পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর নিয়ে আলোচনায় দিল্লি যাচ্ছেন । নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে সচিব দিল্লি যাচ্ছেন বলে সেগুনবাগিচার একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র মানবজমিনকে নিশ্চিত করেছে। সূত্র মতে, সচিব দিল্লিতে ভারতের বিদেশ সচিব এস জয়শঙ্করের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক ছাড়াও দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজসহ মোদি প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলবেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে আগামী ৩ ও ৪ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের একটি প্রস্তাবনা রয়েছে। সেই প্রস্তাবনা ধরেই সফরটি সফল করতে ঢাকা-দিল্লি বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। গতকাল এ নিয়ে পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। সেগুনবাগিচায় সচিবের দপ্তরে অনুষ্ঠিত বৈঠকের প্রথম পর্বে অন্য কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিক আলোচনা হলেও পরে সচিব ও ভারতীয় দূত কিছুক্ষণ একান্তে কথা বলেন। বৈঠকে উপস্থিত এক কর্মকর্তা বিকালে মানবজমিনকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সফরের এজেন্ডা, সফরকালে সই হতে পরে এমন চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক এবং অন্যান্য প্রস্তুতি নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। সচিবের দিল্লি যাওয়ার বিষয়টিও সেই আলোচনায় স্থান পেয়েছে। তবে সরকার প্রধানের সফরের অনেক কিছু এখনও চূড়ান্ত হয়নি দাবি করে ওই কর্মকর্তা বলেন, সফরের আলোচনা কেবল শুরু হয়েছে। পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে হাইকমিশনারের এমন বৈঠক আরো হবে জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, শীর্ষ পর্যায়ের যে কোনো সফর অত্যন্ত তাপৎপর্যপূর্ণ। সেখানে সরকার প্রধানের আসন্ন সফরটি হবে সম্পূর্ণ দ্বিপক্ষীয় সফর। সে হিসাবে সফরের প্রত্যাশাও অনেক। প্রধানমন্ত্রীর সফরে তিস্তা চুক্তির বিষয়ে কোনো ‘অগ্রগতি’ হবে কি-না? সচিব ও হাইকমিশনার মধ্যকার বৈঠকে এ নিয়ে কোনো কথা হয়েছে কি-না? এমন একাধিক প্রশ্নে সেগুনবাগিচার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা পুরোপুরি নীরবতা পালন করছেন। তিস্তা চুক্তি প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন দিল্লি সফরের শর্ত নয় মর্মে আগেই খবর বেরিয়েছে। তবে এটি যে বাংলাদেশের আকাক্সক্ষা, তা দিল্লিও জানে মন্তব্য করে এক কর্মকর্তা বলেন দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কি হয়! ২০১৫ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকায় দ্বিপক্ষীয় সফরের ফিরতি সফর হিসাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নয়াদিল্লি সফরের দিনক্ষণ নিয়ে অনেক দিন ধরে আলাপ-আলোচনা চলছে জানিয়ে সরকারের দায়িত্বশীল দুজন কর্মকর্তা মানবজমিনের সঙ্গে আলাপে বলেন, নভেম্বরেও সফরে আয়োজনের আলোচনা ছিল। কিন্তু সেটি হচ্ছে না। নতুন একটি প্রস্তাবনা নিয়ে দুই দেশ কাজ করছে। সেই প্রস্তাবনা অনুয়ায়ী ৩-৪ ডিসেম্বর দু’দিনের সফরটি আয়োজনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আসন্ন সফরের আলোচ্য সূচি চূড়ান্ত করতে ঢাকা ও নয়াদিল্লির বিভিন্ন পর্যায়ের সফর বিনিময় হবে। পররাষ্ট্র সচিবের দিল্লি সফরের পর ভারতের দায়িত্বশীল কোনো প্রতিনিধিও ঢাকা সফর করতে পারেন। গত ১৬ই অক্টোবর ভারতের পর্যটন নগরী গোয়ায় দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সর্বশেষ সাক্ষাৎ ও আনুষ্ঠানিক বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি নিয়ে তাদের মধ্যে কথা হয়। তবে এ নিয়ে চূড়ান্ত চুক্তিতে উপনীত হওয়ার বিষয়ে ‘সুনির্দিষ্ট অগ্রগতি’র কোনো খবর পাওয়া যায়নি। বৈঠক শেষে পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক গণমাধ্যমকে ব্রিফ করেন। তিস্তা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীদ্বয়ের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে স্বীকার করলেও তিনি বিস্তারিত বলেননি। এ নিয়ে ‘বাংলাদেশ আশাবাদী’ বলে মন্তব্য করেন পররাষ্ট্র সচিব। গোয়ার বৈঠক সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন গণমাধ্যম অবশ্য জানিয়েছে, তিস্তায় জল গড়ানোর বিষয়টি শেখ হাসিনাকে জানালেও আনুষ্ঠানিক চুক্তি কবে হবে সে বিষয়ে মোদির তরফে স্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি। গণমাধ্যমগুলো এ-ও বলছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন দিল্লি সফর ঘনিষ্ঠ দুই প্রতিবেশীর বিদ্যমান সম্পর্কের নিরিখেই বিবেচিত হবে এবং সেই সফরের মধ্য দিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ঐতিহাসিক ঢাকা সফরে সম্পাদিত চুক্তি, সমঝোতা ও যৌথ ইশতেহার বাস্তবায়ন জোরদার করার পথে এগিয়ে যাবেন দুই দেশের শীর্ষ নেতৃত্ব। উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন সফরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নিহত ভারতীয় সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যদের প্রতি সম্মাননা জানানো হবে। দিল্লিতেই একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শহীদ যুদ্ধবন্ধুদের পরিবারের সদস্যদের হাতে সেই সম্মাননা তুলে দেয়ার আয়োজন চলছে। পররাষ্ট্র সচিব দিল্লি সফরকালে সেই আয়োজনের প্রস্তুতি নিয়ে বাংলাদেশ মিশন এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন বলে জানা গেছে।
M | T | W | T | F | S | S |
---|---|---|---|---|---|---|
1 | 2 | 3 | 4 | 5 | ||
6 | 7 | 8 | 9 | 10 | 11 | 12 |
13 | 14 | 15 | 16 | 17 | 18 | 19 |
20 | 21 | 22 | 23 | 24 | 25 | 26 |
27 | 28 | 29 | 30 | 31 |