আরও বেড়েছে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে সন্দেহ অবিশ্বাস কাটছে না। সম্প্রতি বিএনপি মহাসচিবও এ নিয়ে কথা বলেছেন। কোনো কোনো দলের বিরুদ্ধে সরকারের সঙ্গে যোগাযোগের অভিযোগও শোনা যাচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে- কেউ কেউ নাকি জোটে থেকে সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নে বেশি মনযোগী। যেসব দল ভাঙনের মুখে সে সব দলকে নিয়ে অবিশ্বাসের মাত্রাটা একটু বেশি।
শরিক দলগুলোর শীর্ষ নেতারা বলছেন,একে অন্যের প্রতি অবিশ্বাসের কারণে আসলে জোট ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। রাজনীতিতে ২০ দলের যে ভাবমূর্তি গড়ে উঠেছিল তা নষ্ট হচ্ছে।
বেশ কিছুদিন পর রবিবার ২০ দলীয় জোটের মহাসচিব পর্যায়ের বৈঠকের সময় শরিক দলগুলোর নিষ্ক্রিয়তার সমালোচনা করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।একই সঙ্গে বিভিন্ন কর্মসূচি পালনে শরিক দলগুলোর দৃশ্যমান অংশগ্রহণ না থাকা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করা হয়।
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ২০ দলের মহাসচিবদের নিয়ে আনুষ্ঠানিক বৈঠক শুরুর আগে মির্জা ফখরুল শরিকদের নিয়ে এমন মনোভাব প্রকাশ করেন।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, আলোচনার মূল বিষয়বস্তু ছিলো আসন্ন জেলা পরিষদ নির্বাচনে জোটের যাওয়া না যাওয়া নিয়ে। তবে বৈঠক শেষে শরিকদের সম্পর্কে মহাসচিবের ঐ মনোভাবই আলোচনার প্রধান কেন্দ্রে চলে আসে। জেলা পরিষদ নিয়ে আলোচনার চাইতে ফখরুলের সন্দেহ-ই এখন আলোচনার প্রধান খোড়াকে পরিণত হয়েছে জোটে।
সন্দেহ-অবিশ্বাসের বিষয়ে জানতে চাইলে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এমন দুইজন জোট নেতা ঢাকাটাইমসের কাছে এর সত্যতা নিশ্চিত করেন। তারা বলেন, আনুষ্ঠানিকভাবে বৈঠক শুরুর আগে বিএনপি মহাসচিব জোট নেতাদের খোঁজখবর নেন। কথার ফাঁকে কে কী কর্মসূচি পালন করছেন সে বিষয়েও জানতে চান ফখরুল। তবে অনেকে মাঠে সক্রিয় নয়, বিশেষ করে ইসলামী দলগুলো সরকারের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয় বলে দাবি করেন।
এসময় জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মহিউদ্দিন ইকরাম কওমী মাদরাসার স্বীকৃতি নিয়ে বেফাকুল মাদরাসাতুল আরাবিয়ার পক্ষ থেকে মানববন্ধন পালনের কথা উল্লেখ করেন।তিনি বলেন,‘আমরা কিছুদিন আগেও অনেক মানুষ নিয়ে প্রায় ৫০ কিলোমিটার জুড়ে মানববন্ধন করেছি।আমরা মাঠে থাকছি।’
তার কথা শেষ না হতেই মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা ১০০ জন নেতাকর্মী নিয়ে রাস্তায় দাঁড়াতে পারি না। সেখানে আপনারা ৫০ কিলোমিটার জুড়ে কীভাবে মানবন্ধন করেন। তাহলে সেটা কি সরকারের পরামর্শ ভিত্তিক কর্মসূচি অথবা সরকারের প্রেসক্রিপশনের কর্মসূচি?।
অন্যান্য ইসলামিক দলগুলোর দিকে ইঙ্গিত করে ফখরুল বলেছেন, অনেকে তো সরকারের কাছ থেকে টাকা পয়সা নিচ্ছে। একতলা মাদরাসা অল্প দিনের মধ্যে পাঁচতলা হয়ে যাচ্ছে।
