তখন নির্বাচনকে সামনে রেখে হিলারি ক্লিনটনের ই-মেইলের বিষয়টি যেন সামনে না আনা হয়। এফবিআই পরিচালক জেমস কমি কথিতমতে, মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল লোরেত্তা লিনচের পরামর্শ অগ্রাহ্য করেছেন। অ্যাটর্নি জেনারেল তাকে পরামর্শ দিয়েছিলেন, নির্বাচন সম্পন্ন হতে যখন আর হাতে এক পক্ষকাল সময়ও আর নেই।
গত শুক্রবার এফবিআই পরিচালক যেভাবে ক্লিনটনের ই-মেইল বিতর্কটি সামনে এনেছেন তাতে মার্কিন বিচার বিভাগের কর্মকর্তা, ডেমোক্র্যাটস, এমন কি কতিপয় রিপাবলিকানও বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। শুক্রবার এফবিআই পরিচালক ঘোষণা দেন, তারা বর্তমানে এমন কিছু ই-মেইল যাচাই করে দেখছেন, যা মি. কোমির দাবি অনুযায়ী হিলারি ক্লিনটন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহার করেছিলেন, তার অনুসন্ধানের জন্য ‘প্রাসঙ্গিক বলে গণ্য হতে পারে’।
নিউ ইয়র্কার পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, মিজ লিনচ এই মর্মে তার বিশেষ অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন যে, মি. কোমি চলমান অনুসন্ধানের বিষয়ে মন্তব্য করেছেন, যা কিনা কোনো একটি নির্বাচনের ফলাফলকে প্রভাবিত করতে পারে, তাকে সামনে রেখে কোনো প্রকার মন্তব্য না করার বিষয়ে জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের দীর্ঘকালের অনুসরণ করা একটি রেওয়াজ রয়েছে। যদিও এফবিআই পরিচালক দাবি করেছেন, তিনি এর ‘ভিন্নরূপ’ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে ‘বাধ্যবাধকতা’ অনুভব করেছিলেন।
ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকায় লেখা এক নিবন্ধে মার্কিন জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের এক সাবেক মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেছেন, মি. কোমি হিলারি ক্লিনটনের ই-মেইল বিষয়ে নির্বাচন অত্যাসন্ন জেনেও যে মন্তব্য করেছেন, তাতে জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের অনুসৃত দীর্ঘদিনের নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেছে। এ ঘটনায় তিনি যে আচরণের পরিচয় দিয়েছেন তাতে এই গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে, রাষ্ট্রের প্রধান অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালনে তার বিচার-বুদ্ধি ও সামর্থ্য যথাযথ কিনা?
গত শুক্রবার এফবিআই পরিচালক কোমি রিপাবলিকান কংগ্রেসনাল কমিটির সভাপতিকে লেখা এক চিঠিতে উল্লেখ করেছিলেন, ওই ই-মেইলগুলো একটি সংশ্লিষ্টতাবিহীন মামলার সূত্রে আবিষ্কৃত হয়েছে। আর ওই মামলাটি সম্পর্কে জানা গেছে, সেটি হলো, একটি নারী লাঞ্ছনার ঘটনার দায়ে অভিযুক্ত সাবেক কংগ্রেসম্যান অ্যান্থনি ওয়েইনার সংশ্লিষ্ট। উত্তর ক্যারোলাইনার ১৫ বছর বয়সী এক কিশোরীর কাছে কথিতমতে, আপত্তিকর বার্তা পাঠানোর দায়ে উইনারের বিরুদ্ধে তদন্ত চলমান রয়েছে।
