ইয়াবা বাজার একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণে থাকলেও এখন এটি তাদের হাতছাড়া হতে যাচ্ছে।টেকনাফের ‘ইয়াবা রাজ্যে’ তৈরি করছে নতুন সমীকরণ। নতুন করে এ বাজার দখলে নিতে মরিয়া আরেকটি পক্ষ। মাদক পাচারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের চাপে রাখার কৌশল নিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ জন্য ইয়াবার পুরনো মামলাও সচল করা হচ্ছে, ‘বন্দুকযুদ্ধে’ টেকনাফের ইয়াবা গডফাদারখ্যাত নূর মোহাম্মদ, জাহেদ হোসেন জাকুসহ ছয়জন নিহত হয়েছেন। সে সময় ইয়াবা পাচারে সরাসরি অভিযোগ থাকায় বদলি করা হয়েছে কক্সবাজারের ৫ থানার ওসি, ১৬ এসআই, ১৭ এএসআই এবং ৭৪ জন কনস্টেবলকে।
এখন ইয়াবার বাজার ধরতে মরিয়া টেকনাফের লেদা গ্রামের পাঁচ সহোদর। এক ভাই নূর মোহাম্মদ ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হলেও নুরুল হুদা, নুরুল কবির, শামসুল হুদা, সরোয়ার কামাল ও নুরুল আবসার ইয়াবা ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ নিতে চায়। স্ত্রীদের দিয়েও ইয়াবা পাচারের কাজ করে যাচ্ছে এ পরিবার। গত ১২ জানুয়ারি ৫০ হাজার ইয়াবা ও ইয়াবা বিক্রির তিন লাখ ৮৯ হাজার টাকাসহ নূর মোহাম্মদের স্ত্রী মিনারা বেগমকে আটক করে র্যাব। ৩ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের মরিচ্যা চেকপোস্ট এলাকায় অভিযান চালিয়ে অস্ত্র ও সাত হাজার পিস ইয়াবাসহ আটক করা হয় দুই ভাই নুরুল হুদা, শামসুল হুদা ও
তাদের কর্মচারী ইসমাইলকে। বিভিন্ন অভিযানে এ পরিবারের সদস্যদের আটক করলেও ইয়াবা ব্যবসা থেকে নিবৃত করা যাচ্ছে না।নূর মোহাম্মদসহ পরপর কয়েকজন ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হওয়ার পর ইয়াবার রুট পাল্টে ফেলে গডফাদাররা। আগে ইয়াবার বাজার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সীমাবদ্ধ থাকলেও এখন তা উত্তরমুখী। এখানকার তরুণ-তরুণীরাই এখন ইয়াবার নতুন টার্গেট। এ জন্য কক্সবাজার ও টেকনাফ থেকে আসা ইয়াবা চট্টগ্রাম হয়ে নৌপথে চলে যাচ্ছে সুতারকান্দি-বেনাপোল, আখাউড়া-বেনাপোল, তামাবিল-চট্টগ্রাম, সুতারকান্দি-চট্টগ্রাম, আখাউড়া-চট্টগ্রাম, বাংলাবান্ধা-মংলা, বুড়িমারি-মংলা, শাহবাজপুর-দর্শনা, শাহবাজপুর-চট্টগ্রাম, আখাউড়া-দর্শনা, আখাউড়া-চট্টগ্রাম, রোহানপুর-মংলা এবং রায়মঙ্গল-আশুগঞ্জসহ বিভিন্ন নৌবন্দরে। নৌবন্দর থেকে আবার স্থলপথে এই মাদক যাচ্ছে উত্তরাঞ্চলে। সন্দ্বীপ, হাতিয়াসহ উপকূলীয় এলাকাতেও এর সরবরাহ বাড়ছে।
ইয়াবা ব্যবসায়ীদের নতুন করে তালিকা করছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। খুঁজে দেখা হচ্ছে মামলার নথি। নূরুল হুদা কিংবা তাদের পরিবার যাতে এ ব্যবসার হাল ধরতে না পারে সেজন্য এদের কোথায় কী মামলা আছে, তা রেকর্ডভুক্ত করা হচ্ছে। এরই মধ্যে এই পাঁচ ভাইয়ের বিরুদ্ধে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের বিভিন্ন থানায় এক ডজনেরও বেশি মামলার সন্ধান মিলেছে।
এ প্রসঙ্গে র্যাব-৭ চট্টগ্রামের অধিনায়ক লে. কর্নেল মিফতাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘টেকনাফের ইয়াবা বাজার যাতে সম্প্রসারণ হতে না পারে, সে জন্য সম্ভাব্য সবার ওপরে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। কার বিরুদ্ধে অতীতে কী মামলা হয়েছে সেসবেরও খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। তিনি জানান, গডফাদার হিসেবে আবির্ভূত না হয় সে ব্যাপারে সতর্ক আছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।’