আদালত ইয়াবা চালানকে কেন্দ্র করে দিনাজপুরের মঞ্জুরুল ইসলামকে নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগে যুবলীগ নেতা গোলাম মির্জা মামুনের ৩ দিনের রিমান্ডের মঞ্জুর করেছেন । এছাড়া ২ যুবলীগকর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। আগামী ১০ নভেম্বর রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য করেছেন আদালাত। মঙ্গলবার দুপুরে দিনাজপুরের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক এফএম আহসানুল হক এই আদেশ দেন।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার যুবলীগ নেতা গোলাম মির্জা মামুনের ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা শ্যামল কুমার বর্মন।
এদিকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মামলার গ্রেফতারকৃত অন্য ২ আসামি যুবলীগের কর্মী মোস্তফা হাসান মিথুন ও সুপারি গ্রুপের শামীমকে আদালতে সোপর্দ করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। আদালত ১০ নভেম্বর রিমান্ড শুনানির জন্য দিন ধার্য করে ২ আসামিকে জেল হাজতে প্রেরণের আদেশ দেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই শ্যামল কুমার বর্মন বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, অভিযুক্ত যুবলীগের গোলাম মির্জা মামুনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। এই হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত অন্য আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।
উল্লেখ্য, অক্টোবরে তৃতীয় সপ্তাহে সদর উপজেলার মহতুল্লাহপুর গাজার মারি গ্রামের আব্দুল কাদেরের ছেলে মঞ্জুরুল ইসলাম (১৮) খোদমাধবপুর গ্রামের মির্জা মামুনের ট্রাকের হেলপার হিসেবে চট্টগ্রামে যায়। ফেরার সময় রাস্তায় ট্রাকের চালক রেজাউল নেমে যায়। ট্রাকটি নিয়ে মঞ্জুরুল ইসলাম ফিরে আসে। এরপরে ২৫ অক্টোবর মঙ্গলবার রাতে মঞ্জুরুল ইসলাম বাসায় ফেরেনি। ২৬ অক্টোবর মোবাইল ফোনে জানতে পারে মঞ্জুরুল ইসলাম দিনাজপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি। সেখানে গিয়ে তারা মঞ্জুরুল ইসলামের কাছে জানতে পারেন ট্রাকের মালিক মির্জা মামুনের নেতৃত্বে স্বেছাসেবকলীগ জেলা কমিটির নেতা সিরাজুল সালেকিন রানা, যুবলীগের তরিকুলসহ কয়েকজন মিলে গত ২৫ অক্টোবর মঙ্গলবার রাতে তাকে তুলে নিয়ে যায়। তার কাছে জানতে চাওয়া হয় ট্রাকে করে যে ইয়াবা চালান আসছিল, তা কোথায়। বিষয়টি মঞ্জুরুল অবগত নয় জানালে তাকে উপশহর ১ নং ব্লকের বেগম তৈয়বা বেগম রেডক্রিসেন্ট ব্লাড ব্যাংকে আটকে রেখে সারারাত ধরে নির্যাতন চালানো হয়। পরিবারের অভিযোগ, তাকে গরম পানির বোতল ও বৈদ্যুতিক তার দিয়ে পেটানো হয়। এতে সে মুখ না খুললে নির্যাতন করে প্লাস দিয়ে মঞ্জুরুল ইসলামের হাতের নখ তুলে ফেলা হয়, দুহাতে ব্লেড দিয়ে চিরে সেখানে লবণ ও মরিচের গুঁড়া লাগিয়ে দেওয়া হয়। এরপর তাকে দেওয়া হয় বৈদ্যুতিক শক। পরদিন সকালে গুরুতর আহতাবস্থায় মঞ্জুরুলকে সেখান থেকে উদ্ধার করে র‌্যাব সদস্যরা দিনাজপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। নির্যাতনের শিকার মঞ্জুরুলের মাংস পচে গা থেকে দুর্গন্ধ বের হচ্ছিল। মাঝে মাঝেই রক্ত বমি হতো। হাসপাতালে ৪ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর বাড়িতে গেলে মঙ্গলবার সকালে তার মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় নিহতের বড় ভাই মতিউর রহমান বাদী হয়ে কোতোয়ালী থানায় দ. বি. ৩০২/৩৪ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় তিনি স্বেছাসেবকলীগ নেতা সিরাজুল সালেকিন রানা ও যুবলীগের গোলাম মির্জা মামুন, তারিকুল ইসলামসহ ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীসহ ১১ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ১৫ জনকে আসামি করেন।

Share Now
January 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031