দেশে কোটিপতি বেড়েছে ১ লাখ ১৮ হাজার ৪১৮ জন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে প্রতি বছরই কোটিপতির সংখ্যা বাড়ছে। গত ২৫ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে দ্রুতগতিতে বেড়েছে কোটিপতির সংখ্যা। সে হিসাবে প্রতি বছরে বেড়েছে সাড়ে চার হাজারের বেশি। এছাড়া আগের বছরগুলোর তুলনায় দেশে কোটিপতির সংখ্যা রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে গত ৭ বছরে। এ সময়ে গড়ে প্রতি বছর বেড়েছে ১০ হাজার ৭০০ জনেরও বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে কোটিপতির এ পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে। ১৯৭২ সালে দেশে কোটিপতি ছিলেন মাত্র ৫ জন। বর্তমানে কোটিপতি ১ লাখ ১৯ হাজার ৩৬১ জন। এদিকে অতি ধনীদের সম্পদ নিয়ে গবেষণাকারী সংস্থা যুক্তরাজ্যভিত্তিক নাইট ফ্রাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে কোটিপতি রয়েছেন প্রায় ১১ হাজার। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের ৪০ থেকে ৫০ হাজার মানুষের কাছে ৪০ শতাংশের বেশি সম্পদ কেন্দ্রীভূত হওয়ায় দেশে আয় বৈষম্য বেড়েছে। ধনী-গরিবের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে বিরাট ফারাক। তবে অনেক কোটিপতিই সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষের কল্যাণে কাজ করছেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সকল তফসিলি ব্যাংকের কাছ থেকে প্রাপ্ত হিসাবের ভিত্তিতে যে প্রতিবেদন তৈরি করে সেটাই কোটিপতির সংখ্যা নির্ধারণের নির্ভরযোগ্য ভিত্তি। এটা শুধু কাগজে-কলমে এবং ব্যাংকে গচ্ছিত আর্থিক স্থিতির ওপর ভিত্তি করে তৈরি। অন্যান্য দিক ও সম্পদের বিবেচনায় এ এই সংখ্যা আরো অনেক বেশি হবে বলে মনে করছেন ব্যাংক ও অর্থনীতি বিশ্লেষকরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশে কোটিপতির অ্যাকাউন্ট বাড়ার অর্থ আমাদের সম্পদ ক্রমেই কিছুসংখ্যক লোকের হাতে কেন্দ্রীভূত হয়ে পড়ছে। এতে ধনী-গরিব বৈষম্য বাড়ছে। তিনি বলেন, আবার উন্নয়ন যা হচ্ছে, তার বেশিরভাগই শহরকেন্দ্রিক। এ কারণে মুষ্টিমেয় কিছু লোক উন্নয়নের সুফল ভোগ করছেন। এতে নিচের দিকের মানুষ বরাবরই উন্নয়ন বঞ্চিত থাকছেন। জানা গেছে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর শুরুর ১০-১৫ বছর কোটিপতির সংখ্যা বেড়েছে ধীরগতিতে। ১৯৯০ সালের পর থেকে কোটিপতির সংখ্যা বেড়েছে দ্রুত গতিতে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ১৯৭২ সালে দেশে কোটিপতি অ্যাকাউন্টধারী ছিল মাত্র ৫ জন। ১৯৭৫ সালের ডিসেম্বর শেষে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৭ জনে। ১৯৮০ সালের ডিসেম্বরে ছিল ৯৮ জন। আলোচ্য সময়ে আমানতের পরিমাণ ছিল সামগ্রিক ব্যাংকিং খাতের মোট আমানতের ১০ শতাংশ। এরপর ১৯৯০ সালের ডিসেম্বরে কোটিপতির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৯৪৩ জনে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯৬ সালের জুনে কোটিপতির সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৫৯৪ জন। ২০০১ সালের সেপ্টেম্বর শেষে কোটিপতির সংখ্যা দাঁড়ায় ৫ হাজার ১৬২ জনে। এরপর অক্টোবর ২০০১ থেকে ডিসেম্বর ২০০৬ পর্যন্ত কোটিপতির সংখ্যা বেড়েছিল ৮ হাজার ৮৮৭ জনে। অর্থাৎ এ সময়ে কোটিপতির সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ১৪,০০০ জনে। আর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ২ বছরে অর্থাৎ ২০০৭-০৮ সালে বেড়েছিল ৫ হাজার ১১৪। এ সময়ে কোটিপতির সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ১৯ হাজারের বেশি।
ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানসহ পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০০৯ সালের মার্চে দেশে ব্যক্তিপর্যায়ে কোটিপতি অ্যাকাউন্ট ছিল ১২ হাজার ৯১৭টি। ২০১৪ সালে তা দাঁড়িয়েছে ৪০ হাজার ৬৮৭টিতে। সে হিসাবে এই ৬ বছরে দেশে ব্যক্তিপর্যায়েই কোটিপতি অ্যাকাউন্ট বৃদ্ধি পায় প্রায় ২৭ হাজার ৭৭০টি। প্রবৃদ্ধির হার প্রায় ২১৫ শতাংশ। অন্যদিকে ২০০৯ সালের মার্চে ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক মিলে ব্যাংকে কোটি টাকার ঊর্ধ্বে অ্যাকাউন্ট ছিল ১৯ হাজার ৬৩৬টি। ২০১৪ সালের ডিসেম্বর শেষে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫৪ হাজার ৭২৭টিতে। সে হিসাবে ৬ বছরে দেশে ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায় মিলে কোটিপতি অ্যাকাউন্ট বৃদ্ধি পায় প্রায় ৩৫ হাজার। প্রবৃদ্ধির হার প্রায় ১৭৮ শতাংশ।
