সিলেটের কলেজ ছাত্রী খাদিজা আক্তার নার্গিসকে হত্যা চেষ্টা মামলার তদন্ত শেষ পর্যায়ে জানিয়ে সহসাই অভিযোগপত্র দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন সিলেট মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার (দক্ষিণ) বাসুদেব বণিক। এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, মামলাটি নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে তাগাদা দেয়া হচ্ছে। তাই তারাও দ্রুত তদন্ত শেষ করতে চান।
গত সপ্তাহে পুলিশ জানিয়েছিল, খাদিজার চিকিৎসা চলছে যেখানে সেই স্কয়ার হাসপাতালের প্রতিবেদন পেলে বা খাদিজার জবানবন্দি পেলে অভিযোগপত্র দেবেন তারা। কিন্তু আজ সোমবার পর্যন্ত স্কয়ার হাসপাতাল থেকে ডাক্তারের প্রতিবেদন এস পৌঁছেনি বলে জানিয়েছেন বাসুদেব বণিক।
বাসুদেব বণিক বলেন, ‘মামলার তদন্তকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। লেখালেখি চলছে, খুব তাড়াতাড়িই দিয়ে দেবো।’
– তাহলে এ সপ্তাহেই দিচ্ছেন?
-‘না, না এ সপ্তাহেই চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দিচ্ছি, এভাবে বলা যাবে না, তবে কাজ চলছে বলতে পারে ‘।
-‘অনেক লেখালেখির ব্যাপার আছে, এই লেখালেখি এখন চলছে। সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকেও মামলাটির তদারকি করা হচ্ছে। তাই আমাদের অবহেলা কারা বা সময় নষ্ট করার কোন সুযোগ নেই’-বলেন বাসুদেব।
এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েই এই মামলাটির তদন্ত করছি। আসামি যেন ফাঁকফোঁকর দিয়ে বেরিয়ে আসতে না পারে এ বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
গত ৩ অক্টোবর বিকেলে সিলেট এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে খাদিজাকে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক বদরুল আলমের কোপানোর ভিডিও প্রকাশ হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। খাদিজা বর্তমানে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
হামলার পরদিন খাদিজার চাচা আব্দুল কুদ্দুছ বাদী হয়ে নগরীর শাহপরান থানায় বদরুলকে আসামি করে মামলা করেন। তাতারতারও পরদিন বদরুল সিলেটের একটি আদালতে এই ঘটনার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেন। বলেন, প্রেমের আহ্বানে সাড়া না দেয়ায় খাদিজাকে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করেন।
তথ্যপ্রমাণ থাকলেও দুই সপ্তাহেও আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়নি পুলিশ। কেন এত দেরি হচ্ছে, জানতে চাইলে শাহপরান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহজালাল মুন্সি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘সবই আমাদের নাগালের মধ্যে, তবে আলামত ছাড়াতো আমরা চার্জশিট দিতে পারি না।’ তিনি বলেন, ‘মামলা তো আদালতে ওঠবে, আসামিপক্ষও লড়বে, তাই প্রমাণ লাগবে। এর জন্যই অপেক্ষা করছি।’
তবে প্রমাণ হাতে থাকার পরও প্রমাণ জোগাড় কথা বলে পুলিশের এই ‘সময়ক্ষেপন’ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন মামলার বাদী ও খাদিজার চাচা আব্দুল কুদ্দুছ। তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এত বড় জঘন্য ঘটনার পর, সব ডকুমেন্ট এবং আসামির দায় স্বীকারের পরও কেন আবার প্রমাণ যোগাড় করতে হবে, তা আমি বুঝতে পারছিনা।এখানে কোন কৌশল আছে কি-না কে জানে।’
‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলার পরও কেন দেরি হচ্ছে?’-প্রশ্ন রাখেন খাদিজার চাচা।
সিলেটের জেলা প্রশাসক জয়নাল আবেদীন জানিয়েছেন, খাদিজাকে হত্যা চেষ্টা মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটি। মামলার অভিযোগপত্র দেওয়ার পর এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মামলা স্থানান্তরের প্রক্রিয়া সম্পর্কে সিলেট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী কিশোর কুমার কর বলেন, অভিযোগপত্র দেয়ার পর মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের প্রস্তাব দিয়ে জেলা প্রশাসক সেটি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন। সেখান থেকে গেজেট প্রকাশের পরই মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে আসবে।’ ঢাকাট