সম্প্রতি চট্টগ্রামে আসেন মার্কেটিং এর কাজে ঢাকার এক প্রভাবশালী মার্কেটিং কোম্পানীর ব্যবসার প্রধান কাউছার আলম । কাজ শেষে দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য বেছে নেন অভিজাত হোটেল ‘হান্ডি’কে। সাথে ছিলেন চট্টগ্রাম অফিসের ব্যবসা বিভাগের আরও দু‘জন।
তারা হচ্ছেন দিদার আলম ও তাজুল ইসলাম। গরীবুল্লাহ শাহ সোহাগ কাউন্টারের পাশে ওয়াসা মুখী হান্ডিতে প্রবেশ করেন তারা। প্রথমে তারা চোখ বুলিয়ে নেন পরিবেশের ওপর। খুব একটা পরিপাটি না হলেও চলনসই পরিবেশ দেখে প্রস্তুতি নেন শখের হান্ডির খাবার খেতে।
ওয়েটার এসে অর্ডার অনুযায়ী ট্রে করে প্রত্যেকের জন্য হান্ডিতে করে নিয়ে আসেন খাসির বিরিয়ানি। সাথে সালাদ। মুখে দিয়ে কপালে ভাঁজ। একে অপরের দিকে চাওয়া-চাওয়ি। সবকিছু চাপিয়ে কাউছার আলম বললেন খুব দারুন, তাই না?।
দিদার বললেন, হ ভাই হান্ডির খাবারের স্বাদই আলাদা। টক-ঝাল-মিষ্টি।
কাউছার বললেন, বিরিয়ানিটা টক না। তাজুল বললেন, হ ভাই মনে হয় নষ্ট। দিদার বললেন, নষ্ট না; এটা হান্ডির খাবারের বৈশিষ্ট্য। কি বলেন ভাই, কয়েকমাস আগেও তো চট্টগ্রামে এসে গরিবুল্লাহ শাহ বাসস্ট্যান্ডের পাশে স্যামসাং ভবনের তিন তলার হান্ডিতে খাবার খেয়েছি। সেখানে তো এরকম ছিল না। কত ভাল খাবারই তো ছিল। তাজুল বললেন, ভাই এটাও হান্ডি, ওটাও হান্ডি।
তাজুল আরও বলে উঠলেন, জিইসির মোড়ে আরও একটি হান্ডি আছে। ওটার অবস্থা তো আরও খারাপ। একেবারে সাধারণ হোটেলের মতো। খাবারের দামও তেমন। এমন কথোপকথনের সময় পাশে ছিলেন আমাদের এই প্রতিবেদক।
জানতে চাইলে তারা বলেন, চট্টগ্রামের ব্যস্ততম বাণিজ্যিক এলাকা জিইসির মোড় থেকে গরিবুল্লাহ শাহ পর্যন্ত ‘হান্ডি’ নামে তিনটি হোটেল রয়েছে। হোটেল তিনটিতে পরিবেশের যেমন তারতম্য আছে; তেমনি খাবারও তিন রকমের। এখন এরমধ্যে আসল হান্ডি কোনটা। এ নিয়ে আছি গোলকধাঁধায়।
তারা আরও বলেন, শুধু জিইসির মোড়ে নয়, নগরীর আগ্রাবাদ চৌমুহনী, নিউমার্কেট মোড়, সাগরিকা, কাজীর দেউরিসহ ব্যস্ততম বাণিজ্যিক এলাকাসমূহে একাধিক হান্ডি হোটেল রয়েছে। এসব হোটেলের সাজ-সজ্জা ও পরিবেশের মধ্যেও রয়েছে বড় ধরণের তারতম্য। খাবারের মান ও স্বাদের মধ্যেও রয়েছে পার্থক্য। দামেও রয়েছে ব্যবধান।
তারা জানান, স্যামসাং ভবনের হান্ডিতে খাসীর মাংসের বিরিয়ানি নেওয়া ৫৫০ টাকা। লালখান বাজার মুখী হান্ডিতে বিরিয়ানি নেওয়া হয় ৪০০ টাকা। জিইসির মোড়ের হান্ডিতে দাম রাখা হয় ৩৫০ টাকা। একইভাবে নগরীর বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় স্থাপিত হান্ডি গুলোতে নেওয়া হয় হরেক রকম দাম। তবে হান্ডিতে করে বিরিয়ানি পরিবেশন করে ওই একটাই মিল রয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে স্যামসাং ভবনের হান্ডির ম্যানেজার আশরাফ-উদ-দৌলা বলেন, জিইসির মোড়ে স্যামসাং ভবনের এই হান্ডিই একমাত্র শাখা যেটি হান্ডির ঢাকা প্রধান কার্যালয়ের অনুমোদিত। বাকী দুটি হান্ডি নয়। বরং হান্ডির সাইনবোর্ড লাগিয়ে সাধারণরে সাথে প্রতারণা করছে কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী।
