, দুই যুগ ধরে সংস্কারবিহীন ৬০০ কিলোমিটার পানি সরবরাহ পাইপলাইনের ধারণক্ষমতা ১৫-২০ পাউন্ড পার স্কয়ার ইঞ্চি (পিএসআই)। কিন্তু নতুন চালু হওয়া পানি সরবরাহ চাপ ২৫ পিএসআই হয়। ফলে সক্ষমতার অতিরিক্ত চাপে পাইপলাইন লিকেজ হয়ে গেছে। এতে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ওয়াসার পরিশোধিত পানি ছড়িয়ে পড়ায় এ প্রকল্প থেকে পানি সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে।
পুরানো পাইপলাইনের সক্ষমতা যাচাই ছাড়াই পূর্ণাঙ্গভাবে প্রকল্প চালুর প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম ওয়াসার সুপারিনটেনডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার মাকসুদ আলম অর্থসূচককে জানান, পরীক্ষামূলকভাবে চালু করার সময় পাইপলাইনের লিকেজগুলো ধরা পড়েনি। এখন লিকেজগুলো শনাক্ত করার পর মেরামত সাপেক্ষে আবারও প্রকল্পের পানি পরিশোধন কার্যক্রম শুরু হবে।
ওয়াসা সূত্রে জানা গেছে, ২০০৬ সালে জাইকার অর্থায়নে কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প-১ এর উদ্যোগ নেয় চট্টগ্রাম ওয়াসা। ২০১০ সালের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এর কাজ শুরু হয় ২০০৯ সালে। আর প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ৯৬৩ কোটি টাকা ধরা হলেও শেষ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ৮৮১ কোটি টাকা। প্রকল্পের প্যাকেজ-১ এর আওতায় ইনটেক, দুটি সার্জ ট্যাংক, ট্রিটমেন্ট প্লান্ট, ২৪ হাজার ৮০০ ঘনমিটারের রিজার্ভার তৈরি ও ২ হাজার ৪০০ ঘনমিটারের এলিভেটেড ট্যাংক নির্মাণ করা হয়েছে।
প্রকল্পের কার্যক্রম শেষে গত আগস্ট মাস থেকে কর্ণফুলী প্রকল্পের পরীক্ষামূলক পানি সরবরাহ শুরু করে ওয়াসা। সব ধরনের যাচাই শেষে কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্পে পরিশোধন ও সরবরাহ শুরু হয় গত ২ নভেম্বর। প্রথম দিন প্রায় চার কোটি লিটার পানি সরবরাহ করা হয়। শুরুতে নগরীর আগ্রাবাদ, শুলকবহর, হালিশহর, চৌমুহনীসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় পানি দেওয়া হয়। সক্ষমতার শতভাগ পানি সরবারহ করতে গিয়ে বিপাকে পড়ে ওয়াসা। ৫ নভেম্বর ১৪ কোটি লিটারের বেশি পানি পরিশোধন করে নগরীর সব এলাকায় সরবরাহ করা হয়। তখন পাইপলাইনে দেখে দেয় সমস্যা। নগরীর আগ্রাবাদ, বাদুড়তলা, বায়েজিদ, চৌমুহনী এলাকায় পাইপলাইন লেকেজের কারণে সড়কে পানি জমে যায়। এরপরই এ প্রকল্পের পানি সরবরাহ বন্ধ দেয় ওয়াসা।
জাইকার অর্থায়নে ৪ হাজার ৪৯১ কোটি টাকার কর্ণফুলী দ্বিতীয় পানি সরবরাহ প্রকল্পের কাজ শুরু করেছে ওয়াসা। চলতি সপ্তাহে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। অন্যদিকে বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহযোগিতায় ১ হাজার ৭৮ কোটি টাকা ব্যয়ে দৈনিক ৯ কোটি লিটার মদুনাঘাট পানি সরবরাহ প্রকল্পের কাজ ২০১৫ সালের জুনে শুরু হয়েছে। ২০১৯ সালের জুন মাসে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা।
অন্যদিকে চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলায় দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কো-অপারেশন ফান্ড (ইডিসিএফ) অর্থায়নে ১ হাজার ৬১ দশমিক ২২ কোটি টাকা ব্যয়ে দৈনিক ৬ কোটি লিটার পানি সরবরাহের লক্ষ্য নিয়ে ভাণ্ডারঝুড়ি পানি সরবরাহ প্রকল্পের কাজ চলছে।
এসব প্রকল্পের বিষয়ে ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ জহুরুল হক বলেন, চট্টগ্রাম শহরের সব পাইপলাইন নতুন করে বসানো হবে। ২০২২ সালের মধ্যে নতুন পাইপলাইন বসানোর কাজ শেষ হতে পারে। এখন যেসব জায়গায় পাইপলাইনে সমস্যা দেখা দিচ্ছে সেগুলো সেকেন্ডারি পাইপলাইন সংস্কার করা হবে।