রয়েছে সূর্য রশ্মির ঝাঁঝ। জরাজীর্ণ ছোট একটি টিনশেড ঘর। বৃষ্টির পানি বাহিরে পড়ার আগে ভেতরে যায়।ভেতরের দেওয়াল গুলোর পলেস্তারা নিয়মিত খসে পড়ছে। কোথাও ফাটল। বেরিয়ে গেছে রড। বাহিরে ভেতরে দেওয়ালের স্যাঁতস্যাঁতে অবস্থা। যে কোনো মুহূর্তে ধসে পড়তে পারে দেওয়াল। রয়েছে হতাহতের আশঙ্কা। টিনের চালার কাঠ গুলোর অবস্থাও বেহাল। খুবই কষ্টে গাদাগাদি করে অত্যন্ত ঝুঁকিতেই চলছে এখানে পাঠদান। এভাবেই গত ২৫-৩০ বছর ধরে চলছে উপজেলার শাহজাদাপুর ইউনিয়নের দেওড়া পূর্ব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। সরজমিনে দেখা যায়, ১৯৮৪ সালে নির্মিত বিদ্যালয়ের টিনশেড ঘরটি একেবারেই লক্কর ঝক্কর। ঘরটির ভেতরে দুদিকে রয়েছে মাত্র দুটি ছোট কক্ষ। দরজা জানালাগুলো ভাঙ্গা। ওই কক্ষ দুটিতে গাদাগাদি করেই চলছে দুই শিফটের পাঠদান। কিছু শিক্ষার্থী বসে আছে মেঝেতে। ঘরের চালার চারিদিকে খসে পড়ছে দরজা ও কাঠ। টিনে রয়েছে অগণিত ফুটো। নিয়মিত বৃষ্টির পানি পড়ছে শ্রেণি কক্ষের ভেতরে। অফিসে রক্ষিত জরুরি কাগজপত্রেরও নেই কোনো নিরাপত্তা। জায়গার অভাবে অফিসেই চলছে পাঠদান। গরমে ছটফট করছে বাচ্চারা। বিদ্যালয়টির নেই সীমানা প্রাচীর। পেছনের দিকে (উত্তর) খাল থাকায় ঘরটি দেবে যাওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে সম্পূর্ণ অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে ঘর ও মাঠ। মাঠের চারিদিকে ও বিদ্যালয় ঘরটির বারান্দায় হর-হামেশা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে গরুর বিষ্ঠা। এসব কারণে এ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা দিনদিন কমছে। ঝরেও পড়েছে। বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে প্রধান শিক্ষকসহ মোট শিক্ষক ৫ জন। দুই শিফটে চলে পাঠদান। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত শিশু প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পাঠদান চলে। এ শিফটে ৩ শ্রেণিতে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫৭ জন। আবার সোয়া ১২টা থেকে ৪টা পর্যন্ত চলে তৃতীয় চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির পাঠদান। এই তিন শ্রেণিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১০৭ জন। মোট ১৬৪ জন শিক্ষার্থী নিয়েই চলছে এ বিদ্যালয়। বিদ্যালয় ভবনের ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার কারণেই আগের চেয়ে এখানে ভর্তি হয় কম। শাহজাদাপুর ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ ভোট কেন্দ্রও এটি। নেই নিরাপত্তা দেওয়াল। তারপর ছোট ঝুঁকিপূর্ণ টিনশেড হওয়ায় আড়াই সহস্রাধিক পুরুষ ও মহিলা ভোটারকে খুবই কষ্টে ভোট দিতে হয়। কক্ষের অভাবে গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এখানে অস্থায়ী টিনের ঘর তৈরি করে ভোটের কাজ সম্পন্ন করেছে উপজেলা প্রশাসন। তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী মোকাব্বির হোসেন, সাবিনা আক্তার, মারিয়া আক্তার মিতু, শরীফ মিয়া, মুক্তার মিয়া পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী সুরমা বেগম, রবিন মিয়া, মাহমুদা বেগম, মমতাজ বেগম ও সজিব মিয়া জানায়, পলেস্তারার টুকরা পড়ে অনেকে ব্যথা পেয়েছে। তাই আমাদের স্কুলে আসতে ভয় করে। শ্রেণি কক্ষে সব সময় আতঙ্কে থাকি। বারবার দেয়ালের দিকে চেয়ে থাকি। এখনই বুঝি ভেঙে শরীরে পড়লো। নতুন ভবনে পড়লে যেন কি রকম আনন্দ লাগতো? আবার মাঠের দুরবস্থার কারণে অ্যাসেম্বলি ঠিকমতো করতে পারি না। খেলাধুলাও করতে পারি না। অভিভাবক খোরশেদ আলম, মতি মিয়া, আবু লাল ও আব্বাস আলী বলেন, স্কুল ঘরটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ছেলে মেয়েরা ভয়ে যেতে চায় না। আমরাও বাচ্চাদের স্কুলে পাঠিয়ে সারাক্ষণ টেনশনে থাকি। এ অবস্থায় লেখা পড়া হয় না। তাই এ স্কুলে অনেকেই বাচ্চা ভর্তি করতে চায় না। আসলে নতুন ভবন দরকার। বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা পরিষদের সভাপতি মো. শাহেদ চৌধুরী ও প্রধান শিক্ষক সুলতানা সুরাইয়া আক্তার বলেন, স্কুল ঘরটি অনেক আগেই ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। শিক্ষক শিক্ষার্থীরা সর্বক্ষণ আতঙ্কগ্রস্ত থাকি। যে কোনো সময় প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারে। গত ২৫-২৬ বছর ধরে এমন ঝুঁকিতে চলছে বিদ্যালয়টি। শিক্ষা অফিস একাধিকবার স্কুলের ছবি নিয়েছেন। সরকারি লোকজন এসে মেপে গেছেন। ইস্টিমেট করেছেন। কোথায় আদৌ নতুন ভবনের খবর নেই। এছাড়া সীমানা প্রাচীর না থাকায় মাঠের ওপর চলছে অত্যাচার।
মাঠের ওপর দিয়েই রয়েছে যাতায়তের রাস্তা। অনেক বলেছি কেউ কথা শুনে না। অ্যাসেম্বলিটা পর্যন্ত ঠিকমতো করতে পারছি না। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সৈয়দ আবুল খায়েরের মুঠোফোনে ( ০১৭১১-৯৪২২২১) একাধিকবার ফোন দিয়েও কথা বলা সম্ভব হয়নি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দা নাহিদা হাবিবা বলেন, বিদ্যালয় ভবনের দুরবস্থার কথা আমি জানি। আমি ২-১ দিনের মধ্যে জরুরিভাবে বিকল্প ব্যবস্থা নিচ্ছি।
M | T | W | T | F | S | S |
---|---|---|---|---|---|---|
1 | ||||||
2 | 3 | 4 | 5 | 6 | 7 | 8 |
9 | 10 | 11 | 12 | 13 | 14 | 15 |
16 | 17 | 18 | 19 | 20 | 21 | 22 |
23 | 24 | 25 | 26 | 27 | 28 | 29 |
30 | 31 |