অনুমোদনহীন সেবা ‘গো ব্রডব্যান্ড’ চালুর দায়ে মোবাইলফোন অপারেটর গ্রামীণফোনকে ৩০ কোটি টাকা জরিমানা করেছে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি। এছাড়া এ কাজে সহযোগী দুই প্রতিষ্ঠান এডিএন টেলিকম ও অগ্নি সিস্টেমসকে যথাক্রমে ৫ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়। কমিশন সবাইকে জরিমানার অর্থ পরিশোধের দিনক্ষণ বেঁধে দিলেও জরিমানা এড়াতে আইনি পথ খুঁজছে গ্রামীণফোন। তবে অপর দুই প্রতিষ্ঠান জরিমানা দিয়েই দায় এড়িয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জরিমানার অর্থ পরিশোধের বিষয়ে জানতে চাইলে গ্রামীণফোনের এক্সটার্নাল কমিউনিকেশন বিভাগের প্রধান সৈয়দ তালাত কামাল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বিটিআরসির পাঠানো চিঠি আমরা পেয়েছি। আমরা আইনি বিষয়গুলো খতিয়ে দেখবো। এখন আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপের বৈধতা নির্ধারণের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তিনি আরও বলেন, আমরা আবারও বলতে চাই যে ‘গো ব্রডব্যান্ড’ সেবা চালুর আগে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে বৈধ অংশীদারিত্ব কাঠামোর অধীনে চালু করা হয়েছিল।
এদিকে সহযোগী অপর দুই প্রতিষ্ঠান এডিএন টেলিকম ও অগ্নি সিস্টেমস জরিমানার অর্থ (৫ লাখ টাকা করে) পরিশোধ করেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
এর আগে কমিশনের চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছিলেন, অনুমোদনহীনভাবে গ্রামীণফোনের ‘গো ব্রডব্যান্ড’ সেবা চালু এবং এই বিষয়ে অভিযোগ আসা এবং তদন্তে তা প্রমাণিত হওয়ায় অপারেটরটিকে জরিমানা করা হচ্ছে। জানা গেছে, বিটিআরসির সর্বশেষ কমিশন বৈঠকে গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে জরিমানার সিদ্ধান্ত হয় এবং এই সেবার পার্টনার প্রতিষ্ঠান এডিএন টেলিকম ও অগ্নি সিস্টেমসকে সতর্ক করে দেওয়া হবে অল্প টাকা জরিমানা করে।
প্রসঙ্গত, বিটিআরসির অনুমোদন না নিয়েই গ্রামীণফোন চালু করে ব্রডব্যান্ডভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা ‘গো’। এতে গ্রামীণফোনের সঙ্গী হয় এডিএন টেলিকম ও অগ্নি সিস্টেমস। গ্রামীণফোন এই সেবা দিচ্ছিল সোনালী ব্যাংককে। আইএসপিএবি অভিযোগ জানালে আইন না মেনে সোনালী ব্যাংককে এই ধরনের সেবা দেওয়ায় গ্রামীণফোনকে কেন আর্থিক জরিমানা করা হবে না, সে বিষয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়।
গত ১৩ জুন বিটিআরসির কমিশন বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, সোনালী ব্যাংক গ্রামীণফোনের কাছ থেকে ‘গো ব্রডব্যান্ড’ সেবা নিতে পারবে না। সোনালী ব্যাংকের ৫১১টি শাখায় অনলাইন ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালিত হতো গো ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহার করে। গ্রামীণফোনের এই অনিয়মের বিরুদ্ধে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি বিটিআরসিতে অভিযোগ জানায় ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি)। গত ৩০ মার্চ বিটিআরসি এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত সময় দেয় গ্রামীণফোনকে। কমিশন ওই চিঠিতে গ্রামীণফোনের কাছে ৬টি বিষয়ে ব্যাখ্যা জানতে চায়।
এর আগে ২০১২ সালে মোবাইলফোন অপারেটর বাংলালিংক অনুমোদনহীন একটি প্যাকেজ চালু করলে অপারেটরটির বিরুদ্ধে জরিমানা করে বিটিআরসি। অপারেটরটিকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয় এবং গ্রাহকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া ৯২ কোটি ৩৩ লাখ ৫৫ হাজার ৫২৪ ফেরতদানের নির্দেশ দেয়। চার বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও বাংলালিংক গ্রাহকদের টাকা ফিরিয়ে দেয়নি। পরিশোধ করেনি জরিমানা। বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে অপারেটরটি বারবার সময়ক্ষেপণ করেছে। যদিও ২০১৫ সালে বিটিআরসি দায়মুক্তি দেয় বাংলালিংককে। কমিশনের ১৭০তম বৈঠকে অপারেটরটিকে দায়মুক্তি দেওয়া হয়।
মোবাইলফোন অপারেটরদের বিভিন্ন ধরনের অনুমোদনহীন কাজ ও নিষেধাজ্ঞা থাকা কাজের বিপরীতে মোটা অংকের জরিমানার বিধান রয়েছে। কিন্তু তা বেশিরভাগ সময়ই কার্যকর থাকে না। সম্প্রতি বায়োমেট্রিক (আঙুলের ছাপ) পদ্ধতি সিম নিবন্ধনের সময় বিটিআরসি থেকে বলা হয়েছে, কোনও মোবাইলফোন অপারেটর আঙুলের ছাপ নিয়ে জালিয়াতি করলে সেই অপারেটরের বিরুদ্ধে ৩০০ কোটি টাকা জরিমানা করা হবে। যদিও সিম জালিয়াতির একাধিক ঘটনা ঘটেছে কিন্তু সেসব কী প্রক্রিয়ায় ঘটেছে বর্তমানে সেসব তদন্তাধীন রয়েছে।
বছর চারেক আগে কমিশন থেকেই ঘোষণা দেওয়া হয়, অবৈধ ভিওআইপিতে (ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রটোকল) জড়িত থাকলে উদ্ধার হওয়ার সিমের বিপরীতে সংশ্লিষ্ট অপারেটরদের সিম প্রতি ৫০ ডলার জরিমানা করা হবে। এছাড়া বর্তমানে বাজারে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধন ছাড়া চালু সিম পাওয়া গেলেও প্রতিটির জন্য সংশ্লিষ্ট অপারেটরকে ৫০ ডলার করে জরিমানার বিধান করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অপারেটরগুলোর অনিয়মের ফলে কমিশন ঠিকই জরিমানা করে কিন্তু সংশ্লিষ্ট অপারেটররা উচ্চ আদালতে গিয়ে আইনের আশ্রয় নিলে ঝুলে যায় জরিমানা আদায়ের প্রক্রিয়া। আদালতে নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জরিমানা আদায়ের কোনও সুরাহা হয় না।