জিপিওর সীমানাপ্রাচীর লাগোয়া ফুটপাতে নির্মিত ছাউনি দুটিতে যাত্রীদের বসার বেঞ্চ নেই।চট্টগ্রাম জেনারেল পোস্ট অফিসের (জিপিও) সামনে দুটি যাত্রীছাউনি। রাখা হয়েছে কাঠের বক্স, জুতার বস্তা ও পানির ড্রাম। এ যেন ময়লা রাখার ডাস্টবিন।
একই অবস্থা নগরীর স্টেশন সড়কের বিআরটিসি মোড়ের যাত্রী ছাউনির। এই মোড়ের বাঁ পাশে পাঁচ রুটের যাত্রীবাহী বাস থামে। প্রায় সময় থাকে যাত্রীদের জটলা। কিন্তু সেই ছাউনিতে বসার কোন পরিবেশ নেই। চারপাশ নোংরা। দুপাশে ও সামনে গড়ে উঠেছে ভাসমান দোকান। এসবের যন্ত্রণায় যাত্রীরা বসেন না ছাউনিতে।
রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে দাঁড়িয়ে থাকেন সড়কের ওপরেই। গত রোববার সরেজমিনে এই চিত্র দেখা গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরীর বেশির ভাগ যাত্রী ছাউনির চিত্র প্রায় একই রকম। যাত্রীছাউনিতে বসার পরিবেশ না থাকায় সেগুলো ব্যবহারে খুব একটা আগ্রহী নন নগরবাসী।
আলাপকালে যাত্রীরা জানান, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে যাত্রী ছাউনি নির্মাণের অনুমোদন দেয়। ৫ থেকে ৩০ বছরের জন্য এসব ছাউনি ইজারা দেওয়া হয়। তবে করপোরেশন চাইলে যে কোনো সময় ইজারা বাতিল করতে পারে। শর্তানুযায়ী, ছাউনিতে যাত্রীর বসার সুব্যবস্থা ও প্রতিদিন পরিচ্ছন্ন রাখার কথা রয়েছে।
যাত্রীদের অভিযোগ, সিটি করপোরেশন অনুমোদন দিয়েই দায় সেরেছে। কোনো তদারকি নেই। অনুমোদন নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো ছাউনি নির্মাণ করে দোকান ও বিজ্ঞাপন প্রদর্শনের জন্য ভাড়া দিলেও যাত্রীর সুবিধায় তেমন কোনো উদ্যোগ নেয়নি।
বাংলাদেশ প্ল্যানার্স ইনস্টিটিউট চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের সভাপতি ও নগর পরিকল্পনাবিদ আলী আশরাফ বলেন, নগরের যেসব যাত্রীছাউনি রয়েছে তার বেশির ভাগই নোংরা ও অপরিষ্কার। দেখলেই মনে হবে কোন ডাস্টবিন। এগুলো ঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় না। গাড়িগুলোও ছাউনির সামনে না দাঁড়িয়ে যাত্রী নেওয়ার জন্য অন্য জায়গায় দাঁড়ায়।
এ জন্য যাত্রীছাউনি ব্যবহারও করেন না নগরবাসী। যাত্রীছাউনি ব্যবহার উপযোগী পরিবেশ তৈরি করা এবং বিভিন্ন সড়কের গাড়ি এসব ছাউনির সামনে দাঁড়ানোর বিষয়টি নিশ্চিত করার পরামর্শ দেন তিনি।
সিটি করপোরেশনের রাজস্ব বিভাগ সূত্র জানায়, বিগত সময়ে নানা প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন মেয়াদে ১১০টি যাত্রীছাউনি নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। রাজস্ব বিভাগের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত নগরের বিভিন্ন এলাকা ও মোড়ে ছাউনি স্থাপন করা হয়েছে ৬২টি। বাকি ৪৮টি ছাউনি নির্মাণ করেনি প্রতিষ্ঠানগুলো।
স¤প্রতি চট্টগ্রাম নগর ভবনে অনুষ্ঠিত এক সভায় সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, চট্টগ্রাম নগরে গণপরিবহন ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে মোড়গুলো থেকে এক শ গজ দূরে আধুনিক যাত্রীছাউনি নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, নগরের স্টেশন সড়কের নিউমার্কেট মোড়ের যাত্রীছাউনির অর্ধেক অংশই চলে গেছে ছয়টি দোকানের দখলে। যেটুকু অংশ আছে সেখানে ১০-১২ জন যাত্রীর বসার জায়গা রয়েছে। অথচ এ ছাউনির সামনে নগরের অন্তত পাঁচটি রুটে যাত্রীবাহী গাড়ি থামে।
এ ছাউনির সামনের ফুটপাতে দাঁড়িয়ে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলেন সিটি কলেজের ছাত্রী নুসরাত জাহান। যাত্রী ছাউনি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ তো যাত্রী ছাউনি নয়; ডাস্টবিন। ছাউনির ভেতরের অবস্থা দেখলেই তো বমি আসে। আসন রয়েছে ঠিকই। কিন্তু বসার কোনো পরিবেশ নেই।
এর পাশেই রয়েছে আরেকটি ছাউনি। তবে যাত্রীদের বসার আসনের তুলনায় দোকানের আকার অনেক বড়। আসনের নিচে কার্টনের কাগজ স্তুপ করে রাখা হয়েছে।
তবে ছাউনির ইজারাদার বুখারী আজম দাবি করেন, সিটি করপোরেশনের অনুমোদন নিয়েই দোকান দেওয়া হয়েছে। আর যাত্রীদের বসার জায়গা সব সময় পরিষ্কার করা হয়। কিন্তু নোংরা করে যাত্রীরা। আসন নিচে রাখা কাটনের কাগজও কি যাত্রীদেও জানতে চাইলে তিনি নিরবতা পালন করেন।
নগরের জিপিও থেকে আধা কিলোমিটার দূরে লালদীঘি মাঠের একপাশেই রয়েছে দুটি যাত্রীছাউনি। এর একটিতে গড়ে উঠেছে তিনটি দোকান। অন্যটিতে আছে একটি। যাত্রীছাউনির আসন ভাঙা। বাঁশ দিয়ে কোনো রকমে বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আসনের নিচে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে আবর্জনা।
নয়ন চৌধুরী নামের এক ব্যবসায়ী জানান, প্রায় ছয় মাস আগে বসার আসন নষ্ট হয়ে যায়। এরপর কেউ ঠিক করেনি। মানুষ বসার জন্য মাস দুয়েক আগে বাঁশ দিয়ে আসন তৈরি করে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে লালখান বাজার, টাইগারপাস, জামালখান ও প্রবর্তক মোড় ঘুরে দেখা যায়, অন্য স্থানের তুলনায় কিছুটা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এসব এলাকার ছাউনিগুলো। কিন্তু সেখানেও কোনো যাত্রী দেখা যায়নি।
নগরের যাত্রীছাউনির দুরবস্থার কথা স্বীকার করেছেন সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মোহাম্মদ শফিউল আলম। তিনি বলেন, বর্তমানে যে ছাউনিগুলো আছে, তা আধুনিক ও মানসম্মত নয়। তাই লোকজনও ব্যবহার করতে চান না। এগুলো ভেঙে আধুনিকায়ন করার পরিকল্পনা রয়েছে। নতুন ছাউনিতে ওয়াই-ফাই সুবিধা, খাওয়ার পানি ও নারী-পুরুষদের জন্য আলাদা শৌচাগারের ব্যবস্থা থাকবে। এ জন্য একটি কো¤পানির সঙ্গে আলোচনা চলছে।