আর মি. ওয়েইনার হলেন হিলারি ক্লিনটনের ঘনিষ্ঠ সহকারী হুমা আবেদিনের সাবেক তালাকপ্রাপ্ত স্বামী। ওই ই-মেইলগুলো সাবেক ওয়েইনার দম্পতির হেফাজতে থাকা এক বা একাধিক ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসের মধ্যে পাওয়া গেছে। উইনারের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের তদন্তকারী দল ওই ই-মেইল উদ্ধার করেছে। এফবিআই এখন তদন্ত করে দেখছে, ওই ই-মেইলগুলোতে কোনো গোপনীয় তথ্য রয়েছে কিনা।
এই ই-মেইলগুলোর বিষয়টি এমন একটি প্রেক্ষাপটে এফবিআই পরিচালক সামনে এনেছেন, যখন ডেমোক্রেট দলীয় প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিলারি ক্লিন্টন তার রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বী ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে জনমত জরিপে যথেষ্ট ভালোভাবে এগিয়ে রয়েছেন। আর মাত্র ১১ দিন বাদেই নির্বাচন। আর নির্বাচনের আগে এ বিষয়ক রিভিউ শেষ করা সম্ভব হবে না বলেই ধরে নেয়া চলে। এর ফলে নির্বচনী প্রচারাভিযানের ওপর একটা কালো ছায়া থেকে যেতে পারে।
মি. কোমির চিঠির তথ্য প্রকাশ পাওয়ার পরে যুক্তরাষ্ট্রে শেয়ারবাজারে দরের দ্রুত পতন ঘটেছে। অন্যদিকে মি. ট্রাম্প এবং তার অন্য রিপাবলিকান বন্ধুরা এই খবরকে নির্বাচনকে সামনে রেখে ‘খেলায় পরিবর্তন’ আনার একটি সম্ভবানময় মওকা হিসেবে দেখছেন। যদিও একজন আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তা লসঅ্যাঞ্জেলেস টাইমসকে বলেছেন, যে ই-মেইলগুলো পাওয়া গেছে, সেগুলো ক্লিনটন প্রেরক কিংবা প্রাপক নন। আর তাতে যেসব তথ্য রয়েছে, আসলে তার চেয়ে বেশি ইতিমধ্যে গোয়েন্দারা উদঘাটন করেছেন।
ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, তবুও ওই ই-মেইলগুলোর রিভিউ করার দরকার পড়েছে, যা কেবলই একটি অতিরিক্ত সতর্কতামূলক পদক্ষেপ। এফবিআই’র এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে ক্যালিফোর্নিয়া থেকে সিনেটর দিয়ান্নে ফেইনস্তেনসহ ডেমোক্র্যাটরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তারা এক বিবৃতিতে বলেন, নির্বাচনী ফলে যাতে কোনো প্রভাব না পড়ে সে বিষয়ে এফবিআই’র ইতিহাস হলো সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা। সেই ঐতিহ্য থেকে বিচ্যুতির যে ঘটনা ঘটলো, তা আমাদের মর্মাহত করেছে।
হিলারি ক্লিনটনের ক্যাম্পেইন সভাপতি জন পডেস্টা বলেছেন, যে সময়টায় এই চিঠি প্রকাশ করা হয়েছে তা অসাধারণ। এবং দায়িত্বহীনভাবে প্রকাশ্যে এবং অপ্রকাশ্যে হিলারি ক্লিনটনের নির্বাচনী প্রচারাভিযানকে বেপরোয়াভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার উদ্যোগের জন্য মি. ট্রাম্প ও রিপাবলিকানদের অভিযুক্ত করেছেন তিনি।
অবশ্য কতিপয় রিপাবলিকান মি. কমির সিদ্ধান্তের বিষয়ে আহত হয়েছেন। টেক্সাস সিনেটর জন কোর্নি একজন কট্টর ট্রাম্প সমর্থক। তিনি একটি টুইট বার্তায় প্রশ্ন রেখেছেন, নির্বাচনের মাত্র ১১ দিন আগে এফবিআই এটা কেন করছে?
