উপজেলার সর্ব দক্ষিণের এই ইউনিয়নের শিক্ষা কার্যক্রমে এখনো বৈষম্য ঘিরে রেখেছে। সিলেটের শহরতলির অজপাড়াগাঁ গোয়াইনঘাটের ৬নং ফতেহপুর ইউনিয়ন।অন্যস্থানে সার্বিক শিক্ষার হার দ্রুত এগুলোও এখানে চলছে অনেকটা ঢিমেতালে। এখনো অনেক গ্রামে রয়েছে শিক্ষাবঞ্চিতদের সংখ্যা। আবার শিক্ষার আলো দ্যুতি ছড়ালেও অনেক বিদ্যাপীঠ রয়েছে সরকারি স্বীকৃতির বাইরে। রাজনৈতিক নেতা, সুশীলদের মাধ্যমে স্থানীয় এমপি, সরকারের শিক্ষামন্ত্রীদের নজরে ফলাও করে তুলে না ধরায় শান্তিপ্রিয় ফতেহপুর অঞ্চলের মানুষের শিক্ষার মতো মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায়ও চলছে ধীরগতির পদচারণা। সরকারের নজরে না আসা ফতেহপুরে এমন একটি অবহেলিত বিদ্যাপীঠ চোখে পড়লো বৃহস্পতিবার। সরকারি স্বীকৃতিবঞ্চিত সেই বিদ্যাপীঠটির নাম লামা ফতেহপুর বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বৃহস্পতিবার বৈরী আবহাওয়া গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি, কর্দমাক্ত মেঠোপথ মাড়িয়ে সরজমিন পরিদর্শনকালে জানা যায় এ বিদ্যাপীঠের সাফল্যগাথা, সমস্যাসহ নানা জটিলতার কাহিনী। বর্তমানে অধ্যয়নরত ১৫০ জন শিক্ষার্থীদের কষ্ট, দুর্ভোগ আর বঞ্চনার যেন শেষ নেই। সরকারি স্বীকৃতি নেই, আসবাবপত্র সংকট নানা জড়তা ঘিরে থাকায় বিঘ্নিত হচ্ছে বিদ্যলটির সার্বিক শিক্ষাকার্যক্রম। প্রকল্প সমাপ্ত হওয়ায় ২০১৩ সালে এনজিও সংস্থা এফআইভিডিভি উক্ত বিদ্যাপীঠটি থেকে তাদের কার্যক্রম গুটিয়ে স্থানীয় সচেতনদের হস্তান্তর করে চলে যাওয়ার পর থেকেই স্থানীয় এলাকাবাসী বিদ্যালয়টি সরকারিকরণ করার জোর দাবি চালিয়ে আসছেন। সরজমিন জানা যায় বিদ্যালয়টির পূর্ব দিকে ফতেহপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রায় ২ কিলোমিটার, পশ্চিমে নয়াগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ২, উত্তরে লংপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৩ এবং দক্ষিণে বানিগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দূরত্বও প্রায় ২ কিলোমিটিার হওয়ায় শিক্ষার্থীরা সরকারি বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত রয়েছে। তাছাড়া গ্রাম্য কর্দমাক্ত সড়কে বর্ষা মৌসুমে শিক্ষার্থীদের চলাচল সমস্যা থাকায় শিশু ঝরে পড়ার সমস্যাও প্রতীয়মান রয়েছে এখানে। শিক্ষিকা লুবনা আক্তার জানান, ব্রেঞ্চ, চেয়ার, টেবিলসহ আসবাবপত্র সমস্যায় শিক্ষার্থীদের গাদাগাদি করে ক্লাসের পাঠ্যসূচি চালিয়ে নিতে হয়। শিক্ষক জসিমউদ্দিন জানান, আমাদের এ বিদ্যাপীঠটিই আশপাশের কয়েকটি গ্রামের সবচেয়ে কাছের প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সরকারিকরণ স্বীকৃতি না থাকায় বিদ্যালয়টির সংকট ক্রমশই প্রকট আকার ধারণ করছে। অপর শিক্ষক রিয়াজউদ্দিন বাবুল জানান, আশপাশের কয়েক কিলোমিটারে কোনো সরকারি বিদ্যালয় নেই তাই এখানকার গ্রামবাসীর একমাত্র ভরসা এই বিদ্যালয়টি। শত কষ্ট, বঞ্চনা উপেক্ষা