বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কাউন্সিল অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া বক্তব্যকে গণতন্ত্রের জন্য বিপজ্জনক বলে মন্তব্য করেছেন । তিনি বলেছেন, কাউন্সিলের শেষ সেশনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী যে কথাগুলো বলেছেন, তা গণতন্ত্রের জন্য বিপজ্জনক কথা। তিনি পরিষ্কার বলেছেন, বিএনপিকে ক্ষমতায় আসতে দেয়া হবে না। এর সঙ্গে তিনি এটাও বলেছেন, আগামীবার আওয়ামী লীগকে অবশ্যই ক্ষমতায় আসতেই হবে যে কোনো মূল্যে। এ কথাগুলো থেকে এটা পরিষ্কার হয়ে গেছে তাদের লক্ষ্য কী এবং তারা কী করতে চান। বিএনপির প্রয়াত ভাইস চেয়ারম্যান আফসার আহমেদ সিদ্দিকীর ১৫তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আফসার আহমেদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন আয়োজিত স্মরণসভায় তিনি এসব কথা বলেন। আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে শেখ হাসিনার আগামী নির্বাচনের জন্য নেতা-কর্মীদের প্রস্তুতি নিতে বলেছেন এমটা উল্লেখ করে মির্জা আলমগীর বলেন, প্রস্তুতির দরকার কি? আপনারা তো গতবার রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে ক্ষমতায় চলে এসেছেন বিনা ভোটে। ভোটের বা দরকার কি? ঘোষণা করে দিলেই হয়, আমরা আবার পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতায় চলে গেলাম। তাহলে তো এ নাটকের প্রয়োজন নেই। বিএনপি মহাসচিব বলেন, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিদেশি মেহমানরা ছিলেন, তাদের সামনে খুব বড় গলায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বক্তৃতায় বলেছেন, তারা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে, তারাই গণতন্ত্রকে বিকশিত করতে চায়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার অনৈতিকভাবে দেশ শাসন করছে। তারা গণতন্ত্রের সব স্তম্ভ ভেঙ্গে দিয়েছে। ভোটের অধিকার, মানুষের কথা বলার, লেখার, সমবেত হওয়ার, প্রতিবাদ করার অধিকার কেড়ে নিয়েছে। এমন একটি সরকার যারা কর্তৃত্বপরায়ণ। প্রতি মুহূর্তে মিথ্যাচার করে জনগণের দৃষ্টি ফেরানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের অপকৌশলের আশ্রয় নেয়। ১৯৭২-১৯৭৫ সালে আওয়ামী লীগের শাসনামলের প্রসঙ্গ টেনে মির্জা আলমগীর বলেন, ওই সময়ে তারা গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে। তাদের দুঃশাসনের কারণে একটা ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ হয়েছে। যা আমরা অনেকেই ভুলে গেছি। আজকে যুগ পাল্টেছে, সময় পাল্টেছে, বিভিন্ন ব্যাখ্যাও পাল্টেছে। এখন গণতন্ত্রের ব্যাখ্যাও পাল্টে গেছে, সেই জায়গায় আসছে উন্নয়ন না গণতন্ত্র। তারা বলছে উন্নয়ন আগে পরে গণতন্ত্র। বিএনপি মহাসচিব বলেন, আরেকটি কথা আসছে- অ্যাফেক্টিভ গভর্নমেন্ট। অর্থাৎ যারা অত্যাচার-নির্যাতন করে, দমননীতি চালিয়ে বিরোধীদলকে নিশ্চুপ করে রাখতে পারে, সেই সরকার হচ্ছে অ্যাফেক্টিভ গভর্নমেন্ট। এই অ্যাফেক্টিভ সরকারের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের রক্ত দিয়ে যুদ্ধ করে যে স্বাধীনতা অর্জনের মূল চেতনা ছিল, সেই চেতনাকে তারা হরণ করে নিয়েছে। এখন স্বপ্ন দেখছে, ৪১ সাল পর্যন্ত তারা ক্ষমতায় থাকবে। মির্জা আলমগীর বলেন, দেশে এমন একজন মানুষ নেই যে, বর্তমান নির্বাচন কমিশন ভালো কাজ করেছে বলবে। প্রত্যেকটা নির্বাচনে তারা শুধু ব্যর্থই হয়নি, তারা সরকারের নীলনকশা বাস্তবায়নে সহযোগিতা করেছে। এদেরতো বিচার হওয়া উচিত। সময় যদি আসে কোনোদিন, জনগণের সরকার যদি কখনও গঠন হয়, এদের অবশ্যই বিচার হবে। তিনি বলেন, আমরা নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশন চাই। অন্যথায় সাজানো নির্বাচন কমিশন জনগণ মেনে নেবে না। মির্জা আলমগীর বলেন, আজকে দুঃসময় চলছে। বাংলাদেশের আইনের শাসন নেই। একে একে মানুষের সকল মৌলিক অধিকার হরণ করা হয়েছে। বর্তমান স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে আমাদের হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। অনেক মানুষ গুম হয়েছে। লাখ লাখ মানুষ মিথ্যা মামলায় কারাগারে এবং পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এরকম একটা পরিবেশে ঐক্যের বিকল্প নেই। এ ঐক্য দলের মধ্যে এবং জাতীয় ঐক্য গঠন করে স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, অতীতে সার্চ কমিটির নামে এমন লোক খুঁঁজে বের করা হয়েছে যাদের সত্যিকারের অর্থে কোনো মেরুদণ্ড নেই। যারা আইনের ভেতর চলতে পারে না। বরং ব্যক্তি বিশেষের ইচ্ছায় কাজ করেছে। আবারো এধরনের ব্যত্যয় ঘটলে তা মেনে নেয়া হবে না। প্রতিবাদ করা হবে। প্রয়াত আফসার আহমেদ সিদ্দিকীর স্ত্রী বিএনপির সহ-সম্পাদক জাহানারা সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, বিএনপির গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক সেলিম ভূঁইয়া, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত ও সহস্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল আলম বাচ্চু বক্তব্য দেন।
M | T | W | T | F | S | S |
---|---|---|---|---|---|---|
1 | ||||||
2 | 3 | 4 | 5 | 6 | 7 | 8 |
9 | 10 | 11 | 12 | 13 | 14 | 15 |
16 | 17 | 18 | 19 | 20 | 21 | 22 |
23 | 24 | 25 | 26 | 27 | 28 | 29 |
30 | 31 |