হিলারি ক্লিনটন মানুষকে ভালোবাসতে ঈশ্বরের ঐশিবাণীর কথা বলেছেন গত রোববার ফোর্ট লডেরডেলের নিউ মাউন্ট অলিভ ব্যাপটিস্ট চার্চে আফ্রিকান-আমেরিকানদের এক সমাবেশে। তিনি বলেছেন তার প্রয়াত মায়ের ধৈর্যশীলতার কথা। বলেছেন, প্রথাগত বর্ণবাদকে মোকাবিলা করতে হবে, সহায়তা করতে হবে সহিংসতার শিকার পিতা-মাতাদের। উপস্থিত সবাই হিলারির বক্তব্যের সঙ্গে একমতই পোষণ করেন। তারা সমঃস্বরে বলে ওঠেন ‘আমিন’। হাত তুলেও সমর্থন জানান হিলারিকে। এরপরই হিলারি এমন একটি ঘোষণা দেন, যাতে উপস্থিত সবাই দাঁড়িয়ে যান। হিলারি বলেন, ‘আমি প্রেসিডেন্ট ওবামার নীতিতেই অটল থাকবো, বিশেষ করে অ্যাফোর্ডেবল কেয়ার অ্যাক্ট ইস্যুতে।’ এর মাধ্যমে অক্টোবর মাসে তৃতীয়বারের মতো রোববারের সকালটি হিলারি কাটালেন কৃষ্ণাঙ্গদের চার্চে। লক্ষ্য নির্বাচনী প্রচারণার শেষ মুহূর্তগুলোকে কাজে লাগানো। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা নিজে এই সমপ্রদায়ের প্রতিনিধি। হিলারিও তাদের সমর্থন আদায়ের চেষ্টাই করছেন। বিশেষ করে হোয়াইট হাউসের পথে নর্থ ক্যারোলাইনা ও ফ্লোরিডার মতো রাজ্যে এই ভোটারদের সমর্থন তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হয়ে উঠতে পারে।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে বারাক ওবামারও শেষ মিশন হলো তার আট বছরের রাজত্ব সুরক্ষিত রাখতে একজন ডেমোক্রেট উত্তরসূরিকে হোয়াইট হাউসে বসিয়ে যাওয়া। আগামী মঙ্গলবারেই এটা স্পষ্ট হয়ে যাবে যে তিনি তার একসময়কার দলীয় প্রতিদ্বন্দ্বীকে সেই অবস্থানে পৌঁছানো নিশ্চিত করতে পারছেন কি না। মঙ্গলবার ওহাইও’র কলম্বাসে হিলারির পক্ষে প্রচারণায় ওবামা বলেন, যারা হিলারিকে সমর্থন করছেন না তাদের এই বিষয়টি নিয়ে আরও গভীরভাবে ভাবতে হবে। এটা তারা হিলারি নারী বলেই করছেন কি না, সেটাও ভেবে দেখতে বলেন। ওবামা বলেন, ‘আমি জানি যে আমার স্ত্রী কেবল আমার সমানই নন, আমার চেয়েও ভালো। কেউ একজন যখন জনপ্রতিনিধি হিসেবে আসার উচ্চাশা পোষণ করেন এবং তার জন্য কঠোর পরিশ্রম করেন, সেটা আমাদের দৃষ্টিতে ঠিক আছে। কিন্তু যখন একজন নারী সেটা করেন তখন হঠাৎ করেই আমাদের মনে প্রশ্নের উদয় হয়, কেন তিনি এটা করছেন?’ হিলারির প্রসঙ্গ টেনে ওবামা বলেন, ‘আপনি আপনাদের ভেবে দেখতে বলছি। তিনি যেকোনো পুরুষের তুলনায় অনেক বেশি যোগ্যতাসম্পন্ন।’
ওবামা তার দ্বিতীয় মেয়াদের শেষ দিকে এসে এই মেয়াদের সর্বোচ্চ জনপ্রিয়তা উপভোগ করছেন। সিএনএন/ওআরসি পরিচালিত একটি জনমত জরিপে ৫৫ শতাংশ আমেরিকান ওবামার সমর্থনে রয়েছেন। গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই তার প্রতি এমন সমর্থন ৫০ শতাংশের বেশি রয়েছে। কিন্তু পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে যদি ডনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচিত হন এবং ওবামার দুই মেয়াদের আট বছরের কঠোর পরিশ্রমে জল ঢেলে দেন, এমন সমর্থন সত্ত্বেও সেটা ওবামার জন্য সুখকর হবে না। গত কয়েক মাসে ওবামা হিলারির পক্ষে জোর