বাংলাদেশও স্পিনের বিষ টের পাচ্ছে । রানের হিসাবেও পেছনে। তারপরও চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষে বলতে হবে বাংলাদেশই এগিয়ে। ইংল্যান্ডের মতো শক্তিশালী টেস্ট দলের বিপক্ষে ১৪ মাস পর খেলতে নেমেও সমান তালে জবাব দিচ্ছে মুশফিক বাহিনী। রকেট সিরিজের প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ২২১। হাতে আছে পাঁচ উইকেট। ইংল্যান্ডের চেয়ে এখনও তারা ৭২ রানে পিছিয়ে। তবে বাংলাদেশের লেজের দিকের যে ব্যাটসম্যানরা নামার অপেক্ষায় তারা যদি নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেন তবে ইংল্যান্ডে টপকে যাওয়াটা অসম্ভব হওয়ার কথা নয়। সাব্বির রহমান আর মেহেদী হাসান মিরাজ তো ব্যাটসম্যান হিসেবে পরীক্ষিতই। তাইজুর ইসলামও ব্যাট চালাতে মন্দ নয়। চার টেস্টে তার রান ১৩৭, সর্বোচ্চ ৩২। আর কামরুল ইসলাম রাব্বির প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে তিনটি ফিফটি রয়েছে। পড়ন্ত বেলায় দিনের খেলা যখন আর মাত্র ওভার তিনেক বাকি তখনই এক নিচু হওয়া বল খেলতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ধরা স্টোকসের হাতে ধরা পড়েন মুশফিক। তা না হলে বাংলাদেশি সমর্থকদের আত্মবিশ্বাসটা আরও বেশি থাকতো। বেশ আস্থার সঙ্গেই খেলছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। কিন্তু কপাল মন্দ অর্ধশতক থেকে দুই রান দূরে থাকতেই ৭৭ বলের ইনিংসে যতি নামে। মাত্র ৬টি চার মারেন তিনি। বাংলাদেশের পাঁচ উইকেট পড়ে যাওয়ায় সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নাইটওয়াচম্যান হিসেবে পাঠানো হয় বোলার শফিউলকে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বরাবরই ভালো খেলা শফিউলের টেস্টে ৫৩ রান করারও নজির আছে। গতকাল তিনি কোনো রান করলেও ৯ বল ঠেকিয়ে ব্যাটসম্যানশিপের স্বাক্ষরও রাখেন। আজ যদি তিনি টিকে যেতে পারেন খানিকটা সময় তবে তা বাংলাদেশের জন্য বাড়তি পাওনা হবে। ক্রিজে অপরপ্রান্তে আছেন আরেক নির্ভরতার প্রতীক সাকিব আল হাসান। ৬০ বল খেলে ৩১ রান করেছেন তিনি, তিন চারে।
তামিম ইকবাল আর মুশফিক ইংলিশ বোলারদের বুঝিয়ে দিয়েছেন তারা এখন আর অবহেলার পাত্র নন। সংযমের সঙ্গে আক্রমণ করার ক্ষমতাও দেখিয়েছেন তারা। আগ্রাসী ব্যাটসম্যান হিসেবে পরিচিত তামিম ইকবাল একেবারে টেস্ট মেজাজের এক ইনিংস উপহার দিয়েছেন। তবে দুর্ভাগ্য শতরান থেকে ২২ রান দূরে থাকতে ১১ বছর পর টেস্ট খেলতে আসা গ্যারেথ ব্যাটির শিকার হন তিনি। ১৭৯ বলে করেন ৭৮ রান আর ৫০ পূর্ণ করতে খেলেন ১২৯ বল। তার সঙ্গে ইনিংসের গোড়াপত্তন করতে এসে অনেক সাবলীল ছিলেন ইমরুল কায়েস। তামিমের চেয়ে দ্রুত রান করছিলেন ইমরুল। কিন্তু মধ্যাহ্ন বিরতির ঠিক আগ মুহূর্তে ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। তবে তা ইংল্যান্ডের মতো বিপর্যয়কর ছিল না। ক্রিস ব্রডের সঙ্গে ইংল্যান্ড বোলিং সূচনা করায় ৩৯ বছর বয়সী স্পিনার গ্যারেথ ব্যাটিকে দিয়ে। ১২ ওভার শেষে লেগ স্পিনার আদিল রশিদের হাতে বল দেন কুক। তার ওভারেও একটি চারসহ ছয় রান আসে। অপর প্রান্তে বল তুলে দেয়া হয় অফ স্পিনার মঈন আলীর হাতে। ঘড়ির কাটা তখন ১২টা ছুঁই ছুঁই। কে জানতো বাংলাদেশেরও ১২টা বাজতে যাচ্ছে। মঈনের দ্বিতীয় বলেই আউট ইমরুল। ফুল লেংথের বল ইমরুল বুঝে শুনে ছেড়েও দিলেন। কিন্তু বল বাঁক খেয়ে আঘাত হানে স্টাম্পে। ২১ রান করে বোল্ড ইমরুল। দলের রান তখন ২৯। ৫০ বল খেলেছিলেন তিনি। তামিম তখন ৩০ বলে ৭। নামলেন মুমিনুল। বাংলাদেশের ভরসার প্রতীক টেস্টে ৫০-এর বেশি গড়। কিন্তু কক্সবাজারের ছেলেটি এবার হতাশ করলেন। মঈনের দুটি বল ঠেকালেও তৃতীয়টি পারলেন না। তার ব্যাট ছুঁয়ে বল চলে গেল স্টোকসের হাতে। মুমিনুলের চার টেস্ট সেঞ্চুরির তিনটিই চট্টগ্রামে। কিন্তু এ মাঠে গত বছর খেলা তার শেষ ইনংসেও তিনি আউট হন ৬ রানে। তার আউটের সঙ্গে সঙ্গেই মধ্যাহ্ন বিরতি। দ্বিতীয় সেশন তামিম আর মাহমুদুল্লাহ বেশ দৃঢ়তার সঙ্গে খেলতে থাকেন। রানের চাকাও ঘুরতে থাকে। স্টোকসের এক ওভারে পরপর দুটি চার মেরে তামিম আগ্রাসনের আভাসও দেন। কিন্তু আবার বিরতির আগে ধাক্কা। আদিল রশিদের বল শরীরের দিকে আসছিল মাহমুদ তা ফেরাতে গিয়ে ধরা পড়েন জো রুটের হাতে। ৫৪ বলে ৩৮ রানের ইনিংসটি প্রশংসারই ছিল। দলের রান তখন ১১৯। তৃতীয় উইকেট জুটির সংগ্রহ ৯০ রান। চা বিরতির পর তামিম-মুশফিক সাবলীল ছিলেন। ১০ ওভারের মধ্যে ৪৪ রানও যোগ করে ফেলেন। কিন্তু ব্যাটির স্মরণীয় শিকার হন তামিম। আর দিন শেষ হওয়ার আগ দিয়ে মুশফিক-সাকিবের ৫৬ রানের জুটি ভাঙেন বেন স্টোকস। দুই দিনে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ১৫ উইকেটের পতন হয় তাতে পেসারদের মধ্যে একমাত্র সফলতা পান স্টোকসই। ইংল্যান্ডের ইনিংসে দুটি ছক্কা থাকলেও বাংলাদেশের ইনিংসে এখনও কেউ উড়িয়ে বল সীমানার বাইরে পাঠাতে পারেননি। ইংল্যান্ডের ২৯৩ রানের জবাবে আগের আট টেস্টে ইংল্যান্ডকে ৩০০ রানের নিচে বেঁধে রাখতে পেরেছিল একবারই। সেটা সেই ২০০৩ সালে ঢাকা টেস্টে। সেবার ইংলিশরা আউট হয় ২৯৫ রানে। ফলে ২৯৩ রানই এখন বাংলাদেশের বিপক্ষে সবচেয়ে কম রানের ইনিংস তাদের। দিনের প্রথম বলেই ইংল্যান্ডের উইকেট তুলে নেন তাইজুল ইসলাম, যিনি আগের দিন সাশ্রয়ী বল করেও ছিলেন উইকেটশূন্য। ২৫৮ রানের মাথায় ওকস আউট হন ৭৮ বলে ৩৬ রান করে। এরপর আদিল রশিদ আর ক্রিস ব্রড সফরকারীদের সংগ্রহটা বাড়িয়ে নেন অনেকটা। তাদের ৩১ রানের জুটি ভাঙেন তাইজুলই। রশিদের ৫৪ বলে করা ২৬ রানের ইনিংস থামান তিনি। ৩৭ বলে ১৩ রান করা ব্রডকে মুশফিকের রেকর্ড গড়া ক্যাচ বানিয়ে নিজের ষষ্ঠ উইকেট নেন অভিষিক্ত মেহেদী হাসান মিরাজ। তিনি ৬ উইকেট নেন ৮০ রানে। সোহাগ গাজীর ৬-৭৪ এরপরে এটিই বাংলাদেশের অভিষিক্ত বোলারের সেরা বোলিং।

Share Now
December 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031