এক স্কুলছাত্রী গত মাসে ধর্ষণের শিকার হয় রংপুরের মিঠাপুকুরে । এ ঘটনার বিচার চাইতে গিয়ে উল্টো হামলার শিকার ওই ছাত্রী ও তার পরিবার। এমনকি তাকে ‘নষ্টা মেয়ের’ অপবাদ দিয়ে স্কুল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল। আর এ ঘটনায় মামলা হলেও প্রধান আসামি ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এখনও গ্রেফতার হয়নি। প্রকাশ্যেই ঘুরে বেড়াচ্ছে আসামিরা। হুমকি দিচ্ছে ওই স্কুলছাত্রীর পরিবারকে। তবে ‘ধর্ষক’ রাশেদুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সে ইউপি চেয়ারম্যান সাহেব আলীর ভাতিজা ।
ঘটনাটি রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার বড়বালা ইউনিয়নের তরফ বাহাদি গ্রামের। ভুক্তভোগী ছাত্রীর বাড়ি একই ইউনিয়নের পশ্চিম বড়বালা গ্রামে। সে স্থানীয় শহীদ জিয়াউর রহমান বালিকা বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী। স্কুলে যাওয়া-আসার পথে ছড়ান বাজারে অবস্থিত স্টুডিওর মালিক রাশেদুল ইসলাম তাকে প্রায়ই উত্ত্যক্ত করত। গত ১ সেটেম্বর স্কুল থেকে ফেরার পথে রাশেদুল তাকে জোর করে স্টুডিওর ভেতরে নিয়ে ধর্ষণ করে।
ওই ছাত্রী বাড়িতে ফিরে এসে ঘটনা জানানোর পর অভিভাবকরা রাশেদুলের বাড়িতে গিয়ে বিচার চান। এর পরিপ্রেক্ষিতে রাশেদুলের বাবা শাহাদুর রহমান দুলাল ও চাচা স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সাহেব আলী সরকারসহ অন্যরা ধর্ষিতা স্কুলছাত্রী ও তার স্বজনদের ওপর হামলা চালায়। এতে গুরুতর আহত অবস্থায় ওই ছাত্রীকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এ ঘটনায় ওই ছাত্রীর মা ইউপি চেয়ারম্যান সাহেব আলী সরকারসহ পাঁচজনকে আসামি করে মিঠাপুকুর থানায় মামলা করেন।
মামলা দায়েরের পর পুলিশ আন্দোলনের মুখে রাশেদুলকে গ্রেফতার করে। কিন্তু ইউপি চেয়ারম্যান সাহেব আলী সরকারসহ অন্য আসামিরা এখনও গ্রেফতার হয়নি। তারা প্রকাশ্যেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। চেষ্টা করছে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার।
এদিকে সাতদিন পর হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরে ওই ছাত্রী। কয়েকদিন পর সে স্কুলে যায়। কিন্তু প্রধান শিক্ষক তাকে স্কুলে যেতে নিষেধ করেন। এরপরও বেশ কয়েকদিন স্কুলে গেলেও তাকে ক্লাস করতে দেওয়া হয়নি। গত শনিবার সে আবারও স্কুলে গেলে প্রধান শিক্ষক আনিসুর রহমান তার হাতে টিসি (ট্রান্সফার সার্টিফিকেট) ধরিয়ে দেন। এ ঘটনা জানাজানি হলে স্থানীয়ভাবে তোলপাড় শুরু হয়। গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলে মঙ্গলবার মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মামুনুর রশীদ, এসি ল্যান্ড মাসুমা আরেফিন ও ওসি হুমায়ুন কবীর ওই স্কুলে যান। তারা প্রধান শিক্ষকের কাছে জানতে চান, কেন স্কুলছাত্রীকে টিসি দেওয়া হলো। প্রধান শিক্ষক আনিসুর রহমান ও স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি লুৎফর রহমান কোনও যুক্তি দেখাতে পারেননি। ফলে ওই ছাত্রীকে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ দিতে স্কুল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে প্রধান শিক্ষক নিজে গিয়ে ওই ছাত্রীকে স্কুলে নিয়ে আসেন।
অন্যদিকে মামলার প্রধান আসামি ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সাহেব আলীসহ বাকি চার আসামি এখনও গ্রেফতার হয়নি। ছাত্রীর মা আফরোজা বেগম শুক্রবার (২৮ অক্টোবর) অভিযোগ করেন, আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তিনি আসামিদের দ্রুত বিচার দাবি করেছেন।
মিঠাপুকুর থানার ওসি হুমায়ুন কবীর জানান,‘রাশেদুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মামমুনুর রশীদ জানান, ‘স্কুল কর্তৃপক্ষ বেআইনিভাবে ওই ছাত্রীকে টিসি দিয়েছিল। এ ব্যাপারে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’ মামলার অন্য আসামিদের গ্রেফতার করতে পুলিশকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।