এফবিআই-এর অনেক কর্মী হিলারিকে দজ্জাল বলে মনে করেন। হিলারি ক্লিনটনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এফবিআই-এর অভ্যন্তরে চরম বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাব বিরাজ করছে। এফবিআই-এর সাবেক ও বর্তমান বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার সূত্রের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান খবরটি নিশ্চিত করেছে। এফবিআই-এর কর্মীদের মধ্যে ট্রাম্পের প্রতি বিপুল সমর্থন দেখা যাচ্ছে বলেও দাবি করেছে সূত্র। তাদের দাবি, কেন্দ্রীয় এই মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এখন ট্রাম্পল্যান্ড। এদিকে এফবিআই-এর অন্যকিছু সূত্র ট্রাম্পের প্রতি বিপুল সমর্থন থাকার তথ্যটি নাকচ করে দিলেও হিলারিকে নিয়ে এফবিআই-এর অভ্যন্তরে জন্ম নেওয়া অস্বস্তির কথা স্বীকার করেছেন।
উল্লেখ্য, হিলারি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালে ২০০৯-২০১৩ সাল পর্যন্ত ব্যক্তিগত সার্ভার থেকে ইমেইল আদান-প্রদান করেছিলেন। দীর্ঘ সময় ধরে আদান-প্রদান করা ইমেইলগুলোতে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিষয়েরও উল্লেখ ছিল। যুক্তরাষ্ট্রে সরকারের নিয়ন্ত্রিত চ্যানেল ছাড়া ক্লাসিফায়েড তথ্য আদান-প্রদানের ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এ ধরনের অনিরাপদ চ্যানেলের মাধ্যমে অতি গোপনীয় ইমেইল ফাঁস হওয়াকে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে মনে করে মার্কিন সরকার। খবরটি প্রকাশ হওয়ার পর ঘটনার তদন্তে নামে এফবিআই। গত ২৯ জানুয়ারিতে সংস্থাটির অনুরোধে হিলারির ২২টিরও বেশি ইমেইলকে ‘অতি গোপনীয়’ বলে ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর। আর জুলাই মাসে প্রথম ধাপের তদন্ত শেষ করে এফবিআই।সম্প্রতি ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের বিরুদ্ধে এফবিআই-এর নতুন করে তদন্ত শুরুর ঘোষণা দেওয়া হয়। হিলারি শিবিরের অভিযোগ, নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে এফবিআই নতুন করে তদন্ত শুরু করেছে এবং সে তদন্ত শুরু হওয়ার খবর প্রকাশ করেছে।
বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) গার্ডিয়ানে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, এফবিআই সূত্র জানিয়েছে ব্যক্তিগত সার্ভার ব্যবহার করে হিলারির ইমেইল আদান-প্রদানের ঘটনায় গত জুলাইয়ে তাকে অভিযুক্ত করার সুপারিশ না করায় সংস্থার প্রধান জেমস কোমির বিরুদ্ধে অভ্যন্তরীণভাবে ক্ষোভ তৈরি হয়।
এফবিআই-এর যেসকল সূত্রকে উদ্ধৃত করে গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনটি করা হয়েছে তাদের কেউই নিজেদের নাম প্রকাশ করতে চাননি। তবে তারা সবাই এফবিআই-এর বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তা। অফ দ্য রেকর্ড তারা এফবিআই-এর অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা নিয়ে কথা বলেছেন। কেউই অন দ্য রেকর্ড কথা বলতে চাননি। নাম প্রকাশ না করে এক এফবিআই সদস্য গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘এফবিআই-এর বিশালসংখ্যক কর্মকর্তার কাছে হিলারি দজ্জাল মূর্তি হিসেবে পরিচিত। তারা যা ফাঁস করছেন তার কারণ তারা ট্রাম্পপন্থী।’