তিনি বলেন, হান্ডি একটি অভিজাত কোম্পানী। হান্ডির যত শাখা আছে, সবশাখার সেবা উন্নতমানের। পরিপাটি পরিবেশ ও খাবারের মানও উন্নতমানের। এতে কোন রকম পঁচা-বাসি ও মানহীন খাবার পরিবেশন করা হয় না। যা পার্শ্ববর্তি অপর দুটি হান্ডির খোঁজ নিলেই সহজে বুঝা যাবে।
এ ব্যাপারে সোহাগ কাউন্টারের পাশে ওয়াসামুখী হান্ডির ক্যাশিয়ার জামশেদ বলেন, চট্টগ্রামে হান্ডির একমাত্র শাখা এটাই। নগরীর আর কোথাও আমাদের কোন শাখা নেই। বাকী হান্ডি সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না বলে জানান। জিইসির মোড়ের হান্ডির পরিচালক আবুল কালাম বলেন, তিনি জিইসির মোড়ের হান্ডির পরিচালক। হান্ডির একমাত্র শাখা এটিই। অথচ তিনটি হান্ডিই পাশাপাশি।
শুধু কাউছার, দিদার ও তাজুল নয়, আগ্রবাদ এলাকার আল-আরাফাহ ইসলামি ব্যাংকে কর্মরত সাইফুল ইসলাম ও মফিদুজ-জামান এবং কেএসআরএম কার্যালয়ে কর্মরত পলাশ ধরও শুনালেন হান্ডিতে খাবারের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা।
তারা অভিযোগ করেন, আগ্রাবাদ চৌমুহনীতেও হান্ডির তিনটি হোটেল রয়েছে। এসব হোটেলের সবক্ষেত্রে রয়েছে সেবার ব্যাপক তারতম্য। দামেও ফারাক। হান্ডি হলে সব তো একরকম হওয়ার কথা। এরমধ্যে আসল হান্ডিই বা কোনটা।
এ রহস্য উদঘাটন করতে হান্ডির ওয়েবসাইট থেকে সংগৃহীত ঢাকা প্রধান কার্যালয়ের ল্যান্ডফোন ও মুঠোফোনে বৃহস্পতিবার বিকেলে একাধিকবার কল করা হলেও কেউ ফোন রিসিভ করেননি।
তবে হান্ডির চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিবেশক আবু জাহেদ এ প্রসঙ্গে বলেন, হান্ডি একটি অভিজাত প্রতিষ্ঠিত কোম্পানী। হান্ডির কোন শাখায় নিম্মমানের খাবার পরিবেশন করা হয় না। এ কারনে অভিজাত শ্রেনীর মানুষের কাছে হান্ডি একটি জনপ্রীয় নাম।
তিনি বলেন, চট্টগ্রামসহ সারাদেশে হান্ডির নামে আরও একাধিক হোটেল রয়েছে। যেখানে নিম্মমানের খাবার পরিবেশনের কারনে আসল হান্ডির সুনাম খুন্ন হচ্ছে। এ ব্যপারে তিনি ভ্রাম্যমান আদালতের সহায়তা কামনা করেন।
চট্টগ্রাম অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও ভ্রাম্যমান আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট সাব্বির রহমান সানি এ প্রসঙ্গে বলেন, শুধু হান্ডি নয়, বাজারে ব্র্যান্ড হয়ে গেলে সেই নাম ব্যবহার করে ব্যবসা চালায় অসাধু ব্যবসায়ীরা। যাদের কারনে ভাল কোম্পানীর সুনাম খুন্ন হওয়ার পাশাপাশি সাধারণ মানুষ প্রতারিত হচ্ছে। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসন সজাগ রয়েছে। সময়মতো অবশ্যই ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান পরিচালনা করা হবে।