৪৫ তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে কে যুক্তরাষ্ট্রের হাল ধরছেন তা জানা যাবে শিগগিরই।আর অল্প সময়ের অপেক্ষা।তার আগেই সমাপ্ত করতে হবে এক জটিল প্রক্রিয়া। যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাতে ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পর শুরু হবে ভোট গণণা। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে আনুষ্ঠানিক ভোটগ্রহণ ও ভোট গণনা পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে এক জটিল প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া শেষেই ডেমোক্র্যাটদের পক্ষে হিলারি ক্লিনটন এবং রিপাবলিকানদের পক্ষে ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজ নিজ দলের প্রার্থিতা পেয়েছেন। এবার ভোট গণনা ও ফলাফল ঘোষণা। সেই ক্ষেত্রেও পদ্ধতিটা খুবই জটিল। এক্ষেত্রে কোন প্রার্থী কত বেশি ভোট পেলেন তার চেয়ে জরুরি হলো কে কতটা ইলেক্টোরাল ভোট পেলেন তা। দুটি ছাড়া অন্যে সব অঙ্গরাজ্যে যে দল বেশি ভোট পায়, রাজ্যেটর জন্য বরাদ্দ করা ইলেক্টোরাল ভোট সে দলের ভাগে যায়। তবে মেইন ও নেবরাস্কায় মোট ভোটের সংখ্যানুপাতিক হারে ইলেকটোরাল ভোট ভাগ করা হয়।
ইলেক্টোরাল কলেজ কী?
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য ইলেক্টোরাল কলেজ আনুষ্ঠানিক কর্তৃপক্ষ হিসেবে ভূমিকা পালন করে। ৫৩৮ জন ইলেক্টরের সমন্বয়ে ইলেক্টোরাল কলেজ গঠিত। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে হলে প্রার্থীকে এর মধ্যে অন্তত ২৭০টি ইলেক্টোরাল ভোট পেতে হয়। প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের কংগ্রেসনাল প্রতিনিধিদের সংখ্যার ভিত্তিতে ইলেক্টর নিযুক্ত করা হয়। ডিস্ট্রিক্ট অব কলম্বিয়ায় কোনও কংগ্রেস প্রতিনিধি না থাকায় সেখানে তিনজন ইলেক্টর এমনি নিযুক্ত করা হয়। অর্থাৎ সর্বমোট ৪৩৫ জন হাউজ রিপ্রেজেন্টিটিভ, ১০০ জন সিনেটর ও ডিস্ট্রিক্ট অব কলম্বিয়ার তিন ইলেক্টরসহ ৫৩৮ জন ইলেক্টর হিসেব করা হয়।
এক এক স্টেটে ইলেক্টরের সংখ্যা এক এক রকম। নির্বাচনের দিন মার্কিনিরা যখন ভোট দেন তখন তারা মূলত প্রার্থীদের বাছাইকৃত ইলেক্টরদেরকে ভোট দেন। দুটি ছাড়া বাকি ৪৮টি অঙ্গরাজ্যে ‘উইনার-টেক-অল’ সিস্টেম চালু রয়েছে। এর আওতায় জয়ী প্রার্থীকে ওই অঙ্গরাজ্যের সব ইলেক্টর দিয়ে দেওয়া হয়। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ইলেক্টর রয়েছে ক্যালিফোর্নিয়ায়। এখানকার ইলেক্টরের সংখ্যা ৫৫। এরা সাধারণত দলের কর্মী, সদস্য বা দলের প্রতি অনুগত লোকজন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের অংশ হিসেবে ক্যালিফোর্নিয়ার মানুষ যখন ভোট দেন তখন তারা মূলত তাদের পছন্দের প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে নয় বরং তার নিযুক্ত ইলেক্টরদের ভোট দেন। এখন ক্যালিফোর্নিয়াতে যে জিতবে সে প্রার্থী ৫৫ জন ইলেক্টরই জয় করে নেবেন। আর তার প্রতিদ্বন্দ্বী কোনও ইলেক্টর পাবেন না। এভাবে গোটা যুক্তরাষ্ট্রে থাকা ৫৩৮ পয়েন্টের ভেতর কেউ যদি অর্ধেকের চেয়ে এক বেশি অর্থাৎ অন্তত ২৭০ পয়েন্ট পায়, তাহলে সে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হয়ে যাবে।
৫০টি অঙ্গরাজ্য, ওয়াশিংটন ডিসি ও ডিস্ট্রিক্ট অব কলম্বিয়ার ইলেক্টরাল ভোটের সংখ্যা
