সরকার বঙ্গবন্ধুর খুনি এবিএমএইচ নূর চৌধুরীকে কানাডা থেকে ফেরত আনার বিষয়ে আলোচনার পূর্ণ প্রস্তুতি নিচ্ছে । এজন্য আগামী ২৫ অক্টোবর মঙ্গলবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী কানাডার রাজধানী অটোয়ায় দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্টিফেন ডিওনের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হচ্ছেন। ওই বৈঠকে নূর চৌধুরীকে দেশে ফিরিয়ে আনার উপায় খুঁজে বের করার বিষয়ে আলোচনার কথা রয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘নূর চৌধুরীকে ফেরত আনার বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। এ বিষয়ে আমরা কূটনৈতিক যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি।’
উল্লেখ্য, গত সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কানাডা সফরের সময় দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্র্যুডোর সঙ্গে অটোয়ায় দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে নূর চৌধুরীকে কানাডা থেকে দেশে ফেরত পাঠানোর উপায় খুঁজে বের করার ব্যাপারে দুইপক্ষ একমত হয়। এ জন্য দু’দেশের কর্মকর্তা পর্যায়ে আলোচনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ওই কর্মকর্তা বলেন, দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আসন্ন বৈঠকটি সেই সিদ্ধান্তের ফলে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ বৈঠকে নূর চৌধুরীকে দেশে ফেরত আনার উপায় খুঁজে বের করার বিষয়টি প্রাধান্য পাবে।
নূর চৌধুরীকে ফেরত আনার জন্য বাংলাদেশ কানাডাতে যে আইনজীবী নিয়োগ করেছে তার সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি।
প্রসঙ্গত নূর চৌধুরীকে ফেরত আনার উপায় খুঁজে বের করতে কানাডার সংবিধান বিশেষজ্ঞ আইনি সংস্থা টোরিস এলএলপি’কে নিযুক্ত করেছে বাংলাদেশ সরকার।
তিনি বলেন, কানাডার আইনগত সীমাবদ্ধতার কারণে নূর চৌধুরীকে ফেরত আনার বিষয়টি অত্যন্ত জটিল।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, কানাডার বিদ্যমান আইন অনুযায়ী দেশটিতে আশ্রয় নেওয়া মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কোনও ব্যক্তিকে একসেপশনাল সারকামস্ট্যান্স (বিশেষ পরিস্থিতি) ছাড়া তারা ফেরত পাঠাতে পারে না।
সেপ্টেম্বরে দেশ দুটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের ওই বৈঠকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অন্যতম খুনি নূর চৌধুরীকে বিচারের মুখোমুখি করার স্বার্থে দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য কানাডার প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোকে আনুষ্ঠানিক অনুরোধ করেন শেখ হাসিনা।
এ সময় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার বিষয়ে ট্রুড্যোকে বিস্তারিত জানান তিনি এবং বলেন ওই দিন নূর চৌধুরীই তার ভাই শেখ কামালকে গুলি করে হত্যা করে।
তিনি আরও জানান, নূর চৌধুরী একজন অবসরপ্রাপ্ত সামরিক অফিসার এবং সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সঙ্গে জড়িত ১২ খুনির একজন।
উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধুর খুনী হওয়ার পরেও পরবর্তীকালের সরকারগুলো নূর চৌধুরীকে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করে। বাংলাদেশে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা আসায় সে বছরই কানাডায় বসবাস শুরু করেন তিনি। বর্তমানে কোনও স্ট্যাটাস ছাড়াই সেখানে অবস্থান করছেন তিনি।
২০০৬ সালে কানাডায় নূর চৌধুরীর রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনার আবেদন খারিজ হওয়ার পরে তিনি সেখানকার অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসে একটি আবেদন করেন। যদিও গত ১০ বছরে সেই আবেদনের ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস দেয়নি।