পরিসংখ্যানে আরো দেখা গেছে, ২০০৮ সালের ডিসেম্বর শেষে দেশে মোট কোটিপতির সংখ্যা ছিল ৪৪ হাজার ৩৬৯ জন। এর মধ্যে এক কোটি টাকার ঊর্ধ্বে আমানতকারীর সংখ্যা ছিল ১৯ হাজার ১৬৩ জন এবং এক কোটি টাকার ঊর্ধ্বে ঋণ গ্রহীতার সংখ্যা ছিল ২৫ হাজার ২০৬ জন। ২০০৯ থেকে ২০১৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সাত বছরে দেশে মোট কোটিপতির সংখ্যা দাঁড়ায় ১ লাখ ১৯ হাজার ৩৬১ জনে। অর্থাৎ এই সাত বছরে কোটিপতি বেড়েছে ৭৪ হাজার ৯৯২ জন। এর মধ্যে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা ৫৯ হাজার ৭০০ জন এবং ঋণ গ্রহীতার সংখ্যা ৫৯ হাজার ৬৬১ জন।
এদিকে চলতি বছরের শুরুতে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে গত ৫ বছরে (ডিসেম্বর ২০১১-সেপ্টেম্বর ২০১৫) দেশে কোটি টাকার ব্যাংক হিসাবধারীর একটা পরিসংখ্যান তুলে ধরেছিলেন। ওই পরিসংখ্যানে কোটি টাকা আমানতকারী ও কোটি টাকা ঋণ গ্রহীতার সম্মিলিত সংখ্যা প্রকাশ করেন তিনি। সেই পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর শেষে দেশে মোট কোটিপতির সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১৪ হাজার ২৬৫ জন। সে হিসাবে ওই তিন মাসে দেশে মোট কোটিপতি বেড়েছে ৫ হাজার ৯৬ জন।
কোটিপতির সংখ্যা বৃদ্ধির চিত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০০৯ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ৫ বছরে কোটিপতির সংখ্যা বেড়েছে ৫৪ হাজার ২২২ জন। এর মধ্যে আমানতকারীর সংখ্যা বেড়েছে ৩০ হাজার ৪৭৭ জন এবং ঋণ গ্রহীতার সংখ্যা বেড়েছে ২৩ হাজার ৭৪৫ জন। অপরদিকে গত দুই বছরে কোটিপতির সংখ্যা বেড়েছে ২০ হাজার ৭৭০ জন। একক বছর হিসাবে সবচেয়ে বেশি কোটিপতি বেড়েছে ২০১০ সালে। ওই বছর কোটিপতির সংখ্যা বেড়েছে ১৩ হাজার ৮৯২ জন।
পর্যালোচনায় আরো দেখা গেছে, ২০০৮ সালে কোটি টাকা আমানতকারীর তুলনায় কোটি টাকা ঋণগ্রহীতার সংখ্যা প্রায় ৬ হাজার বেশি ছিল। ২০১২ সালে এই ব্যবধান কমে ৩ হাজারে এসে দাঁড়ায়। কিন্তু ২০১৩ সাল থেকে কোটি টাকা আমানতকারী ও কোটি টাকা ঋণ গ্রহীতার সংখ্যা প্রায় সমান সংখ্যক পর্যায়ে চলে এসেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, ২০০৮ সালের ডিসেম্বর শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতে কোটিপতিদের মোট আমানতের পরিমাণ ছিল ৭৭ হাজার ২৩৯ কোটি টাকা। এটা তখন ছিল ব্যাংকিং খাতে মোট আমানতের ৩১ শতাংশ। ২০১৩ সালের ডিসেম্বর শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতে কোটিপতিদের মোট আমানতের পরিমাণ দাঁড়ায় ২ লাখ ৪৭ হাজার ১৭৬ কোটি টাকা। এটা ব্যাংকিং খাতের মোট আমানতের ৪০.৬ শতাংশ। সর্বশেষ ২০১৫ সালের ডিসেম্বর শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতে কোটিপতিদের মোট আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ১৭ হাজার ৭২৯ কোটি টাকা। এটা ব্যাংকিং খাতের মোট আমানতের ৪০ শতাংশ।
এদিকে অতি ধনীদের সম্পদ নিয়ে গবেষণাকারী সংস্থা যুক্তরাজ্যভিত্তিক নাইট ফ্রাংক চলতি বছরের শুরুর দিকে ‘দ্য ওয়েলথ রিপোর্ট ২০১৬: দ্য গ্লোবাল পারসপেক্টিভ অন প্রাইম প্রপার্টি অ্যান্ড ওয়েলথ’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, বাংলাদেশে কোটিপতি রয়েছেন প্রায় ১১ হাজার, যাদের নিট সম্পদ ৭ কোটি ৮০ লাখ টাকার (১০ লাখ ডলার) বেশি। এছাড়া হাজার কোটি টাকার নিট সম্পদের মালিক রয়েছেন ১৫ জন। তবে স্বীকৃত কোনো বিলিয়নিয়ার বাংলাদেশে নেই। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৪ সালে বাংলাদেশে কোটিপতির যে সংখ্যা ছিল, ২০১৫ সালে তার সঙ্গে আরো ৮০০ জনের নাম যুক্ত হয়েছে। ২০১৪ সালে দেশে কোটিপতির সংখ্যা ছিল ৯ হাজার ৮০০। ২০১৫ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৬০০ জনে।
M | T | W | T | F | S | S |
---|---|---|---|---|---|---|
1 | ||||||
2 | 3 | 4 | 5 | 6 | 7 | 8 |
9 | 10 | 11 | 12 | 13 | 14 | 15 |
16 | 17 | 18 | 19 | 20 | 21 | 22 |
23 | 24 | 25 | 26 | 27 | 28 | 29 |
30 | 31 |