মোট অর্থমূল্য এক হাজার ৩৬০ কোটি মার্কিন ডলার। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এর বাংলাদেশ সফরে দুই দেশের মধ্যে ১৩টি বাণিজ্য চুক্তি হয়েছে,  এর মধ্যে দুটি চুক্তি হয়েছে সরকারি খাতে, বাকিগুলো বেসরকারি পর্যায়ে।

রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশ-চায়না বিজনেস ফোরামে এসব চুক্তি সই হয়। এর আয়োজন করে বাংলাদেশে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন  দ্য ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রি- এফবিসিসিআই এবং চীনের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন চায়না কাউন্সিল ফর দ্য প্রমশন অব ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড- সিসিপিআইটি।

দুই পক্ষের মধ্যে এই চুক্তির বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ। তিনি বলেন, ‘আজ আমাদের জন্য ঐতিহাসিক দিন। এত বিশাল অঙ্কের আর্থিকচুক্তি আমাদের কখনো হয়নি।’

চীনের সঙ্গে এই চুক্তির ফলে বাংলাদেশে ভবিষ্যতে বিদেশি বিনিয়োগ আরও বাড়বে বলেও আশাবাদী এফবিসিসিআই নেতা। এই ব্যবসায়ী বলেন, ‘বিশ্ব অর্থনীতিতে বাংলাদেশ যে তরতর করে এগিয়ে যাচ্ছে এটি তারই প্রমাণ। বাংলাদেশে চীনা ব্যবসায়ীদের ঢল দেখে অন্যান্য দেশের ব্যবসায়ীরাও আমাদের দেশে ছুটে আসবে।’

এফবিসিসিআরই সভাপতি বলেন, ‘অবকাঠামো, জ্বালানি, রেলসহ আরও অনেক খাতে বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে চীন। এই বিশাল বিনিয়োগ আমাদের অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখবে। বাংলাদেশ-চীন-ভারত-মিয়ানমান (বিসিআইএম) ও সিল্ক রুটের আওতায় চীনের ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশের এ সুবিধা গ্রহণ করতে পারেন। বাংলাদেশের উন্নয়ন ও দরিদ্র বিমোচনে ঢাকা-বেইজিংয়ের মধ্যকার এ বাণিজ্য চুক্তিগুলো বিশাল সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। আমার বিশ্বাস, চীনের ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগের উত্তম স্থান হিসেবে বাংলাদেশকেই বেছে নেবেন।’

সিসিপিআইটির পক্ষে বক্তব্য দেন সংগঠনটির ভাইস চেয়ারম্যান চ্যান ঝউ। তিনি বলেন, “বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ-চীন একে অপরের বিশ্বস্ত সঙ্গী। এই পথ অনেকদূর যাবে। আজকের চুক্তি তারই গতি নির্ণয়ক।”

সিসিপিআইটির ভাইস চেয়ারম্যান চ্যান ঝহু বলেছেন, ‘অবকাঠামোগত উন্নয়নে বাংলাদেশ এশিয়া মহাদেশে বিনিয়োগ ব্যাংকের মধ্যেই রয়েছে। আমরা আস্থা নিয়ে এদেশের বিনিয়োগ পার্কে বিনিয়োগ করবো। আমাদেরই এই প্রতিনিধি দলে অনেক উদ্যোক্তা রয়েছেন। যারা এদেশে বিনিয়োগ করতে চান। চামড়া, অবকাঠামো, তৈরি পোশাক, ওষুধ, অটোমোবাইলসহ বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশে বিনিয়োগের কথা চিন্তা করছি আমরা। চীনের অর্থায়নে বাংলাদেশে উৎপাদিত পণ্য চীনে রপ্তানি করে দুদেশের মধ্যে বাণিজ্য বৈষম্য দূর করা সম্ভব।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে সহায়তা করতে চাই। আমাদের দেশের প্রযুক্তি ও দক্ষতা বাংলাদেশের সঙ্গে শেয়ার করতে চাই। এফবিসিসিআই ও সিসিপিআইটি এর মাধ্যমে নতুন প্ল্যাটফর্ম তৈরি হয়েছে। যাতে উভয় দেশের ব্যবসায়ীরা বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ সম্ভাবনা কাজে লাগানো যাবে। এদেশে বিনিয়োগ ও ব্যবসার ভালো পরিবেশ রয়েছে। একারণেই আমরা এদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী। আমাদের প্রেসিডেন্টের এ সফর উভয় দেশের শিল্প ও বাণিজ্য উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখবে।’

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘চীন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তিশালী দেশ। দেশটির প্রেসিডেন্টের সফরের মধ্যদিয়ে দুই দেশের সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। নতুন পথ চলা শুরু হয়েছে। আজকে ১৩.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাণিজ্য চুক্তি নতুন ইতিহাস তৈরি করেছে। এরফলে দুই দেশ ব্যবসায়িক দিক থেকে অনেক লাভবান হবে।’

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়, বাণিজ্য সচিব হেদায়েত উল্লাহ মামুন প্রমুখ।

এ অনুষ্ঠানে দুই দেশের ব্যবসায়ীরা বাণিজ্য ও বিনিয়োগ নিয়ে মত বিনিময় করেছেন। বাংলাদেশে তৈরি পোশাক, ওষুধ, সিরামিক, লেদার খাতে বিনিয়োগের সম্ভাবনার বিষয়টি তুলে ধরেছেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা।

এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মাতলুব আহমাদ, সিসিপিআইটির ভাইস চেয়ারম্যান চ্যান ঝউ, ইনসেপ্টা ফার্মাসিটিক্যালের ম্যানেজিং ডিরেক্টর আবদুল মোকতাদির, অ্যাপিলিয়ন গ্রুপের  রেজাউল কবির বক্তব্য দেন। আর চীনের পক্ষ থেকে চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশনের প্রেসিডেন্ট ওয়াং জু শেং, টিবিয়ান ইলেকট্রিক অ্যাপারেটর কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান ঝাওয়াংশি। চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ৮৬ সদস্যের ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দল রয়েছে।

Share Now
December 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031