ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ততম এলাকা বিমানবন্দর সড়ক। আর এই সড়কের যানজট নিরসন ও নিরাপদে রাস্তা পারাপারের জন্য কয়েক মাস আগে বিমানবন্দরের সামনের পুরনো ফুটওভার ব্রিজটি ভেঙে নতুন করে চলন্ত সিঁড়ির ওভারব্রিজ নির্মাণ করে । এই ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়েছে মূলত নিরাপদে রাস্তা পারাপারের জন্য। কিন্তু এখানকার রাস্তা পারাপারের দৃশ্য দেখলে মনে হবে অলিম্পিকের মাঠের দৌড় প্রতিযোগিতা হচ্ছে। ব্রিজ থাকা সত্ত্বেও প্রতিদিন লাখো পথচারী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার হচ্ছে। অথচ একটি সড়ক দুর্ঘটনার কারণে পরিবারে নেমে আসতে পারে অন্ধকার। সঙ্গী হতে পারে সারা জীবনের কান্না। সামান্য একটু অসতর্কতার কারণে প্রতিদিন সড়কে ঝড়ছে তাজা প্রাণ! তবুও কারো কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। যেন জীবনের মায়া নেই কারও।
সোমবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিমানবন্দরের চলন্ত সিঁড়ির ওভারব্রিজটি বন্ধ রয়েছে। সেখানে ঝুলছে কর্তৃপক্ষের নির্দেশনার সাইনবোর্ড। তাতে লেখা রয়েছে, ‘সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২.৩০ এবংবিকাল ৩টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য চলন্ত সিঁড়িটি উন্মুক্ত থাকবে। অর্থাৎ দুপুরে আড়াই ঘণ্টা চলন্ত সিঁড়িটি বন্ধ থাকবে। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই নির্দেশনার বাইরেও প্রায় সময় চলন্ত সিঁড়িটি বন্ধ থাকে। ফলে বাধ্য হয়ে অনেকেই ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার করছে। এছাড়া মাঝে-মধ্যে বিকল হয়ে পড়ে বিমানবন্দর ওভারব্রিজের চলন্ত সিঁড়িটি।
বিমানবন্দর ওভারব্রিজের লিফট অপারেটর আশরাফুল ঢাকাটাইমসকে জানান, প্রতিদিন এই ব্রিজ দিয়ে হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করে। দুপুরের সময় মানুষের চাপ কম থাকায় আড়াই ঘণ্টা লিফট বন্ধ রাখা হয়। শুরুতে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত লিফট চলতো কিন্তু মাঝেমাঝে লিফটটি বিকল হয়ে পড়ায় কোম্পানির সিদ্ধান্তে দুপুরে লিফট বন্ধ রাখা হয়। বিমানবন্দর ওভারব্রিজের লিফটি হোরাইজন টেকনো লি. কোম্পানি থেকে কেনা হয়।
প্রতিদিন লাখো মানুষ বিমানবন্দরের এই ওভারব্রিজটি ব্যবহার করে থাকেন। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ব্রিজের দুই পাশে বসে বাজার। নানা পণ্যের পসরার কারণে চলাচলেও ওভারব্রিজে উঠতে-নামতে বাধার সৃষ্টি হয়।
এবিষয়ে একাধিক পথচারীর সঙ্গে কথা হয় ঢাকাটাইমসের এই প্রতিবেদকের। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী রেদোয়ান হোসেন জানান, সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠা-নামা করতে কষ্ট হওয়ায় ফুটওভারব্রিজ ব্যবহার এড়িয়ে চলি। চলন্ত সিঁড়ির ব্যবস্থা করা হলেও সেটি প্রায় সময় অকেজো থাকে। তাছাড়া বিমানবন্দর এলাকার মতো একটি ব্যস্ততম এলাকায় একটি ওভারব্রিজ কোনোভাবেই সুফল বয়ে আনতে পারবে না বলে তিনি জানান।
লেফটেনেন্ট আনোয়ার গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্রী নিরা খান ওভারব্রিজ ব্যবহার না করে ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার হচ্ছিলেন। এসময় ঢাকাটাইমস প্রতিবেদক তাকে ওভারব্রিজ ব্যবহার না করে কেন ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হচ্ছেন এমন প্রশ্ন করলে তিনি জানান, একটিমাত্র ওভারব্রিজ হওয়ায় পথচারীদের অনেক চাপ থাকে। তাছাড়া ফুটওভার ব্রিজের উপরে হিজড়া, ছিনতাইকারী ও ভিক্ষুকসহ হকারদের উৎপাত লেগেই থাকে। ব্রিজের পথ সরু হওয়ায় সেখানে গায়ে গায়ে ধাক্কা লাগে। তাই অধিকাংশ স্কুল-কলেজের মেয়ে এবং নারীরা ব্রিজে উঠতে চায় না। ফলে বাধ্য হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তাপারা পার করতে হচ্ছে তাদের।
বেশ কয়েকজন পথচারী বিমানবন্দর এলাকার যানজট নিরসনে আরেকটি ফুটওভারব্রিজ ও আন্ডারপাস নির্মাণের দাবি জানান।
ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারে সিটি করপোরেশনসহ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকবার সচেতনতামূলক কর্মসূচি নেয়া হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এমনকি আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশ ও সিটি করপোরেশন আর্থিক দণ্ড দিলেও পরিস্থিতি বদলায়নি। কয়েক মাস আগে রাজধানীর কয়েকটি স্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে অবৈধ পথচারীদের জরিমানা করা হয়। এ ব্যাপারে সচেতন করতে নেয়া হয় নানা উদ্যোগ। কিন্তু কোনোটাই সুফল বয়ে আনছে না।
সবশেষ ওভারব্রিজে ওঠার কষ্ট কমাতে বসানো হয়েছে চলন্ত সিঁড়ির ওভারব্রিজ। কিন্তু তাতে সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। অবৈধভাবে রাস্তা পারাপার হতে গিয়ে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। এসব দুর্ঘটনা ও ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে সবাইকে সচেতন হওয়ার কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করেন সংশ্রিষ্টরা।