যদি রাজনীতি করতে চাও পেশা হিসেবে ওকালতি হওয়াটাই উত্তম রাজনীতির প্রতি আমার ঝোঁক দেখে বাবা সব সময় বলতেন। ফলে নৃবিজ্ঞানে স্নাতক করেও শেষ পর্যন্ত তার আগ্রহে আমি ব্যারিস্টার হতে এ বিষয়ে লেখাপড়া করি। যদিও এ পেশার প্রতি আমার খুব বেশি আগ্রহ ছিল না। কারণ ব্যারিস্টার শব্দটি নিছকই ঔপনিবেশিক চিন্তাাপ্রসূত। যদিও এ শব্দের সঙ্গে আলাদা দাম ও দাপট রয়েছে।
কথাগুলো বলেছেন চট্টগ্রামের অবিসংবাদিত নেতা, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হাসিনা মহিউদ্দিনের জৈষ্ঠ্য পূত্র মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।
একইভাবে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি দস্তগীর চৌধুরীর ছেলে ব্যারিস্টার ফয়সাল দস্তগীর শুনিয়েছেন তাঁর ব্যারিস্টার হয়ে ওঠার কথা। তিনি জানিয়েছেন, ছোটবেলা থেকেই মা-বাবা চাইতেন, আমি যেন বড় হয়ে ব্যারিস্টার হই। তাই যখন বার-এট-ল পাস করি মা-বাবার সে কী আনন্দ! আজ বাবা নেই। ব্যারিস্টার হওয়ার পরপরই মারা গেছেন তিনি। তার অনুপস্থিতি আমাকে কষ্ট দেয়। তবে এ ভেবেও আনন্দ পাই যে, আমি তার স্বপ্ন সার্থক করতে পেরেছি।’
শুধু মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ও ফয়সাল দস্তগীরই নন, ব্যারিস্টার হয়ে আইন পেশাকে বেছে নিয়েছেন চট্টগ্রামের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অনেক সিনিয়র নেতার ছেলেই।
এ তালিকায় রয়েছেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিনের ছেলে মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন ও বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি ও সাবেক রাষ্ট্রদূত গোলাম আকবর খন্দকারের ছেলে তারেক আকবর খোন্দকারও। বাবার পথ ধরে এসব ব্যারিস্টার ছেলেরা ধীরে ধীরে জড়িত হচ্ছেন রাজনীতিতেও।
সম্প্রতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে মুহিবুল হাসান চৌধুরী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক পদে আসীন হওয়ার বিষয়টি- ‘টক অব দ্য টাউনে’ পরিণত হয়। এই সূত্র ধরে চট্টগ্রামের রাজনৈতিক অঙ্গন ও সচেতন মহলের মাঝে রাজনীতিকদের ছেলেদের নিয়ে চলছে নানা আলোচনা।
জানতে চাইলে ব্যারিস্টার ফয়সাল দস্তগীর জানান, বার-এট-ল পাস করার পর এখন তিনি র্প্যাকটিস করছেন হাইকোর্টে, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের সঙ্গে। সিজিএস থেকে ‘ও’ লেভেল পাস করার পর যুক্তরাজ্যের চ্যাল্টেনহেম কলেজ থেকে ‘এ’ লেভেল পাস করেন তিনি। এরপর যুক্তরাজ্যের মিডলসেকস ইউনিভার্সিটি থেকে এলএলবি (অনার্স) পাস করেন তিনি। নর্থ আম্ব্রেয়া বিশ্বদ্যিালয় থেকে মাস্টার্স ও বার-এট-ল একসঙ্গে করেন তিনি। ২০০৭ সালে বার-এট-ল পাস করার পর ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে র্প্যাকটিস করছেন ফয়সাল দস্তগীর। এখন বাবার পথ ধরে চট্টগ্রামে বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছেন তিনি।
