আগামী ২৮ অক্টোবর সিনিয়র কোনও ক্রিকেটারের কাছ থেকে মহাগুরুত্বপূর্ণ এই ক্যাপটি পাওয়ার অপেক্ষায় তিনি। লাল-সবুজ জার্সির পর মোসাদ্দেকের এখন অপেক্ষা সাদা পোশাকের। কারণ সোমবার ঢাকা টেস্টের দল ঘোষণা করেছে বিসিবি। যেখানে সুযোগ হয়েছে ২০১৪-১৫ মৌসুমে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তিনটি ‘ডাবল’ থাকা মোসোদ্দেকের।
১৩ বছর বয়সে বাবাকে হারানোর পর বাবার স্বপ্নের পেছনে অবিরাম ছুটে চলছেন মোসাদ্দেক। বাবাকে প্রতিনিয়ত অনুভব করেন। তাইতো বাবার স্বপ্নের পেছনে ছুটে চলা। স্বপ্নটা তার আকাশ সমান বড় বলেই থেমে নেই। এগিয়ে যাচ্ছেন আপন শক্তিতে। যেই চলায় তার সবচেয়ে বড় প্রেরণা বাবা-মা। এখন এই দুই চরিত্র একজনকেই ধারণ করতে হচ্ছে। তিনি হচ্ছেন মোসাদ্দেকের মা হোসনেয়ারা বেগম।
আফগানিস্তান সিরিজে সুযোগ দিয়ে মোসাদ্দেক সম্পর্কে প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন বলেছিলেন, ‘কিছু কিছু ক্রিকেটার আছে যাদের মেধা আগে থেকেই খেয়াল করা যায়।’
সত্যিই হীরা চিনতে ভুল হয়নি তাদের। ২১ বছর বয়সেই যেই মোসাদ্দেক ঘরোয়া ক্রিকেটের রেকর্ডবুকে নাম লিখিয়েছেন। তিনিতো হীরাই হবেন।
চলতি বছর জানুয়ারিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি অভিষেকের পর গত ২৮ সেপ্টেম্বর আফগানিস্তানের সঙ্গে ওয়ানডেতেও অভিষেক হয়ে যায় বয়সভিত্তিক ক্রিকেট খেলে আসা এই তরুণের। এখন অপেক্ষা সাদা পোশাকের। ওয়ানডে তার ‘প্রিয়’ ফরম্যাট; তারপর টেস্ট। এখানে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চান মোসাদ্দেক। হতে চান দলের ভরসার প্রতীক।
‘মর্নিং শোজ দ্য ডে’- কথাটি সত্য হলে সৈকতের আগের অর্জনগুলো ভবিষ্যতের জন্যও এক একটি অর্জন! প্রথমবারের মতো টেস্ট স্কোয়াডে সুযোগ পেয়ে বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে কথা বলেন ২১ বছর বয়সী এই অলরাউন্ডার। পাঠকদের জন্য এর চুম্বক অংশ তুলে ধরা হল :-
বাংলা ট্রিবিউন : টেস্ট দলে সুযোগ, খবরটা জানার পর অনুভূতিটা নিশ্চয়ই অসাধারণ ছিল?
মোসাদ্দেক : অসাধারণ অনুভূতি হওয়াটাই স্বাভাবিক। টেস্ট খেলা যে কোনও ক্রিকেটারের কাছে স্বপ্নের মতো। এটা আমার জন্য জীবনের সবচেয়ে বড় ধরনের অনুভূতি। এই অনুভূতি অন্য কোনও সময় আমি পাইনি। যদি খেলতে পারি স্বপ্নের কাছে যাওয়া হবে। তাও আবার ইংল্যান্ডের মতো দলের বিপক্ষে। এর চেয়ে ভালো আর কিছুই হতে পারে না। এই অনুভূতি বলে বোঝানোর মতো নয়।
বাংলা ট্রিবিউন: বাবাকে হারিয়েছেন অনেক বছর, খবর মাত্রই জেনেছেন, ঠিক কেমন অনুভূতি?
মোসাদ্দেক : সবাই জানে আমাকে নিয়ে আমার বাবার অনেক বড় স্বপ্ন ছিল। খুব কষ্ট লাগছে বাবা নেই। বাবা যদি দেখে যেতে পারতেন আমার এই অবস্থা। আমার মনে হয় না উনার চেয়ে বেশি খুশি আর কেউ হতেন। বাবাকে আমি প্রচণ্ড পরিমাণে অনুভব করি। হয়তো বাবার দোয়াতেই এতটুকু পর্যন্ত আসতে পেরেছি।
বাংলা ট্রিবিউন : লংগার ভার্সনে ভালো করার পরও সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে অভিষেক; কিছুটা অবাক হয়েছিলেন কিনা?