তদন্ত সংস্থাটির বর্তমান এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এফবিআই একটি ট্রাম্পল্যান্ড বা ট্রাম্পক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।’ তার দাবি, সহকর্মীদের কেউ কেউ ট্রাম্পকে ভোট দেওয়ার ব্যাপারে খোলাখুলি আলোচনা করছেন।
অবশ্য অন্য কয়েকটি সূত্র এফবিআইতে ট্রাম্পের প্রতি চরম সমর্থন থাকার দাবিটি নিয়ে বিরোধিতা করেছেন। তবে এফবিআই-এর অভ্যন্তরে হিলারি যে চরম অজনপ্রিয় তা নির্বিশেষে স্বীকার করেছেন তারা।
সাবেক এক এফবিআই কর্মকর্তা বলেন, ‘অনেক লোক আছে যারা মনে করেন ট্রাম্প যোগ্য নন। কিন্তু পাশাপাশি তারা এও বিশ্বাস করেন যে হিলারি দুর্নীতিগ্রস্ত। অদক্ষ ও দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিবিদের মধ্যে একজনকে বেছে নেওয়া কষ্টের বলেই বেশি শোনা যাচ্ছে।’
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার (২৮ অক্টোবর) এফবিআই পরিচালক জেমস কোমি নতুন করে হিলারির ইমেইল তদন্তের বিষয়টি মার্কিন কংগ্রেসকে চিঠি লিখে অবগত করেন। পরে তিনি জনসমক্ষে তদন্তের কিছু বিষয় তুলে ধরেন। আর এরপরই ওই ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ডেমোক্র্যাট শিবিরের রোষানলে পড়ে তদন্ত সংস্থাটি। ডেমোক্র্যাটরা দাবি করে আসছে, এফবিআই নির্বাচনকে প্রভাবিত করছে।
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, এফবিআই-এর সংশ্লিষ্ট যেসব সূত্র দাবি করেছেন যে ট্রাম্পের প্রতি অভ্যন্তরীণ সমর্থন বেশি থাকার খবরটি ঠিক নয়, তারা মনে করেন এফবিআই এখন বিপজ্জনক রাজনৈতিক এলাকায় রয়েছে। বিচার বিভাগের কর্মকর্তারা এফবিআই-এর অসন্তোষের আরেক লক্ষ্যবস্তু। সম্প্রতি উইকিলিকসে ফাঁস হওয়া ইমেইল থেকে জানা গেছে, এক সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলও ইমেইল তদন্তের ব্যাপারে অন্যায় সহযোগিতা দিয়েছেন হিলারি শিবিরকে। তবে সাবেক এক ফেডারেল অ্যাটর্নি দাবি করেছেন, এফবিআই-এর অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহের কারণেই পুনঃতদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি।
নির্বাচনের মাত্র কয়েকদিন আগে হিলারির ইমেইল পুনঃতদন্তে নেওয়া এফবিআই-এর সিদ্ধান্তের কঠোর সমালোচনা করে বুধবার অনলাইন সংবাদমাধ্যম নাউ দিজ নিউজ-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ওবামা বলেছেন, অসম্পূর্ণ তথ্যের ভিত্তিতে এফবিআই প্রধান বিষয়টি নিয়ে নতুন করে তদন্তের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তা প্রচলিত নিয়মের লঙ্ঘন। অবশ্য সোমবারের সাক্ষাৎকারেও ওবামা বলেছিলেন, কেন এফবিআই হিলারির ইমেইল পুনঃতদন্তের সিদ্ধান্ত নিলো, তার জবাব তীব্র সমালোচনার মুখে পড়া এফবিআই পরিচালক জেমস কোমিকেই দিতে হবে।
ওই সাক্ষাৎকারে ওবামা আরও দাবি করেন, হিলারি ব্যক্তিগত সার্ভার ব্যবহার করে ভুল করেছেন। কিন্তু এর মাধ্যমে তিনি কোনও অপরাধমূলক কাজ তিনি করেননি। কংগ্রেসও এ বিষয়ে তদন্ত করে একই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিল। এফবিআই-এর অতীত অবস্থানের সঙ্গে সুর মিলিয়ে ব্যক্তিগত সার্ভারে অফিসিয়াল ই-মেইল ব্যবহারকে হিলারির ‘অনিচ্ছাকৃত ভুল’ বলেও মন্তব্য করেন ওবামা।