প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। হিলারির পক্ষে কথা বলতে গিয়ে তিনি তুলে ধরছেন ট্রাম্পের অযোগ্যতার কথা। বলেছেন, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য যোগ্য নন। গ্রীষ্মে ডেমোক্রেট দলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক মনোনয়ন পাওয়ার পর ওবামা নর্থ ক্যারোলাইনায় দুটি প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন। এ ছাড়া ফ্লোরিডা, পেনসিলভ্যানিয়া, ওহাইও ও নেভাদাতেও প্রচারণা চালিয়েছেন। গতকালই তিনি অংশ নিয়েছেন ইউনিভার্সিটি অব নর্থ ক্যারোলাইনায়, আগামী সপ্তাহে যাবেন ফ্লোরিডায়।
হিলারির একজন জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা বলেন, ‘এমন কোনো সুইং স্টেট নেই যেখানে তিনি সক্রিয় নন।’ ওই উপদেষ্টা নির্বাচনী প্রচারণার একদম চূড়ান্ত মুহূর্তগুলোতে একই মঞ্চে ওবামা ও হিলারির উপস্থিতির সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না। আর ডেমোক্রেটরাও বিশ্বাস করেন, আফ্রিকান-আমেরিকান ও তরুণদের ভোট জয়ের ক্ষেত্রে ওবামার চেয়ে ভালো কোনো সহায় হিলারির হতে পারে না। ওবামাকেও কিছু সীমাবদ্ধতা মাথায় রাখতে হচ্ছে। বিশেষ করে এফবিআই পরিচালক জেমস কমির সূত্র ধরে হিলারির সর্বশেষ যে জটিলতায় পড়েছেন, সেটাকেও মাথায় রাখতে হচ্ছে ওবামার। তিনি সরাসরি এফবিআইকে সমালোচনা করেননি। হিলারির সর্বশেষ ই-মেইল কেলেঙ্কারিতেও তিনি তাকে পূর্ণ সমর্থন দিতে অক্ষম। ওবামা সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে কৃষ্ণাঙ্গদের পরিচালিত ১৩টি রেডিওতে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। এর মধ্যে পাঁচটি সাক্ষাৎকার তিনি দেন গাড়িতে থাকা অবস্থায়। চারটি সাক্ষাৎকার তিনি দিয়েছেন ফ্লোরিডায়, যেখানে আগাম ভোটে আফ্রিকান-আমেরিকানদের অংশ নেয়ার হার ছিল কম। তবে হিলারির প্রচারণা শিবির বলছে, ওবামার সংশ্লিষ্টতা কাজে লাগছে তাদের জন্য। হিলারি শিবিরের হিসাব অনুযায়ী, ফ্লোরিডায় প্রায় ৫ লাখ আফ্রিকান-আমেরিকান সশরীরে কিংবা মেইলের মাধ্যমে তাদের আগাম ভোট দিয়ে ফেলেছেন। ২০১২ সালের নির্বাচনের একই সময়ের তুলনায় এই হার ৭৪ শতাংশ বেশি। নর্থ ক্যারোলাইনাতেও আফ্রিকান-আমেরিকানদের মধ্যে আগাম ভোটের হার প্রত্যাশার চেয়েও বেশি বলে জানাচ্ছে হিলারি শিবির। শিবিরের তথ্য অনুযায়ী, মেকলেনবার্গ, অরেঞ্জ, ওয়েক ও ডারহাম কাউন্টিতে এই হার ১৭ শতাংশ বেশি। এসব এলাকার এক-তৃতীয়াংশই কৃষ্ণাঙ্গ। অন্যদিকে, প্রাইমারি নির্বাচনের সময় থেকেই হিলারি তরুণদের মনোযোগ আকৃষ্ট করতে সক্ষম হননি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও লেট নাইট টিভি শো’তে উপস্থিত হয়ে ওবামা এই জনগোষ্ঠীকে প্রভাবিত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। তরুণদের মধ্যে জনপ্রিয় স্ন্যাপচ্যাট ও ইউটিউবের মতো মাধ্যমে ওবামা সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। স্টিফেন কোলবার্ট ও জিমি কিমেলের মতো জনপ্রিয় কমেডিয়ানদের