মোসাদ্দেক : ক্রিকেটার হিসেবে সব ফরম্যাটেই খেলার মতো যোগ্য হয়ে উঠতে হয়। ক্রিকেটারদের সব ফরম্যাট উপভোগ না করলে ভালো খেলা সম্ভব নয়। আমি যেটা অনুভব করি, আমার সবচয়ে পছন্দের ফরম্যাট হচ্ছে ওয়ানডে। তারপর টেস্ট, এরপর টি-টোয়েন্টি। আমি টেস্ট ক্রিকেটকে মূল্য দিতে চাই। ক্রিকেটের আসল খেলাটাই হচ্ছে এটা। প্রিয় ফরম্যাটে পর এখানেও নিজের সর্বোচ্চটা দেওয়ার চেষ্টা করবো।
বাংলা ট্রিবিউন : ২০১৪-১৫ মৌসুমে তিনটি ডাবল সেঞ্চুরি করে সবাইকে মাতিয়ে দিয়েছিলেন। বড় মঞ্চে কি এখন সুযোগ থাকছে এমন কিছু করার..?
মোসাদ্দেক : হ্যাঁ। এক মৌসুমে আমার তিনটা ডাবল সেঞ্চুরি এসেছিল। ওটা আমার জন্য ভালো অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ব্যাট হাতে নামার সুযোগ পেলে প্রথম শ্রেণির অভিজ্ঞতা আমাকে অনেক সাহায্য করবে। খেলতে পারলে চেষ্টা করবো প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের অভিজ্ঞতাগুলো কাজে লাগাতে। খবরটা জেনে বিষয়গুলো এখন থেকেই মাথার মধ্যে নিয়ে রাখছি।
বাংলা ট্রিবিউন : আন্তর্জাতিক ক্রিকেট বেশ কঠিন, দুই ফরম্যাটের অভিজ্ঞতা নিশ্চয়ই কাজে দেবে?
মোসাদ্দেক : অবশ্যই অনেক কঠিন। তারপরও ঘরোয়া ক্রিকেটের কিছু অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো যায়। আমারতো ওয়ানেড ও টি-টোয়েন্টি খেলার অভিজ্ঞতা আছেই। এছাড়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে আমি যেভাবে পরিকল্পনা ও পরিস্থিতি অনুযায়ী খেলছি, সুযোগ পেলে ওটাই এখানে করে দেখাবো। সব মিলিয়ে আমি বলবো, সুযোগ পেলে আমার আগের অভিজ্ঞতাগুলো কাজে লাগাতে পারবো।
বাংলা ট্রিবিউন: ঘরোয়া ক্রিকেটের কোন বিষয়গুলো আপনার অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করছে?
মোসাদ্দেক : অবশ্যই এক মৌসুমে তিনটি ডাবল সেঞ্চুরি করেছি। ওই সময় অনেকক্ষণ ব্যাটিং করতে হয়েছে। এখান থেকে আমি অনুপ্রেরণা নিচ্ছি।
বাংলা ট্রিবিউন : চট্টগ্রামের উইকেট টার্নিং ছিল, এখানে তেমনটাই হতে পারে। এমন উইকেটে খেলতে আপনি কতটা প্রস্তুত?
মোসাদ্দেক : মিরপুরের কন্ডিশনটা একটু অন্যরকম হবে। সাধারণত মিরপুরের উইকেট স্পোর্টিং হয়ে থাকে। তবে এখনও বলা মুশকিল উইকেট কেমন হবে। শেষ টেস্টটা দেখে আমি যতটুকু বুঝলাম এখানে স্পিন বলের ওপর অনেক বেশি গুরুত্ব দেওয়া লাগবে। বল মাঝে মাঝে উচু কিংবা নিচুও হয়। এর জন্য অবশ্য তৈরি থাকা লাগবে।
বাংলা ট্রিবিউন : ওয়ানডে ফরম্যাটে দারুণ শুরু হয়েছে, এখন টেস্টে নিজেকে কীভাবে প্রমাণ করতে চান?
মোসাদ্দেক : সত্যি কথা বলতে, আমার মধ্যে একসময় কাজ করতো জাতীয় দলে কবে খেলবো, কবে খেলবো-এমন। কিন্তু এখন আমি উপলব্ধি করতে পারি, জাতীয় দলে ঢোকাটা যত কঠিন তার চেয়ে বেশি কঠিন দলে জায়গাটা ধরে রাখা।
বাংলা ট্রিবিউন : সেক্ষেত্রে ভাবনা কী?
মোসাদ্দেক : শুধু টেস্ট ক্যাপটা পেয়ে গেলেই সব অর্জন হয়ে গেল ব্যাপরাটা তেমন না। এখানে টিকে থাকতে হলে পারফরম্যান্স করেই টিকে থাকা লাগবে। আমি কখনোই চাই না, আমি একটা ম্যাচ খেলে বাদ পড়ে যাই। যদিও আমার স্বপ্ন পূরণ হলে সেখানেই আমি থেমে থাকতে চাই না। আমার ক্যারিয়ার অনেক লম্বা হোক-এটাই আমি চাই। এর জন্য আমাকে পারফরম্যান্স করা লাগবে। এখানে আরও অনেক কষ্ট করা লাগবে। সুযোগ পেলে নিজের শতভাগ দেওয়ার চেষ্টা করবো।