ফখরুলের কাছ থেকে এমন কথা শুনে চুপসে যান জমিয়ত নেতা।
এদিকে জোটের বৈঠকে প্রত্যেক দল থেকে একজন করে প্রতিনিধি থাকার কথা।কিন্তু জমিয়ত থেকে রবিবারের বৈঠকে মহিউদ্দিন ইকরাম ছাড়াও মহাসচিব নূর হোসেন কাসেমী উপস্থিত ছিলেন।অবশ্য কাসেমী পরে যোগ দেন।
এর আগেও বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে জোটের শীর্ষ নেতাদের বৈঠকে জমিয়তের দুইজন প্রতিনিধির অংশ নেয়া নিয়ে জোটে নানা ধরণের কথা উঠেছিল। বলা হচ্ছিল,কেউ কাউকে বিশ্বাস করতে পারছে না বলে জমিয়তের একাধিক নেতা বৈঠকে থাকেন।
অন্যদিকে বিএনপি জোটের বেশ কয়েকটি ছোট দলের একাংশ জোট ছেড়ে গিয়েছে। বলা হয়,পরষ্পরের প্রতি সন্দেহ-অবিশ্বাসের কারণে জোটে ভাঙন ধরেছে।আবার কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে,সরকারের সঙ্গে যোগসাজসের।
তবে জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলাম সরকারের সঙ্গে যোগসাজস করে চলছে এমন ধারণা খোদ বিএনপিসহ জোটের অন্য শরিকদেরও। বিএনপি নেতাদের কেউ কেউ এ নিয়ে প্রকাশ্যেও কথা বলেছেন।এমনকি নীতি নির্ধারকদের জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগের পরামর্শও দিয়েছেন।
বিশেষ করে শেষ দফায় সরকারবিরোধী আন্দোলনে জামায়াতের নিষ্ক্রিয়তায় এমন সন্দেহ আরো বেড়ে যেতে দেখা গেছে। এসব কারণে জোট ভেঙে যাচ্ছে এমন খবরও গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়।
যদিও বিএনপির নীতি নির্ধারকরা জোট ভাঙ্গার খবরকে মিথ্যা ও উদ্দেশ্যমূলক হিসেবে দাবি করেছেন। তারা বলছেন, জোট অটুট আছে।কোনো বিভেদ নেই।
এদিকে সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুলের উপস্থিতিতে জোট ছাড়ার হুমকি দেন লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য গড়ার প্রক্রিয়ায় ড. কামাল হোসেন,কাদের সিদ্দিকীসহ বেশ কয়েকটি দলের সঙ্গে বিএনপির যোগাযোগ করার কারণে তার এই প্রতিবাদ।
অবশ্য জোট নেতাদের অনেকে মনে করেন,জামায়াতের অর্থায়নে দল চালাচ্ছেন ইরান। তবে তিনি এমন অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন।
ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন,‘নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী আমরা রাজনীতিতে সক্রিয় থাকার চেষ্টা করছি। এজন্য ইর্ষান্বিত হয়ে হয়তো অনেকে বিভ্রান্তিকর কথাবার্তা বলছেন।’
২০ দলে সন্দেহ ও অবিশ্বাসের বিষয়ে জানতে চাইলে কল্যাণ পার্টির মহাসচিব এম আমিনুর রহমান ঢাকাটাইমসকে বলেন,‘ছোটখাটো কিছু সমস্যা থাকলেও ২০ দলীয় জোট অটুট আছে। বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে আমরা ঐক্যবদ্ধ আছি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড.খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন,‘কারো হয়তো দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন হতে পারে কিন্তু জোটে সন্দেহ অবিশ্বাস বা কোন্দল আছে বলে আমি মনে করি না। কারণ এমনটা হলে এতদিন একত্রে চলা যেত না।’