হঠাৎ করে দলটা দেখে যে কেউই চমকে যেতে পারে। সাব্বির রহমান, মেহেদী হাসান, কামরুল ইসলাম ও নুরুল হাসান সোহানের মতো চার তরুণ  আছেন চট্টগ্রাম টেস্টের স্কোয়াডে। যে কারও চমকে ওঠা স্বাভাবিক। তবে এমন দল নির্বাচনে নির্বাচক-কোচ-অধিনায়কের ‘বিশেষ পরিকল্পনা’ আছে, তা নিশ্চিত। মুশফিক সংবাদ সম্মেলনে নিজেই বললেন, ‘দল নিয়ে আমাদের বিশেষ কিছু পরিকল্পনা রয়েছে, যা আপনারা কালকের ম্যাচে দেখতে পাবেন!’ অবশ্য মুশফিক কৌশলগত কারণেই ‘বিশেষ পরিকল্পনা’ সাংবাদিকদের পরিষ্কার করলেন না। হয়তো এই বিশেষ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেই আগের ইতিহাসটা পাল্টে দেবেন মুশফিক বাহিনী। টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের অর্জনটা ঠিক ওয়ানডের মতো উজ্জ্বল নয়। তারপরও গত দুই বছরের সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটের সাফল্যগুলোই আশা দেখাচ্ছে ইংলিশদের বিপক্ষে ২২ গজে লড়াইয়ে।

অনুশীলনে ব্যস্ত টাইগাররাঅনুশীলনে ব্যস্ত টাইগাররাবৃহস্পতিবার জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম ম্যাচটি মাঠে গড়াবে সকাল ১০টায়। ম্যাচটি সরাসরি দেখা যাবে গাজী টেলিভিশন।

ম্যাচ নিয়ে দুই শিবিরেই উত্তেজনা বিরাজ করছে। ওয়ানডে সিরিজে বাংলাদেশ হারানোর পর এখন টেস্ট সিরিজে চোখ ইংলিশদের। সব মিলিয়ে তাই অনুশীলনে বাড়তি সতর্কতা দুই শিবিরেই।

বৃহস্পতিবার মাঠে নামার আগে ইংলিশ শিবিরে সবচেয়ে বেশি আলোচিত শব্দ কন্ডিশন। তার ওপর গত কিছুদিন ধরেই চট্টগ্রামে তাপমাত্রা অন্য সময়ের চেয়ে খানিকটা বেশি। টেস্ট ক্রিকেটে উপমহাদেশের উইকেট বাইরের দলগুলোর জন্য সব সময়ই আলাদা একটি চ্যালেঞ্জ। এখানকার উইকেট আর কন্ডিশন ভিন্ন হওয়ার কারণে বিশ্বের ভয়ঙ্কর সব ব্যাটসম্যানকে দিতে হয় চরম পরীক্ষা। ইংলিশদের এই কন্ডিশন কিছুটা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করলে, তারা মানিয়ে নিতে কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। তবু বাংলাদেশ শিবিরে আশা নিজেদের কন্ডিশনের সুবিধা কাজে লাগিয়ে ইংলিশদের বাগে আনা।

বাংলাদেশের জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে ইংলিশ অধিনায়ক অ্যালিস্টার কুক। কেননা এশিয়ার বাইরের হয়েও তিনি উপমহাদেশের কন্ডিশনে সবচেয়ে সফল ব্যাটসম্যান! পরিসংখ্যান তেমনটাই বলছে। মাত্র দুইজন ব্যাটসম্যান দুই হাজার রান করেছে উপমহাদেশের কন্ডিশনে খেলে। একজন অ্যালিস্টার কুক (২২৫২), অন্যজন জ্যাক ক্যালিস (২০৫৮)। বাংলাদেশের কন্ডিশনে কুক আরও বেশি ভয়ঙ্কর। ২০১০ সালে বাংলাদেশে একমাত্র সফরে তিনি ৩৪২ রান করেছেন দুটি সেঞ্চুরিতে।

তাইতো ইংলিশদের রানের চাকা টেনে ধরতে ইংলিশ এই অধিনায়ককে দ্রুত ফেরাতে হবে স্বাগতিক বোলারদের। মুশফিক অবশ্য কুককে নিয়ে আলাদা পরিকল্পনা করছেন। হয়তো কুক বাংলাদেশের ফাঁদে পা দেবেন। কুকের জন্য হয়তো ভয়ঙ্কর এক টার্নি উইকেট অপেক্ষা করছে চট্টগ্রামের ২২ গজে!

জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম পয়মন্ত ভেন্যু হিসেবে খ্যাত। যদিও টেস্টে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এই ভেন্যুতে টাইগারদের সাফল্য তেমন দেখা যায়নি। তারপরও ক্রিকেটারদের ব্যক্তিগত অনেক সাফল্যগাথা রচনা হয়েছে এই ভেন্যুতেই। পাকিস্তানের বিপক্ষে তামিম-ইমরুলের প্রথম উইকেটে সর্বোচ্চ রানের জুটি এখানেই। এই ভেন্যুতে মুশফিক এক হাজার রানের মাইলফলকের সামনে দাঁড়িয়ে।

এই ভেন্যুতে খেলা সর্বশেষ চারটি ম্যাচের একটিতেও হারেনি বাংলাদেশ। তিনটি ম্যাচ ড্র হলেও জয় পেয়েছে একটিতে। সবমিলিয়ে তাই ইংলিশদের বিপক্ষে ভালো ক্রিকেট খেলার আশা করতেই পারে দর্শকরা।

কিছু পরিসংখ্যান অবশ্য বাংলাদেশকে পেছনে ফেলে দেবে। ইংলিশদের বিপক্ষে এখন পর্যন্ত আটটি টেস্ট খেলা বাংলাদেশ হারের বৃত্ত ভাঙতে পারেনি। তার ওপর গত ১৪ মাসে বাংলাদেশ একটি টেস্টও খেলেনি। ১৪ মাস পর টাইগারদের যেখানে নতুন শুরু, সেখানে গত ১৪ মাসে ১৯টি ম্যাচ খেলেছে ইংল্যান্ড। যার অধিকাংশের ফল নিজেদের পক্ষে এসেছে।

গত দুই-তিন বছরে বদলে যাওয়া বাংলাদেশ বলেই ভক্তরা আশা করতে পারে; ইংলিশদের বিপক্ষে এতদিনের ইতিহাসটা বদলে যাবে। মুশফিক অবশ্য আশাবাদি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ভালো ক্রিকেট খেলার ব্যাপারে। বুধবার সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছে, ‘চ্যালেঞ্জ নেওয়ার জন্য আমাদের সিনিয়র ক্রিকেটাররা প্রস্তুত। জুনিয়র যারা স্কোয়াডে আছে, সুযোগ পেলে তারাও নিজেদের উজাড় করে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। এটার জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো মানসিকভাবে শক্ত থাকা। আমরা অনেক কিছুই চেষ্টা করেছি শেষ ক’দিনের অনুশীলনে। আশা করি, সেটির প্রতিফলন মাঠে দেখতে পাবেন আপনারা।’

মুশফিক ইংলিশ ব্যাটসম্যানদের ফাঁদে ফেলতে চট্টগ্রামে টার্নিং উইকেট চেয়েছেন। সেভাবেই প্রস্তুতি হচ্ছে চট্টগ্রামের উইকেট। বাংলাদেশের পরিকল্পনায় টার্নিং উইকেট বলেই স্কোয়াডে রাখা হয়েছে বেশ কয়েকজন স্পিনার। তাইজুল-সাকিব-শুভাগত ছাড়াও অফ স্পিনার হিসেবে সুযোগ পেয়েছেন মেহেদী হাসান। এছাড়া মাহমুদউল্লাহ-সাব্বির-মুমিনুলও পারেন স্পিনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে। মুশফিক তাইতো আশাবাদী, ‘ফ্ল্যাট উইকেটে ২০ উইকেট নেওয়া অনেক কঠিন। উইকেট থেকে টার্ন পেলে আমাদের দলের বোলারদের সামর্থ রয়েছে ২০ উইকেট নেওয়ার।’

ম্যাচের দিন সকালে উইকেট দেখেই সেরা একাদশ নির্বাচন করা হবে বলে জানিয়েছেন মুশফিক। তবে দলীয় সূত্রে জানা গেছে চার নতুন খেলোয়াড়দের মধ্যে দু’জনের অভিষেক হওয়া এক প্রকার নিশ্চিত। মুশফিক কিপিং করতে পুরো ফিট হওয়ার কারণে নুরুল হাসান সোহানের একাদশে থাকা হচ্ছে না। এছাড়া অভিষেকের অপেক্ষোয় থাকা পেসার কামরুল ইসলাম রাব্বির বদলে মূল একাদশে থাকার সম্ভাবনা আছে শফিউলের।

ব্যাটিংয়ের সঙ্গে বোলিংয়ে বৈচিত্র্য রাখতে মেহেদী হাসানকে মিরাজের পাশাপাশি সাব্বির রহমানের একাদশে থাকার জোর সম্ভাবনা রয়েছে।

এক পেসার খেলালে স্লো মিডিয়াম পেস বোলিং করতে পারা সৌম্যর খানিকটা সুযোগ আছে একাদশে থাকার। সেক্ষেত্রে হয়তো শুভাগত হোমকে বসে থাকতে হবে সাইডবেঞ্চে।

তবে, সবকিছুই নির্ভর করছে সকালে উইকেটে কেমন থাকে তার ওপর। মুশফিক সংবাদ সম্মেলনে এমনটাই জানলেন, ‘স্কোয়াডে পেসার আছে দুজন। আমরা চেষ্টা করব সেরা কম্বিনেশন গড়তে। আবহাওয়ার ব্যাপার আছে। শেষ মুহূর্তে আমরা যদি দেখি আবাহাওয়ার কারণে উইকেট বদলে যেতে পারে, তাহলে ভিন্ন চিন্তা করতে হবে। আমাদের হাতে যথেষ্ট স্পিনারও আছে। আমরা যে পরিকল্পনাটা করেছি, আশা করি আমাদের সেরা কম্বিনেশন দাঁড় করানো সম্ভব হবে।’

Share Now
December 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031