করেও চলছে এ বিদ্যালয়টির শিক্ষাকার্যক্রম। প্রতিষ্ঠার পর থেকে মাত্র কবছরেই এলাকায় আলোর দ্যুতি ছড়াচ্ছে বিদ্যাপীঠটি। ২০১৩ সালে উপজেলা শিক্ষা ফাউন্ডেশন মেধাবৃত্তিতে অংশগ্রহণ করে ২টি ট্যালেন্টপুলসহ ৫টি বৃত্তি পায় এখানকার কোমলমতি মেধাবী শিক্ষার্থীরা। ২০১৪ ও ২০১৫ সালেও উপজেলা শিক্ষা ফাউন্ডেশন মেধাবৃত্তিতে অংশ নিয়ে ১টি করে বৃত্তি পায় এ বিদ্যাপীঠের শিক্ষার্থীরা। ২০১৪ সালের শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় বিদ্যালয়টি ২টি এ প্লাসসহ ইউনিয়নের মধ্যে শ্রেষ্ঠ স্থান অর্জন করেছে। বর্তমানেও সফলতার সেই ধারাবাহিকতা এখনো অব্যাহত রয়েছে। স্থানীয় সংসদ সদস্যেদের সঙ্গে যোগাযোগ করে আমরা আবারো তার সহযোগিতা ও পরামর্শে পদক্ষেপ নিচ্ছি। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা জমির উদ্দিন জানান, আওয়ামী লীগ সরকার মানুষের মৌলিক অধিকার আদায়ে সব সময় আন্তরিকভাবে কাজ করে আসছে। আশা করা যায় আমাদের স্থানীয় সংসদ সদস্য ইমরান আহমদের মাধ্যমে এ বিদ্যালয়টি অচিরেই সরকারিকরণসহ বিদ্যমান সকল সমস্যা সমাধান হবে। ৬নং ফতেহপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আমিনুর রশিদ চৌধুরী জানান, বিদ্যালয়টির সরকারিকরণসহ এব্যাপারে যত সহযোগিতা লাগে আমি বিদ্যালয়টির পাশে আছি, আমার তরফে সম্ভব সব ধরনের সহায়তা প্রদান করবো। বিদ্যালয়টির কল্যাণে আমার সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। গোয়াইনঘাটের সদ্য বিদায়ী ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা অফিসার রফিকুল ইসলাম জানান, আমার জানামতে এ বিদ্যাপীঠের শিক্ষক, শিক্ষার্থীরা সুনাম ও দজ্ঞতার সহিত তাদের পাঠ্যসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। আমার জানামতে এ বিদ্যালয়ের কোমলমতি অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী সাধারণ গ্রেড ও ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়ে এলাকায় সুনাম কুড়িয়েছে। বিদ্যালয়টি সরকারিকরণ হলে আরও আলো ছড়াবে বলে আমি আশাবাদী। সরকারিকরণসহ ওই বিদ্যালয়টির বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে কোনো উদ্যোগ আছে কিনা এ ব্যাপারে মোবাইলফোনে কথা হলে স্থানীয় সংসদ সদস্য সরকারের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি ইমরান আহমদ জানান, শিক্ষার মানোন্নয়নে বর্তমান সরকার আন্তরিকতার সহিত কাজ করছে। এ বিদ্যালয়টি সরকারিকরণে বিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের যথাযথ কর্তৃপক্ষে আবেদন করলে সরকারিকরণ স্বীকৃতি আদায় পর্যন্ত যত দৌড়ঝাঁপ লাগবে তা তিনি নিজেই করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন।
M | T | W | T | F | S | S |
---|---|---|---|---|---|---|
1 | ||||||
2 | 3 | 4 | 5 | 6 | 7 | 8 |
9 | 10 | 11 | 12 | 13 | 14 | 15 |
16 | 17 | 18 | 19 | 20 | 21 | 22 |
23 | 24 | 25 | 26 | 27 | 28 | 29 |
30 | 31 |