এমনকি জুডিশিয়ারি ওয়াচের প্রেসিডেন্ট টম পিটন, যিনি হিলারি ক্লিনটনের ই-মেইলগুলো পাওয়ার বিষয়ে তথ্য অধিকার আইনে দরখাস্ত করেছিলেন, তিনি নিউ ইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন, ‘এ উপাখ্যানটি হিলারির জন্য যেমন তেমনি তা কমির জন্য খারাপ হয়েছে।’
মি. কমি একজন রিপাবলিকান দলীয় ব্যক্তি। তাকে নিয়োগ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ওবামা। তিনি গত শুক্রবার এফবিআই কর্মীদের প্রতি লেখা এক পৃথক ই-মেইলে আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলেছেন, তদন্তাধীন বিষয়ে নতুন অগ্রগতি নিয়ে কংগ্রেসকে অবহিত করতে তিনি নৈতিক দায় অনুভব করেছিলেন। কারণ, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ‘আমি বারবার দাবি করেছিলাম আমাদের অনুসন্ধান সম্পন্ন হয়েছে।’ তিনি অবশ্য স্বীকার করেন, এফবিআই সাধারণত চলমান তদন্তের বিষয়ে কংগ্রেসকে অবহিত করে না। কিন্তু এক্ষেত্রে তার কথায় ‘মার্কিন জনগণকে বিভ্রান্ত করা হতো যদি এই সম্পূরক তথ্যের বিষয়ে প্রকাশ করা না হতো’।
গত জুলাই মাসে এফবিআই যখন মিসেস ক্লিনটনের ই-মেইল বিষয়ক অনুসন্ধান সমাপ্ত করেছে বলে দাবি করেছিল, তখন মি. কমি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, একটি প্রাইভেট সার্ভারে হিলারি যেভাবে স্পর্শকাতর বিষয় জমা করেছিলেন তা ছিল ‘চরমভাবে যত্নহীন’। কিন্তু কোনো যুক্তিসঙ্গত প্রসিকিউটর তাকে বা তার কোনো স্টাফকে এ কারণে কোনো ফৌজদারি অভিযোগে অভিযুক্ত করবে না।
গত শুক্রবারে এই খবর যখন ছড়িয়ে পড়লো, তখন মিসেস ক্লিনটন ছিলেন উড়োজাহাজে। তিনি আইওয়ার একটি সমাবেশে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন। আর তাকে বহনকারী বিমানে তখন ইন্টারনেট সংযোগ কাজ করছিল না। সর্বশেষ খবর তাকে আঘাত দিয়েছে। পরে ডেস মইনসে বক্তব্য রাখতে গিয়ে হিলারি ক্লিনটন বলেন, তিনি বা তার দলের ক্যাম্পেইন টিমের কারো সঙ্গে এফবিআই পূর্বাপর যোগাযোগ করেনি।
মিসেস ক্লিনটন বলেন, মার্কিন ভোটাররা অনতিবিলম্বে এ বিষয়ে বিস্তারিত এবং সম্পূর্ণ তথ্য অবহিত হওয়ার অধিকার রাখেন। তিনি আস্থার সঙ্গে বলেন, নতুন ই-মেইলগুলো এফাবিআই’র এ বিষয়ে দেয়া মূল বক্তব্যের কোনো পরিবর্তন ঘটাবে না। তাই এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে, নতুন করে তারা যে প্রশ্ন তুলেছে, তা যাই হোক না কেন, সে বিষয়ে তারা কোনো বিলম্ব ছাড়াই পরিষ্কার করবে।
নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে নির্বাচনী প্রচারাভিযান গভীরভাবে ভাগ হয়ে গেছে। মি. ট্রাম্পের চেয়ে মিসেস ক্লিনটন এগিয়ে রয়েছেন। সুতরাং এই যে বির্তক হলো, তা হিলারি-ট্রাম্প শিবিরের দূরত্ব ঘোচাতে তেমন কোনো ভূমিকা রাখবে বলে মনে হয় না। কিন্তু ডেমোক্র্যাটরা এই কারণে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন যে, সিনেটের আসন পুনঃদখলের বিষয়ে তাদের সামনে যে বিরাট সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল, তা কিছুটা সংকুচিত হয়ে পড়তে পারে।
এদিকে মি. কমি চিঠি প্রকাশ হওয়ার পর পরই মি. ট্রাম্পকে উৎফুল্লচিত্তে আইওয়ার একটি সমাবেশে হাজির হতে দেখা যায়। এবং সেখানে তিনি মিসেস ক্লিটনের ই-মেইল প্রকাশের বিষয়কে ‘ওয়াটার গেট থেকে বৃহত্তম রাজনৈতিক কেলেঙ্কারি” হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি উল্লেখ করেন , ‘এই সময়ে এফবিআই অবশ্যই এই ঘটনা পুনরায় সামনে আনতো না, যদি না সেখানে সব থেকে কুখ্যাত ফৌজদারি অপরাধ সংঘটনের আলামত না থাকতো।’
বৃটেনের দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট সৌজন্যে
M | T | W | T | F | S | S |
---|---|---|---|---|---|---|
1 | ||||||
2 | 3 | 4 | 5 | 6 | 7 | 8 |
9 | 10 | 11 | 12 | 13 | 14 | 15 |
16 | 17 | 18 | 19 | 20 | 21 | 22 |
23 | 24 | 25 | 26 | 27 | 28 | 29 |
30 | 31 |