এখন থেকে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পাবে চীনা অর্থায়নে বাস্তবায়িতব্য সব প্রকল্পের কাজ । সীমিত দরপত্রের (এলটিএম) মাধ্যমে চীনা ঠিকাদার নির্বাচিত হবে। এ বিষয়ে এরই মধ্যে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। আগামী বুধবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে চীনের অর্থায়নকৃত প্রকল্পের কাজ চীনা ঠিকাদারকে দেয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে। মন্ত্রিসভা কমিটিতে পাঠানো সারসংক্ষেপে গত ১০ই আগস্ট নেয়া এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত সংশোধন করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সুপারিশকৃত সিদ্ধান্তে ইআরডি বলেছে, ‘চীনা অর্থায়নে বাস্তবায়িতব্য সব প্রকল্পের ক্ষেত্রে সীমিত দরপত্রের মাধ্যমে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্বাচিত হবে। তবে উভয় রাষ্ট্রের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট যেমন অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা বা অন্যান্য বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে সীমিত পর্যায়ে প্রয়োজনে ভিন্নরূপ সিদ্ধান্ত নেয়ার বিষয়টি ব্যতিক্রম হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে’। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে এমন সুপারিশ সিদ্ধান্ত আকারে জারি হলে তা চীন সরকারের পক্ষেই যাবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ১২ই আগস্ট অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে নেয়া সিদ্ধান্তে বলা হয়, ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০ এর আওতায় এবং পিপিপি মডেলে নেয়া প্রস্তাবের মতো বিশেষ ক্ষেত্র ছাড়া সাধারণভাবে আনসলিসিটেড প্রস্তাব পরিহার করা সমীচীন মর্মে সর্বসম্মতিক্রমে সুপারিশ করা হলো’। মন্ত্রিসভা কমিটিতে এমন সিদ্ধান্তের কারণে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে কেনাকাটার ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দেয়। এজন্য গত ১০ই আগস্ট মন্ত্রিসভা কমিটি সিদ্ধান্তটি সংশোধন করে নতুন সিদ্ধান্ত নেয়। উচ্চপর্যায়ের এ সভায় নেয়া সিদ্ধান্তে বলা হয়, ‘সরকারের বিশেষ অগ্রাধিকার প্রকল্পের ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা হিসেবে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্বাচনের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি কর্তৃক আগেই অনুমোদন নেবে। এছাড়া প্রকল্প প্রস্তাবটি অর্থায়নের প্রক্রিয়া করার জন্য ইআরডিতে পাঠাবে। সীমিত দরপত্রের প্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতি চূড়ান্ত হওয়ার পর এ ব্যবস্থা রহিত হতে পারে’। এতে বলা হয়, ‘অন্যান্য সব প্রকল্পের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ২০১৫ সালের ১২ই আগস্টের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সীমিত দরপত্রের মাধ্যমে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্বাচিত হবে’। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, মন্ত্রিসভা কমিটির সিদ্ধান্তগুলো জানার পর গত ৪ঠা অক্টোবর চীনা দূতাবাস ইআরডি সচিবকে একটি চিঠি দেয়। তাদের চিঠি পাওয়ার পরই সরকারি প্রকল্পে চীনা টাকায় চীনা ঠিকাদার নিয়োগের বিষয়ে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেয় ইআরডি। চীনা দূতাবাসের চিঠিতে বলা হয়েছে, জি টু জি ভিত্তিতে চীনা অর্থায়নে বাস্তবায়িতব্য প্রকল্পের ক্ষেত্রে নেগোসিয়েটেড টেন্ডারিং (সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি) বা লিমিটেড টেন্ডারিং (সীমিত দরপত্র)-এর বিষয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ আইন ও বিধি অনুযায়ী নেয়া সিদ্ধান্তকে আমরা সম্মান জানাই। যদি সীমিত দরপত্রের মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়িত হয় সেক্ষেত্রে ডিপ্লোমেটিক চ্যানেলের মাধ্যমে তা অবহিত করতে হবে। চীনা পক্ষ বাংলাদেশের কাছে চীনা কোম্পানির একটি শর্ট লিস্ট (সংক্ষিপ্ত তালিকা) সুপারিশ করবে। তারপর প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশের আইন ও বিধি অনুযায়ী ওই শর্ট লিস্টেড কোম্পানির মধ্যে সীমিত দরপত্র আহ্বান করবে। যদি নেগোসিয়েটেড টেন্ডারিং হয়, সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ পক্ষ এ বিষয়ে চীনা এক্সিম ব্যাংকের চাহিদা অনুযায়ী অথোরেটিভ ডকুমেন্টস দাখিল করবে। ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, চীনা দূতাবাসের চিঠি পাওয়ার পর অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে নেয়া সিদ্ধান্ত সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে সরকার। বিষয়টি তারা উচ্চপর্যায়ে আলোচনা করে। এরপর গত ২২শে অক্টোবর অর্থমন্ত্রীর কাছে সার সংক্ষেপ আকারে একটি ফাইল পাঠায় ইআরডি। ওই সার সংক্ষেপে বলা হয়, অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির গত ১০ই আগস্টের সিদ্ধান্তের বিষয়ে প্রয়োজনীয় সংশোধন করে এ বিষয়ে একই কমিটির সভায় আলোচনা/ সিদ্ধান্তের জন্য একটি খসড়া সার সংক্ষেপ প্রস্তুত করা হয়েছে। খসড়া সার সংক্ষেপটি অনুমোদিত হলে তা অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় উপস্থাপন করা যায়। এরই মধ্যে অর্থমন্ত্রী ওই সার সংক্ষেপে অনুমোদন দিয়েছেন। মন্ত্রিসভা কমিটিতে পাঠানো সার সংক্ষেপে বলা হয়েছে, চীনা দূতাবাসের পত্রের মর্মানুযায়ী চীনের অর্থায়নে প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্বাচনে তারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ আইন ও বিধি অনুযায়ী নেয়া সরকারি সিদ্ধান্তকে সম্মান করে। তাই বাংলাদেশ সরকারের নেয়া যে কোনো সিদ্ধান্ত (সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি বা সীমিত দরপত্র) গ্রহণে তারা আগ্রহী। বাংলাদেশের সীমিত দরপত্রের প্রক্রিয়াকরণের পদ্ধতির প্রস্তাবনা তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য। তাই স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও ভ্যালু ফর মানি নিশ্চিত করতে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির গত ১০ই আগস্টের নেয়া সিদ্ধান্তের অনুচ্ছেদ ‘ক’ বাতিল করে সব প্রকল্পের ক্ষেত্রে সীমিত দরপত্রের মাধ্যমে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্বাচনের বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে। এভাবেই প্রস্তাবটি অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে উঠতে যাচ্ছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের পরই চীনা টাকায় চীনা ঠিকাদার নিয়োগের বিষয়টি ফয়সালা হবে।
M | T | W | T | F | S | S |
---|---|---|---|---|---|---|
1 | 2 | 3 | 4 | 5 | ||
6 | 7 | 8 | 9 | 10 | 11 | 12 |
13 | 14 | 15 | 16 | 17 | 18 | 19 |
20 | 21 | 22 | 23 | 24 | 25 | 26 |
27 | 28 | 29 | 30 | 31 |