চট্টগ্রাম সিটি কলেজের একমাত্র ছাত্রীনিবাসটি নিয়ে এর আগে লেখালেখি কম হয়নি। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এখনো মূল সমস্যা পানি। অর্থাৎ মাত্রাতিরিক্ত আয়রন থাকায় এই পানি খাওয়ার উপযোগী নয়। ফলে দীর্ঘ দিন ধরেই ছাত্রীদেরকে পানি বাহির থেকে ক্রয় করে খেতে ও গোসল সারতে হয়।
ছাত্রীদেরকে এ জন্য মাসে বড় একটা অংক নিজের গাটের থেকে খরচ করতে হয়। অনেকের পক্ষে এই ব্যয় মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথা বললেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। অথচ সবুজের মাঝে গড়ে ওঠা আমিনা (রা.) ছাত্রীনিবাসে কোনো কিছ্রুই কমতি নেই। পাখির ডাক ছাত্রীদের ঘুম ভাঙে। থাকার ব্যবস্থা, উন্নত খাবার ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা সবই রয়েছে। পাশেই রয়েছে কলেজের ক্যাম্পাস।
আয়রনমুক্ত পানি পেতে ওয়াসার কাছে ধর্ণা দিলেও তাতে কাজ হয়নি। তাই খাবার পানি কিনে খাওয়ার জন্য প্রতিমাসের হোস্টেল খরচের বাইরে শিক্ষার্থীদের গুণতে হয় বাড়তি টাকা। তবে আগামী কয়েকমাসের মধ্যেই শ্যালো টিউবওয়েল থেকে নতুন পানির লাইন সংযোগ দেয়ার কথা জানালেন কলেজের অধ্যক্ষ। এর পরও ছাত্রীদের সংশয় যেন যাচ্ছে না।
সরজমিন পরিদর্শনে গিয়ে হোস্টেল গেটের সামনেই দেখা গেল পানিবাহী একটি গাড়ি। ছাত্রীদের অর্থে এই পানি কিনে আনা হয়েছে।
ছাত্রীদের কথার সত্যতা মিলল হোস্টেলের পানির কলগুলো দেখে। প্রতিটি কল মোড়ানো রয়েছে কাপড় দিয়ে। যেগুলো গাড় লালচে আকার ধারণ করেছে। শিক্ষার্থীদের ব্যবহার্য বালতি, বোতলগুলোও আয়রনের ফলে লালচে হয়ে আছে।
কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চাইলে বলেন, সুসজ্জিত ভবনের এই হোস্টেলটিতে বর্তমানে ছাত্রী রয়েছে ১১৪ জন। প্রতি কক্ষে চারজন শিক্ষার্থী থাকে। এর মধ্যে মাস্টার্সের ছাত্রী ১২ জন।
আলাপকালে শিক্ষার্থীরা জানান, ২০০ লিটার পানির দাম পড়ে ১০০ টাকা। প্রতি সপ্তাহে একজন শিক্ষার্থীর ১৮ থেকে ২০ লিটার পানি লাগে বলে দাবি একজন শিক্ষার্থীর।
ছাত্রীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সব সুবিধাই এই হোস্টেলে আছে, কিন্তু পানিতে অতিরিক্ত আয়রনের কারণে খাওয়া তো দূরের কথা ব্যবহারও অযোগ্য। তারপরও খাওয়া ছাড়া অন্য কাজে হোস্টেলের পানি ব্যবহার করা হয়।
জেবুন্নেছা নামে স্নাতকের শিক্ষার্থী আলাপকালে বলেন, এখানে থাকতে ভালোই লাগে সমস্যা শুধু পানি। এছাড়া আর কোনো সমস্যা নেই।
কথা হয় হোস্টেলের মেট্রন বেলা দাশের সঙ্গে। হোস্টেলের ছাত্রীদের দেখাশোনার ভার তাঁর ওপর। সবার সঙ্গে কথা বলে বুঝা গেল, বেলা দাশের সঙ্গে ছাত্রীদের টুইনিংটা বেশ। পানিতে আয়রনের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আয়রনের কারণে আমাদের বাইরে থেকেই পানি কিনে খেতে হয়। অতিরিক্ত আয়রনের এই পানি ব্যবহারের অনুপোযোগী। প্রতি মাসে একবার ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করতে হয়। আর এইজন্য প্রতিমাসে এই খাতে ব্যয় করতে হয় এক হাজার ২০০ টাকা। হোস্টেল তহবিল থেকেই এই অর্থ ব্যয় করতে হয়।
তিনি বলেন, পানির এই সমস্যা দীর্ঘদিনের। সমাধানের পথ খুঁজতে সংযোগ করা হয়েছে ওয়াসার লাইন। কিন্তু তারপরও আয়রনমুক্ত পানি যেন অধরা। বিকল্প পথ হিসেবে পানি কিনে খাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। কোনোভাবেই কি এই সমস্যা সমাধানযোগ্য নয়- এমন প্রশ্নের জবাবে কলেজের অধ্যক্ষ ঝর্ণা খানম বলেন, এই সমস্যা দীর্ঘদিনের। শুধু হোস্টেল নয়, পুরো মাদারবাড়িজুড়েই পানিতে আয়রন সমস্যা। ডিপ নলকূপ স্থাপন করা হলেই পানিতে আয়রন আসবে। আমি ছাত্রীদের পানি ফুটিয়ে খাওয়ার কথা বলেছি। তবে পানি ফুটিয়ে খাওয়ার বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করলেন শিক্ষার্থীরা। কারণ হিসাবে গ্যাসের চুলা বড় হওয়ায় পানি ফুটাতেও বড় পাত্রের প্রয়োজন, যা বিপজ্জনক। আর স্টোভের চুলাতে পানি ফুটানো সম্ভব নয়। কারণ এর ফলে তাদের খরচ আরও বেড়ে যাবে।
তবে কলেজ অধ্যক্ষ আশার কথা শুনিয়ে বলেন, আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই কলেজের উন্নয়ন ফান্ডের টাকা দিয়ে পানির নতুন সংযোগ দেওয়ার কাজ শুরু করব।
হোস্টেল থেকে কিছুটা দূরে একটি শ্যালো টিউবওয়েল (যার গভীরতা ডিপ টিউবওয়েল থেকে কম) আছে। সেখান থেকেই নতুন সংযোগ আনব। অনেকেই এখান থেকে পানি সংগ্রহ করছে।- ঢাই