রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের বিভিন্ন এলাকায় হিন্দু ও সাঁওতালদের মতো সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনার মধ্যেই সব সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করার তাগিদ দিয়েছেন। তিনি বলেন, এই দেশে সবাই সমানাধিকার নিয়ে বসবাস করবে। এটা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব।
শনিবার বিকালে ভিডিও কনফারেন্সে রাজশাহী বিভাগের জনগণের সঙ্গে কথা বলার সময় প্রধানমন্ত্রী এই তাগিদ দেন।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যটি এমন সময় এলো যখন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দুদের ওপর দুর্বৃত্তের হামলা ও গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতালদের উচ্ছেদ অভিযানে বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া এবং দুই জনকে হত্যার ঘটনা ঘটলো।
এই দুটি ঘটনায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা বিরাজ করছে। নানা কর্মসূচিতে তারা নিজেদের এই ক্ষোভ তুলে ধরছেন। শুক্রবার রাজধানীতে শাহবাগ মোড় ঘেরাও করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী ছায়েদুল হকের পদত্যাগ, সংখ্যালঘুদের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় গঠন, স্বাধীন সংখ্যালঘু কমিশন গঠনের দাবি জানান।
পরদিন ভিডিও কনফারেন্সে দেওয়া বক্তব্য প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা দিতে হবে। এটা আমাদের সকলের দায়িত্ব। বাংলাদেশ একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জুমার নামাজ ও অন্যান্য নামাজের আগে খুতবায় জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে নবী করিম (সা.) কী বলে গেছেন, আমাদের কোরআন শরিফে কী আছে, আসলাম ধর্মে কী বলে এই বিষয়টা মানুষকে আরও ভালোভাবে জানাতে হবে। যেন কেউ বিপথে না যায়, এই ধরনের আত্মঘাতী পথে যেন কেউ পা না বাড়ায়।’
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় সবার সহযোগিতা কামনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অভিভাবক, শিক্ষক, কর্মজীবী, সাধারণ জনগণ, সবাইকে আহ্বান জানাবো, সবার উদ্যোগেই আমরা বাংলাদেশকে একটি শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে পারবো।’
নিজের ক্ষেতে নিজেরা খাটবো, নিজেরা শ্রম দেবো। লেখাপড়া শিখলেই যে ক্ষেতে কাজ করা যাবে না, এটা কিন্তু না। আজকে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ হচ্ছে। সেখানেও ট্রেনিং লাগে। সেখানেও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী লাগবে। আর নিজের কাজ নিজে করাতে কোনো লজ্জা নেই। প্রত্যেকের কাজ নিজেকেই করতে হবে।
বৃক্ষরোপনের আহ্বান
ভিডিও কনফারেন্সে ব্যাপকভাবে বৃক্ষরোপনের তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বৃক্ষরোপনের উদ্যোগ নিয়েছি। আমাদের দলের পক্ষ থেকে আষাঢ় মাস থেকে শুরু করি গাছ লাগানোর কর্মসূচি। বিএনপি-জামায়াত জোট আন্দোলনের নামে রাস্তার পাশের হাজার হাজার গাছ কেটে ফেলেছে। এগুলো পরিবেশ রক্ষা করতো। আমাদের এখন সবার মিলে ব্যাপকভাবে বৃক্ষরোপন করে পরিবেশ রক্ষা করবো।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটা গাছ লাগালে কয়েক বছরের মধ্যে সেই গাছ কাটলে টাকা পাবেন, চারা লাগাতে পারবেন। আর্থিক লাভ হবে। এভাবে সবাই মিলে স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রীরা যদি নিজেরা গাছ লাগিয়ে আসে আর সেই গাছ যদি ফল দেয় তারপর গিয়ে সেই ফল খেলে বা দেখলে খুবই ভালো লাগে।’
নিজে স্কুলে পড়ার সময় গাছ লাগানোর কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি যে স্কুলে পড়তাম, সেই আজিমপুর গার্লস স্কুল, আমাদের ব্যাচের সব বন্ধুদের নিয়ে ওই স্কুলে গাছ লাগিয়েছি। বড়ই গাছ, আম গাছ আমরা লাগিয়েছিলাম। এভাবে প্রত্যেকে নিজ নিজ এলাকায় গাছ লাগালে পরিবেশ ভালো হবে, অর্থকরী ফসলও হবে ।’
বাড়িতে বাগান করার তাগিদ
শহরে যারা বসবাস করেন তাদের বাড়িতে জমি থাকলে বাগান করার পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী। আর যাদের এই জমি নেই, তাদেরকে ছাদে আপনারা বাগান করার পরামর্শ দেন তিনি। সেটাও না পারলে ঘরের ভেতর টবে গাছ লাগানোর কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তরিতরকারি, ফলমুলম অন্তত একটা টমেটো গাছ লাগাতে পারেন। নিজের হাতে উৎপাদন করা বা নিজের হাতে লাগানো গাছ থেকে একটা ফল বা একটা তরকারি পেরে নেয়া-এই বিষয়টাতে একটা অন্য রকম আনন্দ আছে। নিজের সৃষ্টির আনন্দ। সেই আনন্দটাও আপনারা উপভোগ করেন, সেটা চাই।’
জলাশয় রক্ষার তাগিদ
উন্নয়নের নামে জলাশয় ভরাট করা চলবে না বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘আমাদের দেশের উন্নতি হোক। কিন্তু উন্নয়নের নামে খাল-পুকুর ভড়াট করা চলবে না। ইতিমধ্যে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি, যত বাংলাদেশের যত পুকুর আছে, সেগুলো সংস্কার করা, খালগুলো সংস্কার করা এবং সেখানে মিঠা পানির মাছের যেন উৎপাদন বাড়ে, আমরা সে উদ্যোগ নিয়েছি।‘