১৬ বছর হাজতবাসের পর কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন শিপন। মঙ্গলবার বিকেলে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ থেকে তিনি মুক্তি পান। ঢাকার সূত্রাপুরে দুই মহল্লার বাসিন্দাদের মধ্যে সংঘর্ষে এক ব্যক্তি নিহত হওয়ার মামলায় তিনি হাজতবাস ছিলেন।
কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২-এর সিনিয়র জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বনিক বলেন, ‘মঙ্গলবার দুপুরে শিপনের জামিন সংক্রান্ত কাগজপত্র কারাগারে এসে পৌঁছে। পরে তা যাচাই-বাছাই শেষে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।’
সম্প্রতি একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেল শিপনকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রচার করে। ওই প্রতিবেদন গত ৩০ অক্টোবর হাইকোর্টের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী। আবেদনটি গ্রহণ করে ৮ নভেম্বর শিপনকে আদালতে হাজির করানোসহ তার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলার নথি তলব করেন আদালত।
নির্দেশ অনুযায়ী কারা কর্তৃপক্ষ ৮ নভেম্বর শিপনকে আদালতে হাজির করে। এ সময় আদালত শিপনকে কাঠগড়ায় ডেকে তার পরিচয় জানতে চান। দীর্ঘ ১৭ বছর হাজতবাস থাকার বিষয়েও খোঁজ নেন।
পরে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি জে বি এম হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ শিপনকে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জামিন দেন। একই সঙ্গে আগামী ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে মামলাটি নিষ্পত্তি করতে ঢাকার অতিরিক্ত জেলা জজকে নির্দেশ দেন।
জানা গেছে, ১৯৯৪ সালে পুরান ঢাকার সূত্রাপুরে দুই মহল্লার মধ্যে সংঘর্ষে মাহতাব নামে এক ব্যক্তি খুন হন। এ খুনের ঘটনায় জাবেদ বাদী হয়ে সূত্রাপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় দুই নম্বর আসামি করা হয় শিপনকে। এজাহারে তার বাবার নাম ছিলো অজ্ঞাত। পরে ১৯৯৫ সালে দেওয়া অভিযোগপত্রে বাবার নাম উল্লেখ করা হয় রফিক। ঠিকানা উল্লেখ করা হয় ৫৯, গোয়ালঘটা লেন, সূত্রাপুর, ঢাকা।
পরবর্তী সময়ে ২০০০ সালের ৭ নভেম্বর শিপনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর থেকে তিনি কাশিমপুর কারাগারে বন্দি ছিলেন। চার্জশিট দাখিলের ৫ বছর পর ২০০১ সালে মামলাটি বিচারের জন্য প্রস্তুত হয়। বর্তমানে ঢাকার অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতে মামলাটি বিচারাধীন। অভিযোগপত্র দাখিলের পর এ পর্যন্ত দু’জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। এই মামলার মোট সাক্ষী ১২ জন।
গত বছরের ৭ নভেম্বর থেকে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২-এ বন্দি ছিলেন শিপন। তবে এই মামলার কোনও অগ্রগতি ছিল না। প্রায় প্রতি মাসেই নির্ধারিত তারিখে শিপনকে আদালতে হাজির করা হলেও হাজির হতো না কোনও সাক্ষী। তাই শেষ হচ্ছিল না মামলার বিচারকাজও।