কাউন্সিলের দুই দিনের মধ্যে নির্বাহী কমিটির অর্ধেক নেতার নাম ঘোষণা করেছে দলটি।ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের পর নেতাকর্মীদের পাশাপাশি রাজনৈতিক সচেতন মহলের চোখ ছিল কমিটিতে কারা আসছেন সেদিকে।

ওবায়দুল কাদেরকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করার মধ্য দিয়ে ক্ষমতাসীন দলটির নতুন কমিটিতে চমকের সৃষ্টি। ইতিমধ্যে ঘোষিত পদগুলোর বেশ কিছু জায়গায়ও কিছুটা চমক দেখা গেছে। মূলধারার রাজনীতিতে অনেকটা অপরিচিত কয়েকটি মুখ এসেছে কমিটিতে। এর মধ্যে অন্যতম হলেন চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা মহিউদ্দিন চৌধুরীর বড় ছেলে ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তাকে কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছে।

এখন পর‌্যন্ত ঘোষিত সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যদের মধ্যে বেশ কিছু পদে তরুণ ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা জায়গা পেয়েছেন। তবে মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে চট্টগ্রামের ছাত্রলীগ বা আওয়ামী লীগের বড় কোনো পদে ছিলেন না। এমন অবস্থা থেকে আওয়ামী লীগের মতো দলে সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ পাওয়াকে চমক হিসেবে দেখছেন চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও নগর মহিলা লীগের সভানেত্রী হাসিনা মহিউদ্দিনের বড় ছেলে মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। ছাত্রলীগ, যুবলীগের পর এখন তিনি মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যকরী পরিষদের সদস্য। আর ছোট ছেলে সালেহীন চৌধুরী চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগ নিয়ন্ত্রণ করেন বটে, কিন্তু তার কোনো পদ নেই।

মুহিবুল হাসান চৌধুরীর চট্টগ্রামের রাজনৈতিক মহলের বাইরে খুব বেশি পরিচিতি নেই। বেশির ভাগ সময় ঢাকায় অবস্থান করেন বলে জানা গেছে। এখানে তিনি নিজের আইন পেশায় সময় দেন।

রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য হলেও শুধু রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত থাকেন না মহিবুল। তিনি চট্টগ্রামের সানসাইন গ্রামার স্কুল থেকে ‘ও’ এবং লন্ডনের ডেভিড গেইম কলেজ থেকে ‘এ’ লেভেল পাস করেন। এরপর ২০০৬ সালে লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্স অ্যান্ড পলিটিক্যাল সায়েন্স থেকে নৃবিজ্ঞান ও আইন শাস্ত্রে বিএ (অনার্স) করেন। ২০০৭ সালে লন্ডনের কলেজ অব ল থেকে পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিপ্লোমা-বার ভোকেশনাল কোর্স শেষে ২০০৮ সালে লিংকনস থেকে বার-এট-ল পাস করেন এবং ২০১০ সালে বার কাউন্সিলের সদস্য হন তিনি। বর্তমানে বিজয় টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন মুহিবুল হাসান।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, মহিউদ্দিন চৌধুরী চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগকে আগলে রেখেছেন, এ কথা সত্য। কিন্তু তার বয়স হয়েছে, শারীরিক অবস্থা আগের মতো নেই। কিডনির জটিলতাসহ নানা রোগে আক্রান্ত তিনি। এটা গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ার অন্যতম কারণ। এ কারণে তার ছেলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ পাওয়ায় মহিউদ্দিন চৌধুরীর পরিবারের প্রভাব আরো বেড়ে যাবে বলে মনে করছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা।

মহিবুল হাসান চৌধুরীকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ দলে মেধাবী ও তরুণ প্রজন্মকে মূল্যায়ন করা হয়েছে বলেও মনে করছেন কেউ কেউ।

চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি ইব্রাহীম হোসেন চৌধুরী বাবুল মহিবুল হাসান চৌধুরীকে মহিউদ্দিন চৌধুরীর যোগ্য উত্তরসূরি আখ্যা দিয়ে ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘নতুন কমিটিতে তরুণ প্রজন্ম ও মেধাবীরা মূল্যায়ন হওয়ায় আমরা খুশি। ওনার হাত ধরে চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগ আরো শক্তিশালী ও সমৃদ্ধি অর্জন করবে।’

ইব্রাহীম হোসেন আরো বলেন, ‘কাউন্সিলের প্রথম দিনে চট্টগ্রামের কারো নাম ঘোষণা না হওয়ায় নেতাকর্মীরা হতাশ হয়েছে। কিন্তু আজ সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে মহিবুল হাসানকে মনোনীত করায় সবাই খুশি।’

এদিকে চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের শীর্ষ পদে যারা আছেন, তারা অনেকেই মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী বলে জানা গেছে। তবে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আরেক আওয়ামী লীগ নেতা আ জ ম নাছির মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর তার সঙ্গে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে কিছুটা দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। এ নিয়ে মহিউদ্দিন চৌধুরী কিছুটা চাপেও ছিলেন। এ ছাড়া চট্টগ্রামের আরেক সাংসদ ও মেয়রের ঘনিষ্ঠ এম এ লতিফের সঙ্গে তার বিরোধ চলছে।

কিছুদিন আগে বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃতির অভিযোগ উঠলে সেসময় মহিউদ্দিন ও লতিফের মধ্যে বিরোধ প্রকাশ্যে রূপ নেয়।

এমন অবস্থায় দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ছেলে গুরুত্বপূর্ণ পদে পাওয়ায় চট্টগ্রামের রাজনীতিতে আগের প্রভাব ফিরে পাবেন মহিউদ্দিন চৌধুরী।   গত শনি ও রবিবার আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। ওই দিন দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদের। একই সঙ্গে ওই দিন ঘোষণা হয় দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যদের নাম।

আজ মঙ্গলবার সম্পাদকমণ্ডলীর ২২ জনের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। এবার দলটির কেন্দ্রীয় কমিটি হবে ৮১ সদস্যবিশিষ্ট, যা আগে ছিল ৭৩।

Share Now
January 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031