আরেক রাজনীতিবিদ মীর নাছিরের ছেলে ব্যারিস্টার মীর হেলাল উদ্দিন। ২০০৪ সালে বার-এট-ল পাস করেন দি অনারেবল সোসাইটি অব লিংকনস ইন থেকে। এর আগে তিনি ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের অধীনে ‘ও’ লেভেল এবং ‘এ’ লেভেল শেষ করে যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব উলভারহ্যাপ্টন থেকে এলএলবি (অনার্স) এবং এরপর লন্ডনের ইউনিভার্সিট অব ল’ অব ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস থেকে বার ভোকেশনাল কোর্স স¤পন্ন করেন তিনি।
এরপর সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহাবুবউদ্দিন আহমদের জুনিয়র হিসেবে উচ্চ আদালতে র্প্যাকটিস শুরু করেন। বর্তমানে তিনি তার মা-বাবার ‘দ্য লইয়ার্স কাউন্সিল’ পরিচালনা করছেন। সা¤প্রতিক সময়ে আইন পেশার পাশাপাশি বিএনপির বিভিন্ন কর্মকান্ডেও তাকে দেখা যাচ্ছে।
ব্যারিস্টার মীর হেলাল উদ্দিন বলেন, বাবার হাত ধরে বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছি।
মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে ব্যারিস্টার মুহিবুল হাসান চৌধুরী চট্টগ্রামের সানসাইন গ্রামার স্কুল থেকে ‘ও’ এবং লন্ডনের ডেভিড গেইম কলেজ থেকে ‘এ’ লেভেল পাস করেন। এরপর ২০০৬ সালে লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্স অ্যান্ড পলিটিক্যাল সায়েন্স থেকে নৃবিজ্ঞান ও আইন শাস্ত্রে বিএ (অনার্স) করেন। ২০০৭ সালে লন্ডনের কলেজ অব ল’ থেকে পোস্ট র্গ্যাজুয়েট ডিপেল্গামা-বার ভোকেশনাল কোর্স শেষে ২০০৮ সালে লিংকনস থেকে বার-এট-ল পাস করেন এবং ২০১০ সালে বার কাউন্সিলের সদস্য হন তিনি।
বর্তমানে বিজয় টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন মুহিবুল হাসান। ব্যারিস্টার হওয়ার প্রেরণা সম্পর্কে জানতে চাইলে মুহিবুল হাসান চৌধুরীর এক কথায় উত্তর দেন, ‘আমার বাবা মহিউদ্দিন চৌধুরী।
‘ছাত্র জীবনে প্রখর মেধাবী ছিলেন বিএনপি নেতা গোলাম আকবর খোন্দকারের ছেলে তারেক আকবর খোন্দকার। বাবার আগ্রহে বার-এট-ল পাস করে তিনিও এখন ব্যারিস্টার। ২০১২ সালে লন্ডন কলেজ অব ল’ থেকে বার-এট-ল পাস করেন তিনি। এর আগে ২০১১ সালে লন্ডনের কুইন মেরি ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার্স ইন ল’ (করপোরেট অ্যান্ড কমার্শিয়াল) এবং ২০১০ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি (অনার্স) করেন তিনি। ২০০৭ সালে ঢাকা স্কলাস্টিকা ও ব্রিটিশ স্কুল অব মাসকটে লেখাপড়া করে ‘এ’ লেভেল এবং ২০০৫ সালে লিটল জুয়েলস স্কুল থেকে ‘ও’ লেভেল পাস করেন তারেক আকবর। ‘কনস্টিটিউশন অব বাংলাদেশ’ বিষয়ে পিএইচডি করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান তিনি।
তারেক লেখাপড়া শেষ করে দেশের যুব সমাজের উন্নয়নে কাজ করছেন। ‘ইয়ুথ ভয়েস অব বাংলাদেশ’ নামে একটি সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান তিনি। ব্যারিস্টারি ছাড়াও চট্টগ্রামের বিএনপি নেতাদের অনেকের ছেলে ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত। এর মধ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এম মোরশেদ খানের ছেলে ফয়সাল মোরশেদ একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। দেশ-বিদেশে বিশাল ব্যবসা রয়েছে তার। চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর ছেলে ইসরাফিল খসরুও ব্যবসায়ী। পারিবারিক ব্যবসায় সঙ্গে জড়িত তিনি।