ওয়াশিংটন ডিসিতে ১২টি, মন্টানায় ৩টি, নর্থ ডাকোটায় ৩টি, মিনেসোটায় ১০টি, উইসকনসিনে ১০টি, মিশিগানে ১৬টি, নিউ ইয়র্ক ২৯টি, ভারমন্টে ৩টি, নিউ হ্যাম্পশায়ারে ৪টি, মেইনে ৪টি, ম্যাসাচুসেটসে ১১টি, রোড আইল্যান্ডে ৪টি, কানেকটিকাটে ৭টি, নিউ জার্সিতে ১৪টি, ডেলাওয়ারে ৩টি, ম্যারিল্যান্ডে ১০টি, ডিস্ট্রিক্ট অব কলাম্বিয়াতে ৩টি ইলেক্টরাল ভোট রয়েছে।
এছাড়া ওরিগনে ৭, ইডাহোতে ৪টি, ওয়াইওমিং এ ৩টি, সাউথ ডাকোটায় ৩টি, নেবরাস্কায় ৫টি, আইওয়াতে ৬টি, ইলিনয়ে ২০টি, ইন্ডিয়ানায় ১১টি, ওহাইওতে ১৮টি, পেনসিলভানিয়ায় ২০টি, নেভাদায় ৬টি, ইউটায় ৬টি, কলোরাডোতে ৯টি, কানসাসে ৬টি, মিসৌরিতে ১০টি, কেন্টাকিতে ৮টি, ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ায় ৫টি, ভার্জিনিয়াতে ১৩টি, ক্যালিফোর্নিয়ায় ৫৫টি, আরিজোনায় ১১টি, নিউ মেক্সিকোতে ৫টি, টেক্সাসে ৩৮টি, ওকলাহোমায় ৭টি, আরকানসাসে ৬টি, টেনেসিতে ১১টি, নর্থ ক্যারোলিনায় ১৫টি, লুইজিয়ানায় ৮টি, মিসিসিপিতে ৬টি, আলাবামায় ৯টি, জর্জিয়ায় ১৬টি, সাউথ ক্যারোলিনায় ৯টি, ফ্লোরিডায় ২৯টি, হাওয়াইতে ৪টি এবং আলাস্কায় ৩টি ইলেক্টরাল ভোট রয়েছে।
এক এক অঙ্গরাজ্যের ইলেক্টরের সংখ্যা একেকরকম কেন?
সাধারণত জনসংখ্যার ওপর ইলেক্টরের সংখ্যা নির্ভর করে। অবশ্য নিয়ম হল, প্রতিটি অঙ্গরাজ্যে জনসংখ্যা যেমনই হোক, নুন্যতম তিন পয়েন্ট দিতেই হবে। এরপর জনসংখ্যা অনুসারে এই সংখ্যা নির্ধারণ করা হয় প্রতি ১০ বছর পরপর। যেমন ২০০৪ সালে ফ্লোরিডার ছিলো ২৭ ইলেকট্রোরাল কলেজ। এখন ২৯ হয়েছে। অর্থাৎ ফ্লোরিডাতে জনসংখ্যা বেড়ে গেছে। ছোট অঙ্গরাজ্যগুলো যাতে নির্বাচনে গুরুত্ব না হারায় সে বিষয়টিকে এক্ষেত্রে মাথায় রাখা হয়। যেমন মন্টানা অঙ্গরাজ্যের জনসংখ্যা ১০ লাখ। আবার ওয়াইওমিং অঙ্গরাজ্যের জনসংখ্যা ৫ লাখ ৮৪ হাজার। অথচ দুইটা রাজ্যেরই ইলেক্টোরাল ভোট সমান। তিনটা করে।
অর্থাৎ ১০ লাখ জনসংখ্যার মন্টানাতে জিতে যে সংখ্যক ইলেক্টোরাল ভোট পাওয়া যাবে তার চেয়ে অর্ধেক জনসংখ্যার রাজ্য ওয়াইমিং-এ জিতেও ৩ পয়েন্ট পাওয়া যাবে।
আনুষ্ঠানিক ফলাফল
১৯ ডিসেম্বর ইলেক্টররা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করার জন্য মিলিত হবেন। ইলেক্টর যদি প্রতিশ্রুতি মোতাবেক কোনও প্রার্থীকে ভোট না দিয়ে অন্য প্রার্থীর জন্য ভোট দেন তবে তাকে ‘বিশ্বাসহীন ইলেক্টর’ বলে মনে করা হয়। তবে ইলেক্টররা সাধারণত এমনটা করেন না। ২০১৭ সালের ৬ জানুয়ারি ইলেক্টরের ভোটগুলো গণনা করা হবে এবং সিনেট প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ফলাফল ঘোষণা করবেন।
পপুলার ভোট তথা আমজনতার ভোটে হেরে যাওয়ার পরও ইলেক্টোরাল ভোটে জিতে প্রেসিডেন্ট হওয়ার সংখ্যাটা হাতে গোনা। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এ ধরনের নির্বাচনের সংখ্যা চারটি। সর্বশেষ ২০০০ সালে আল গোরের কাছে পপুলার ভোটে হেরে যাওয়ার পরও ইলেক্টরাল কলেজ ও সুপ্রিম কোর্টের রায়ের কল্যাণে নির্বাচনে জিতে যান জর্জ ডব্লিউ বুশ।
যেসব নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয় এবং যখন কোনও প্রার্থী পপুলার ভোটে না জিতেও প্রেসিডেন্ট হিসেবে জয় পান, তখনই ইলেক্টোরাল কলেজ সিস্টেমে পরিবর্তন আনার জন্য আহ্বান জানানো হয়। একটি আনুপাতিক ব্যবস্থা চালুর জন্য কয়েকটি অঙ্গরাজ্য কিছু ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তাব করলেও এখন পর্যন্ত তা কার্যকর হয়নি। সূত্র: দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট, বিবিসি, আল জাজিরা, উইকিপিডিয়া