শো’তেও হাজির হয়েছেন তিনি। এ সপ্তাহেই সামান্থা বি’কে দেয়া সাক্ষাৎকারে ওবামা তরুণদের ভোট দিতে উৎসাহিত করেন। তিনি জানান, তার বড় মেয়ে মালিয়া প্রথমবারের মতো ভোট দিচ্ছে এই নির্বাচনে। ওবামা বলেন, ‘ভোট দেয়ার মাধ্যমে সে যে গর্বকে ধারণ করছে, আমার মনে হয় অনেক তরুণই সেই গর্ব ধারণ করেন। কিন্তু তারা যেসব বিষয় নিয়ে ভাবে, সেগুলো নিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলতে হবে।’
ডেমোক্রেট প্রাইমারি নির্বাচনের সময়ই স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে হিলারি তার পাশে ওবামাকে পাচ্ছেন। ভারমন্টের সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্সের সঙ্গে ১৪ মাসের কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতার সময় হিলারি নিজেকে ওবামার যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে দাবি করেন। তিনি বলেন, ওবামার কর্মকাণ্ডকে প্রশংসা করবেন না স্যান্ডার্স এবং ওবামার অসম্পন্ন কাজগুলোকেও তিনি সম্পন্ন করতে পারবেন না। বামপন্থি হিসেবে স্যান্ডার্স হিলারির জন্য যতটা চ্যালেঞ্জ নিয়ে হাজির হয়েছিলেন, তা অতিক্রম করার মতো সক্ষমতা হিলারির রয়েছে কি না তা নিয়ে কৃষ্ণাঙ্গরা প্রশ্ন তুলেছেন। সেই কৃষ্ণাঙ্গদের কাছে নিজেকে তুলে ধরতে ওবামার উত্তরসূরি হওয়ার বিষয়টি হিলারির জন্য ছিল গুরুত্বপূর্ণ একটি মাধ্যম। স্যান্ডার্স ওবামাকে ‘দুর্বল’ ও ‘হতাশজনক’ অভিহিত করায় সাউথ ক্যারোলাইনায় ফেব্রুয়ারি মাসের এক বিতর্কে হিলারি স্যান্ডার্সকে কঠোর ভাষায় আক্রমণ করেন। তিনি বলেন, ‘সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্সের কাছ থেকে আমরা আমাদের প্রেসিডেন্ট সম্পর্কে যেসব সমালোচনা পেয়েছি তেমনটি আমি রিপাবলিকানদের কাছ থেকে আশা করি। প্রেসিডেন্ট ওবামার উত্তরসূরি হওয়ার দৌড়ে থাকা ডেমোক্রেট একজন মনোনয়নপ্রত্যাশীর কাছ থেকে আমি এটা প্রত্যাশা করি না।’ স্যান্ডার্স প্রত্যুত্তরে বলেছিলেন, ‘ম্যাডাম সেক্রেটারি, এটি বিধিবহির্ভূত একটি আঘাত।’ ওবামাকে হিলারি কেবল তার যাচাইকারীই নয়, নিজেকেও ওবামার গৃহীত নীতির অন্যতম রক্ষক বলে দাবি করেছেন। ওবামাকেয়ার থেকে শুরু করে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইনের বিষয়গুলোতেও তিনি ওবামা নীতির অনুসারী বলেই জানিয়েছেন। জানুয়ারিতে হিলারি এক বক্তব্যে বলেছিলেন, ‘এখন সময় কোনো একটি পক্ষ নেয়ার। হয় অস্ত্র লবির পক্ষে দাঁড়ান অথবা আসুন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে যোগ দিই এবং তার পাশে দাঁড়াই। আমি তার সঙ্গেই রয়েছি।’
(সিএনএনের এমজে লি, ড্যান মেরিকা ও কেভিন লিপট্যাকের লেখা ‘ওবামা’র ফাইনাল মিশন: হেল্প ক্লিনটন ক্লোজ দ্য ডিল’ শীর্ষক প্রতিবেদনের অনুবাদ)
M | T | W | T | F | S | S |
---|---|---|---|---|---|---|
1 | ||||||
2 | 3 | 4 | 5 | 6 | 7 | 8 |
9 | 10 | 11 | 12 | 13 | 14 | 15 |
16 | 17 | 18 | 19 | 20 | 21 | 22 |
23 | 24 | 25 | 26 | 27 | 28 | 29 |
30 | 31 |